সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপে ৩১ জন হতাহত
মাত্র ১৪ মাস আগে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সাড়ে ৭ কোটি মানুষের স্বপ্নের দেশ আশা-আকাক্ষার লালন ভূমি বাংলাদেশ যখন একটি কল্যাণমুখী শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তেই এই নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সার্বিক প্রয়াসকে নস্যাৎ করে দেবার জন্য অতিবিপ্লবী কুচক্রী ও বিদেশি এজেন্টদের দল যেন উঠে পড়ে লেগেছে। তারই আরাে একটি প্রমাণ পাওয়া গেল গত রােববার রাতে সন্দ্বীপে। এদিন এখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনয়নকারী ও দেশের সর্ববৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত এক বিশাল জনসভায় এই কুচক্রীর দল হাতবােমা নিক্ষেপ করে কমপক্ষে ৬ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা ছাড়াও ২৫ জনকে দারুণ ভাবে আহত করেছে। আহতদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা শঙ্কাজনক বলে বাসস ও বিপিআই জানিয়েছে।
সন্দ্বীপের ঘটনা : রােববার রাতে সন্দ্বীপ হতে ১২ মাইল দূরে শিবেরহাটে আওয়ামী লীগের ডাকে জনসভায় গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলে ৬ ব্যক্তি নিহত ও অপর ২৫ ব্যক্তি আহত হয়। রাত প্রায় পৌনে নয় টায় সভা চলাকালীন সময়ে কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আহত ৬ ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে ৭ জনের অবস্থা আশংকাজনক। ৫ জনকে সন্দ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চট্টগ্রামের ডিসি ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক বাসসকে জানিয়েছেন যে, সন্দ্বীপের অবস্থা শান্ত। এ বিষয়ে সন্দ্বীপে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং জোর তদন্ত চলছে। শিবেরহাটের এই জনসভায় চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব এম এ হান্নান ভাষণ দানের কথা ছিল। দুষ্কৃতিকারীদের এ বােমার আঘাতে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র খসরু ও ফিরােজ, ১০ম শ্রেণির ছাত্র হারুন, একটি ৮ বছরে বয়সের শিশু, মফিজুর রহমান, জনৈক ব্যক্তি ও আরাে একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। উল্লেখযােগ্য যে, ‘রক্ষীবাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেবো’ ‘আমরা আওয়ামী লীগের কোন জনসভা হতে দেব না’ বলে যারা সব সময়ই প্রকাশ্যে জনসভা ছাড়াও সর্বত্র নর্তন-কুর্দন করে, যাদের দলীয় গুপ্ত ঘাতকদের গােপন অস্ত্রে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্র লীগের অসংখ্য কর্মী নিহত হয়েছে। যারা নির্বাচনে নিজেদের ভরাডুবির কথা নিশ্চিতভাবে জানতে পেরে এ নির্বাচন বানচাল করার জন্য পূর্বাহ্নে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এক্ষুণে নির্বাচনের আর মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে তাদের এ ভূমিকা নেয়া ছাড়া আর কি উপায় থাকতে পারে। এ জাতীয় পাকিস্তান-চীন-মার্কিন সমর্থনপুষ্ট হঠাৎ গজিয়ে উঠা তথাকথিত রাজনৈতিক দলের ছদ্মাবরণে যে দুষ্কৃতিকারীদল বাংলাদেশের মানুষের শান্তি নষ্ট করেছে এরা কি ভাবছেনা যে, দেশের মানুষ কখনােই এদের এসব কাজ ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখতে পারে না। দেশের মানুষ আজ তাদের বিচার করবে।১০৫
রেফারেন্স: ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ