You dont have javascript enabled! Please enable it!

নীলফামারীতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

আমার স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু একটা জিনিস আজো হয় নাই, সেটা হলাে আমি দেখতে চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি দেখতে চাই আমার বাংলার মানুষ সুখী হােক। আমি দেখতে চাই আমার বাংলার মানুষ কাপড় পাক। আমি দেখতে চাই আমার বাংলার ছেলে শিক্ষা পাক। আমি দেখতে চাই বাংলা থেকে সমস্যা দূর হােক। আমি দেখতে চাই সােনার বাংলা গঠন হােক। ২৫ বছরে না হলেও বাংলার মাটি থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। সােনার মাটি বাংলাদেশে যদি আমি আজ পাম্প দিতে পারতাম। যদি আজ আমি বীজ দিতে পারতাম। যদি আজকে আমি আপনার ফারটিলাইজার সার দিতে পারতাম। যদি আজ আমি বাংলদেশে পােকা মারার ঔষধ দিতে পারতাম আমার বাংলাদেশের জন্য কোন অভাব হতাে না। কিন্তু সব কিছু দুনিয়ার থেকে কিনতে হয়। কারখানা করা হয় নাই। তাই চেষ্টা করছি আমি সার কিনতে পারি কি না। তাই চেষ্টা করছি আমি বীজ আনতে পারি কিনা। যাতে বাংলার মানুষ খাদ্যে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। দুঃখের বিষয় এই বছর না হলেও আমাকে সােয়াশ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দিয়া খাবার কিনতে হয়েছে। কারণ বাংলার মানুষকে আমি না খেয়ে মরতে দিবার পারি না। দুনিয়ার সব কাজ আমার বন্ধ হয়ে যাবে যদি ফসল উৎপাদন করতে না পারি। কারখানার শ্রমিক ভাইয়েরা যদি কাজ না করে, উৎপাদন না করে মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়ালেও দেশের মুক্তি আসবে না। দেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে না। দুর্দিনে আপনাদের পাশে তারা (স্বাধীনতা বিরােধী) দাঁড়ায় নাই। তাদের অনেককে আমি মাফ করেছি কারণ তারা বাংলার সন্তান। অনেকের বিচার হচ্ছে। দোষী শাস্তি পাবে। নির্দোষ যারা অবশ্যই মুক্তি পাবে কারণ আমি আইনের বিচারে বিশ্বাসী করি। জুলুম করতে চাই না। যুগ যুগ ধরে বাংলার কৃষকের দিকে কেউ নজর দেয় নাই। তারা বাংলার কৃষককে লুট করেই খেয়েছে। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, গত বার যখন আমি ৫০০ কোটি টাকা develop এর জন্য দিয়েছি। মানুষ চায় কি জীবনে? কেউ অর্থ। কেউ চায় সম্পদ। কেউ চায় শক্তি। কেউ চায় মানুষের ভালােবাসা। কেউ চায় সবার উপরে শান্তি। আমি চাই মানুষের ভালােবাসা। আমি চাই মৃত্যুর পরে শান্তি। আমি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। তাহলে আমি বার বার ফাঁসির কাষ্ঠে যাবার জন্য একদিকে আমার সিংহাসন ছিল, একদিকে ফাঁসির কাষ্ঠ ছিল। আমি বেছে নিয়েছিলাম ফাঁসির কাষ্ঠ ৭ কোটি মানুষের জন্য। আমি হুকুম দিয়েছিলাম বাংলার মানুষকে, অনুরােধ করেছিলাম বাংলার মানুষের কাছে, যার যা আছে আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, পশ্চিম পাকিস্তান শােষকদের সাথে আর থাকা হবে না, যে পর্যন্ত না পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যরা বাংলার মাটি থেকে উৎখাত হয়ে না যায়। তােমরা সংগ্রাম চালিয়ে যেও। আমি যদি মরে যাই আমার জন্য তােমরা ভ্রুক্ষেপ করিও না। বাংলার মানুষ আমার কথা রেখেছিল। বাংলার যুবক বিনা অস্ত্রে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলার ছাত্র বিনা অস্ত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলার শ্রমিক, বাংলার কৃষক, বাংলার বিডিআর, বাংলার পুলিশ, বাংলার সামরিক বাহিনীর লােকেরা বাংলাদেশের মানুষ। ১ কোটি লোেক বাংলাদেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মায়ের কোল খালি করেছিল। লক্ষ লক্ষ বােনকে বিধবা করেছিল। লক্ষ লক্ষ মা-বােনকে বে-ইজ্জত করেছিল এই পাকিস্তানের জালেমরা। বাংলার মানুষ মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাংলার মানুষ স্বাধীন ভাবে বাস করতে পারে। এই সােনার বাংলা গড়তে হলে প্রত্যেকটা মানুষের পরিশ্রম করতে হবে। এই সােনার বাংলা করতে হলে অত্যাচার অবিচার বাংলার মাটি থেকে বন্ধ করতে হবে। সােনার বাংলা করতে হলে শােষণহীন সমাজ করতে হবে। সােনার বাংলা করতে হলে সম্পদের সুষম বণ্টন করতে হবে। সােনার বাংলা করতে হলে সােনার মানুষ পয়দা করতে হবে। সােনার বাংলা করতে হলে এদেশের সম্পদ, এদেশের গরীব দুঃখী জনসাধারণ। কৃষকরা ভােগ করতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। আজ আমি চাই দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে খতম করতে হবে। স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর, স্বাধীনতা রক্ষা করা তেমন কষ্টকর। স্বাধীনতা অনেক রক্ত দিয়ে আনা হয়েছে। এখনও একদল লােক বাংলার মাটিতে বাস করে আমার স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে। আজ ইনশাআল্লাহ বাংলার সম্পদ কেউ লুট করে নেবার পারবে না। বাংলার সম্পদ বাংলার মানুষ ভােগ করবে। যা দুনিয়ার থেকে আনবাে এই সাড়ে সাত কোটি লােকের সম্পত্তি। ভাইয়েরা ভােট দিয়েছে ৭ মার্চ। এই ভােট শুধু তাই নয়। একটা নতুন গণতান্ত্রিক দেশের system আসতেছে। এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যাতে কোন রকমের কোন উচ্ছঙ্খলতায় মানুষ লাফ দিয়ে এসে ক্ষমতায় না বসতে পারে। জনগণের ভােটের মাধ্যমেই এই দেশ চলবে।৯৮

রেফারেন্স:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!