You dont have javascript enabled! Please enable it!

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে পশ্চিম পকিস্তানের জালেমরা। তাতেও শান্তি পায় নাই। আমার ৪ লক্ষ লােককে এখনাে পাকিস্তানে আটকাইয়া রেখেছে। তাদের ছাড়বে না। কোন আইনে আটকায় রেখেছে তা আমার জানা নাই? যখন দুনিয়ার বড় বড় রাষ্ট্র যুদ্ধবন্দির কথা বলেন, তাদের কাছে। আমি একটি কথা বলতে চাই যে, যুদ্ধবন্দিদের দেখার জন্য জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী রেডক্রস দেখতে পারে তারা আরামে আছে কি নাই। কিন্তু আমার ৪ লক্ষ লােক যে বন্দি আছে তাদের দেখার জন্য কে ভার নিয়াছেন? আমি বিশ্ব মানবের কাছে জিজ্ঞাসা করি। বিশ্বের বড় বড় দেশ-এর কাছে জিজ্ঞাসা করি যে, তারা আমার জনগণকে যে আটকায়া রেখেছে পশ্চিম পাকিস্তানে তারা কোথায়? কীভাবে বন্দি অবস্থায় আছে? খাবার পাচ্ছে কি না। কাপড় পাচ্ছে কিনা। জেলের মধ্যে আছে কিনা তা দেখে কে? আমি বাংলার মানুষ হয়ে যারা পাকিস্তানের নাগরিক আছে তাদের দেখার জন্য আমি ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রসকে allow করেছি। তারা সেখানে যায় তারা দেখে আমি খাবার দেই। আমার গরীবকে খাবার আমি দিবার পারি না। তাদের খাবার দেই। কিন্তু আমি আজকে ইন্টারন্যশনাল রেডক্রসকে বলতে চাই, আমি জাতিসংঘকে বলতে চাই, আমি দুনিয়ার বৃহৎ রাষ্ট্রকে বলতে চাই যে, আমার ৩ লক্ষ, ৪ লক্ষ লােক পশ্চিম পাকিস্তানে কী অবস্থায় আছে? কোন জেলে আছে? কোন ক্যাম্পে আছে? কীভাবে আছে? চারিদিকে ধ্বংসস্তৃপ। আমি দেখলাম লাখাে লাখাে মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমি সাথে সাথে যারা আমার বাস্তুহারা ছিল, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল ১ কোটি লোেক বাংলাদেশে ফিরে আসলাে। তাদের জন্য আমার খাবার বন্দোবস্ত করতে হবে। থাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। গুদামে চাল নাই। রেললাইন ভাঙা, ষ্টিমার চলে না, পাের্ট ধ্বংস প্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রা লুট করে নিয়ে গেছে। গুদামে খাবার নেই। কী করে বাংলার মানুষকে আমি বাঁচাবাে? বাংলার মানুষকে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলাম যে তােমরা যুদ্ধ কর। বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি দিয়েছিলাম আদর্শ। এই আদর্শের উপর ভিত্তি করে বাংলার মানুষ যুদ্ধ করেছে। বন্ধু রাষ্ট্র এবং অন্যান্য রাষ্ট্র আমাদের সাহায্য করেছে। মানুষকে তাে আমার বাঁচাতে হবে। কাপড় কিনে আনতে হবে বিদেশ থেকে। তেল কিনে আনতে হবে বিদেশ থেকে। ঔষধ কিনে আনতে হবে বিদেশ থেকে। পেট্রোল কিনে আনতে হবে বিদেশ থেকে। পাকিস্তানিরা তাে বাংলাদেশে কোনাে কারখানা করে যায় নাই। সবকিছু বিদেশ থেকে আনতে হবে আমাকে। কী করে আনবাে? কোন রাস্তায় আনবাে? কী করে গ্রামে পৌছাবাে? কী করে মানুষকে খাওয়াবাে? চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাই। আমি বিশ্বাস করি আমার বাংলাদেশ সােনার বাংলা। আমার বাংলার মানুষ সােনার মানুষ। আমার বাংলায় সম্পদের অভাব নেই। যদি পরিশ্রম করতে পারে,যদি সহ্য করে আস্তে আস্তে কাজ করে কঠোর পরিশ্রম করে শ্রমিক ভাইরা, কৃষক ভাইরা, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মচারী ইনশাআল্লাহ বাংলার মানুষ একদিন সােনার বাংলা গড়তে পারবে।৯২

রেফারেন্স:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!