You dont have javascript enabled! Please enable it!

তিনটি জনসভায় বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বান

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষণা করেছেন যে, বাংলার সম্পদ আর কেউ লুট করতে পারবে না। তিনি বলেন, যুগে যুগে কালে কালে বাংলাদেশকে লুট করেছে বিভিন্ন দেশের দস্যুরা। সর্বশেষ লুট করেছে পাকিস্তানিরা। এখন বাংলার মানুষ সচেতন। বাংলা এখন স্বাধীন সার্বভৌম। তাই বাঙালিরা তাদের সম্পদ রক্ষা করার মত ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। কাজেই, বিশ্বের কোন শক্তিই আর এ দেশের সম্পদ লুটে পুটে খেতে পারবে না। সােমবার জাতির জনক তার ঝটিকা গণসংযােগ সফরের জাতীয় পর্যায়ে বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি ও মাদারীপুরের তিনটি ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দেন। বাখেরগঞ্জের অভূতপূর্ব সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিদেশি দস্যুরা বাংলাকে পালাক্রমে লুটেছে। এরপর যা অবশিষ্ট আছে তাও লুট করার জন্য এক শ্রেণির লােক উঠে পড়ে লেগেছে। তিনি জনগণকে এসব দুষ্কৃতিকারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ প্রতিরােধ গড়ে তুলে বাংলার মাটি থেকে তাদের চিরতরে উৎখাত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম। জনগণ আমার নির্দেশ পালন করেছিল অক্ষরে অক্ষরে। আমি শুধু নির্দেশ দিয়েছিলাম; কোন অস্ত্র দেইনি। বিনা অস্ত্রেই তারা পরাক্রমশালী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে। এবারও আমি নির্দেশ দিচ্ছি। বাংলার বুক থেকে দুষ্কৃতিকারির শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলুন। বাংলার মানুষকে শান্তিতে ঘুমুতে দিন। তাদের হারানাে সুখ ফিরিয়ে আনুন। আমি আশা করছি, আপনারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করলে দুষ্কৃতিকারীরা মাথা তুলতে পারবে না। এই সময়ে জনগণ হাত তুলে দুষ্কৃতিকারীদের খতম করার শপথ নেয়। বঙ্গবন্ধু আরাে বলেন, পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীকেও দুষ্কৃতিকারীদের সমুচিত শিক্ষা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার এক বছরের মধ্যে বিধ্বস্ত বাংলার নিজস্ব জনগণের জন্যে কি করেছেন তার হিসেব দিতে গিয়ে বলেন যে, দেশে কিছুই ছিল না। সেই রিক্ত নিঃস্ব অবস্থার মধ্যেও যথাসম্ভব সবকিছুই দিয়েছি। নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়েছি। অপরদিকে যারা বেশি বেতন পেতেন তাদের বেতন কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, আপনারা দাবি দাওয়ার কথা এখন বাদ দেন। উৎপাদন বাড়িয়ে বিধ্বস্ত বাংলাকে সােনার বাংলায় পরিণত করুন। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলুন। দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করে তাদের এমন শাস্তি দিন যে, তারা যেন আর কোনদিন। বাংলার মাটিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। ঝালকাঠির জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে জাতির জনক বলেন, আপনারা অনেক সয়েছেন। আরাে সইতে হবে। আমি জানি সহ্যগুণ আপনাদের আছে। তিনি বলেন, আপনাদের অভাব-অনটন সম্পর্কে আমি সচেতন কিন্তু কি করবাে? ভিক্ষে করে আর কত আনবাে। আমি বাঙালি জাতিকে ভিখারীর জাতিতে পরিণত করতে চাই না। স্বাবলম্বি হবার জন্য আপনাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নইলে বিধ্বস্ত বাংলা কোন দিনই গড়ে উঠবে না। মাদারীপুরের সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসভায় ভাষণ দানকালে জাতির জনক বলেন, যুগে যুগে দুঃখিনী বাংলার বুকের উপর দিয়ে বিপদের পর বিপদ বয়ে গেছে। এত বিপদ পার হওয়ার পরেও এখন বিপদ দেখছি। চারদিকে বিপদ। আর এক শ্রেণির লােক এই বিপদকে মূলধন করে বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে আরাে দুর্বিসহ করে তুলেছে। তিনি বলেন, তারা এখন বাংলার স্বাধীনতাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা চুরি করছে। তারা ডাকাতি করছে, মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে। তাদের সমূলে উৎখাত করতে না পারলে মানুষের জীবনে সুখ আসবে না। তিনি জনগণকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। এদেশের মানুষ বিনা অস্ত্রে যেভাবে হানাদার বাহিনীকে উৎখাত করেছে তেমনিভাবে তারা দুষ্কৃতিকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও ডাকাতদের উৎখাত করবে। তবে আপনাদের সংঘবদ্ধ হতে হবে। এখানে উল্লেখযােগ্য যে, স্বাধীনতার পর মাদারীপুরে এটাই বঙ্গবন্ধুর প্রথম সফর। নির্বাচন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ৭ মার্চ নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনকে বানচাল করার জন্যে কোন কোন মহল জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের মনবাঞ্ছা কোনদিনই পূরণ হবে না। কেননা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবেই। তিনি বলেন, নির্বাচনে আমি প্রার্থী দাঁড় করিয়েছি, আমার মার্কা হচ্ছে নৌকা। আপনারা নৌকায় ভােট দিলে আমি পাব। তিনটি জনসভায়ই জনতা হাত তুলে নৌকার শপথ নেয়। বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি ও মাদারীপুরে বঙ্গবন্ধুকে বিপুলভাবে সম্বর্ধিত করা হয়। ঝালকাঠিতে ভূমি প্রশাসন ও ভূমি রাজস্বমন্ত্রী জনাব আব্দুর রব সেরনিয়াবত সহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। মাদারীপুরে খাদ্য মন্ত্রী শ্রী ফণি ভূষণ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।৭৪

রেফারেন্স: ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!