You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.02.18 | চাঁদপুরে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ - সংগ্রামের নোটবুক

চাঁদপুরে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

স্বাধীনতার জন্য এত রক্ত বাংলার মানুষ যা দিয়েছে দুনিয়ায় কেউ তা দেয় নাই। স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা। বড় রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। ভস্মিভূত একটা দেশ। সাড়ে সাত কোটি মানুষ, ৫৪ হাজার স্কয়ার মাইল। ২৫ বছরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে কিছুই করে নাই। নদী খাল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। না হলেও ১৫০০ মাইল নদীর গতি নষ্ট হয়েছে। কি করা যাবে? কী করে লােকদের বাঁচানাে যাবে? কোথায় পাবাে? কার কাছ থেকে আসবে? কে দেবে? কী করে এই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাব? আজো আমার গ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। আজো আমার দেশের মা বােন। কাপড় পায় না। আজো আমার দেশের মানুষ গৃহহারা সর্বহারা। স্বাধীনতা পেয়েছি বড় কষ্টের বিনিময়ে। স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর স্বাধীনতা রক্ষা করাও তেমন কষ্টকর। আমিতাে পরিষ্কার বলে দিয়েছি। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, ভারতবর্ষ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পাশাপাশি বন্ধু হয়ে বাস করবে। কারও ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করব না, নাক গলাবাে না এবং কোনদিন ভারতবর্ষ বাংলার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না আর আমরাও ভারতের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবাে না। তবে বন্ধু রাষ্ট্র হয়ে আমরা বাস করবাে। বাংলার মানুষকে বাংলায় যা জোগাড় করতে পারবাে যা সম্পদ আসবে তা বাংলার মানুষের ভােগ করার অধিকার রয়েছে। একদল লােক যাদের কাছে অস্ত্র রয়েছে। তারা রাত্রে রাত্রে ডাকাতি করে। এতবড় শয়তান যে এখনাে মানুষকে রাত্রে ঘুমাতে দেয় না। আরাে বলে কিনা যে রক্ষী বাহিনী withdrow কর। পুলিশ দিও না। কী চাঁদপুরের ভাইয়েরা, তােমরা তাে চর দখল নিয়ে বহু মারামারি কর। চোর ডাকাতকে শেষ করতে পারবা না? চোর ডাকাতদের খুঁজে বের কর। আমার মানুষ ঘুমাতে চায়। না হলে এমন ঝড় উঠবে যে ঝড়ে তােমরা ধ্বংস হয়ে যাবা। চোর চুট্টা বদমায়েশ বেশি দিন থাকতে পারে না। ১২ মাসে গ্রামে গ্রামে রাস্তা নাই, ঘাট নাই, লঞ্চ নাই, বাস নাই, যেখান থেকে পেরেছি এনে গ্রামে গরীবকে কিছু পৌছাবার চেষ্টা করেছি। খাজনা মাফ করেছি, বকেয়া খাজনা সুদসহ ২৫ বিঘা জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছি, কলকারখানা ধ্বংস হয়েছিল। শ্রমিক ভাইয়েরা খালি দাবি কর। ও দাবি টাবি চলবে না আমার কাছে, production করতে হবে। ভাল করে production কর, ভালাে করে পয়সা পাবা। আর ভালাে করে production না পার পয়সা পাবা না। ও সব বলে কয়ে লাভ নাই আমার কাছে। পয়দা করলে খাবার পাবা। কাজ করলে খাবার পাবা, পয়দা না করলে কেউ দিবার পারবে না। মুজিবুরকে বেটে খাওয়ালেও দিবার পারবে না। ১২ মাসের মধ্যে শাসনতন্ত্র দিয়েছি। দুনিয়ার কোন দেশে আজ। পর্যন্ত দেবার পারে নাই। এই শাসনতন্ত্র দিতে হয়েছে আমাকে তাড়াতাড়ি। মানুষ মরণশীল। শাসনতন্ত্রে লেখা হয়েছে জনগণের অধিকার। বাংলার মাটি আমার মাটি। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার সভ্যতা আমার। আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র, এই চলবে। জনগণের প্রতিনিধিরা জনগণ ভােট দিয়ে পাঠাবে সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার থাকবে। সমাজতন্ত্র, শােষণহীন সমাজ হবে। এখানে ভুড়িওয়ালারা বাংলার গরীবকে লুট করে খেতে পারবে না। এ আইন পাশ করে দেয়া হয়েছে। চতুর্থ, ধর্মনিরপেক্ষতা। বাংলার মাটিতে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সমানভাবে বাস করবে। মুসলমান মুসলমানধর্ম পালন করবে কেউ বাধা দিবার পারবে না। হিন্দু হিন্দু ধর্মপালন করবে কেউ বাধা দিবার পারবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করলে যে কী হয় তা আপনারা দেখেছেন। পাকিস্তানিরা ইসলামের নামে আমার ২ লক্ষ মা-বােনের উপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। পাকিস্তানিরা আমার গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়েছে। পাকিস্তানিরা আমার ঘর-বাড়ি ছারখার করেছে। পাকিস্তানিরা আমার দুধের বাচ্চাকে হত্যা করেছে। বাংলার মানুষকে আমি ভালবাসি। বাংলার মানুষ আমাকে ভালােবাসে। আমি যেন আপনাদের ভালােবাসা নিয়ে মরতে পারি এর চেয়ে আমার কিছুই প্রাপ্য নাই। এর চেয়ে আমি কিছুই চাই না।৬৯

রেফারেন্স: দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ