বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবেই-বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রােববার তার নির্বাচনী গণসংযােগ সফরে মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া তিনটি বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন। সকল স্থানেই বঙ্গবন্ধুর আগমনে জনগণের মনে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি স্থানেই জনতা জাতির পিতাকে বিপুল ও প্রাণঢালা সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে। মৌলভীবাজারের জনসভায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষণা করেন যে, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করুক বা না করুক এ দেশের জনগণ একটি আত্মমর্যাদা বােধ সম্পন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বে টিকে থাকবে। কোন শক্তিই একে ধ্বংস করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানের পরামর্শ অনুযায়ী চীন বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়ােগ করে। তিনি চীনের জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের বােঝা উচিত যে তারাও যেভাবে রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন অনুরূপভাবেই বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। চাঁদপুর জনসভায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, কিছু কিছু লােকের ভারতের সমালােচনা করা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্বর বাহিনীর সেই পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিভীষিকাময় দিনে এক কোটি বাঙালি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এবং ভারত তাদের আশ্রয়, খাদ্য ইত্যাদি প্রদান করে। এইসব ভারত সমালােচনাকারীরাও ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করে আরামে দিন কাটায়। ভারত এই এক কোটি লােককে আশ্রয় না দিলে আরাে বহু লােক অনাহারে প্রাণ হারাতাে। এ ছাড়া বাংলাদেশের তরুণরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ও শত্রুমুক্ত করার জন্য ভারতেই ট্রেনিং গ্রহণ করেন। জাতির পিতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশাল জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন, দেশকে যে শাসনতন্ত্র দেওয়া হয়েছে তাতে বাংলার মানুষের দীর্ঘদিনের আকাক্ষা পরিপূরণ করে জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে শাসনতন্ত্র দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, মানুষ মরণশীল। তাই তার অন্তরের একটি সযত্নে লালিত আশা এই যে, শাসনতন্ত্রে বর্ণিত ব্যবস্থাধীনে তরুণ সমাজ উন্নতি ও অগ্রগতির পানে এগিয়ে যাবে।৭০
রেফারেন্স: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ