You dont have javascript enabled! Please enable it!

‘বাস্তুহারা’ কথাটি মুছে না যাওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম শেষ হবে না

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বাংলার কৃষক-শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের মুক্তি আসবে। রােববার বিকেলে সােহরাওয়ার্দী ময়দানে বাংলাদেশ বাস্তুহারা সমিতির উদ্যোগে আয়ােজিত বাস্তুহারাদের এক সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দানকালে তিনি উপরােক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা মুজিববাদের ভিত্তিতে কৃষক-শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শােষণহীন সােনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাস্তুহারা সমিতির সভাপতি জনাব মাহফুজুল বারি। বক্তৃতা করেন ঢাকা ১৩ থেকে আওয়ামী লীগ মনােনীত প্রার্থী ও ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গােলাম মােস্তফা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জনাব মােস্তফা সারওয়ার, বাস্তুহারা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব এম এ কাশেম, জনাব আব্দুল করিম, নুরুল হুদা, জনাব মর্তুজা আলী ও জনাব নুরুল ইসলাম। জনাব রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে বাংলার মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানাে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি এবং নির্বাচনকে বানচালের মাধ্যমে চীন-মার্কিনের চরেরা দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাতের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের সম্বন্ধে সজাগ থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরাে বলেন যে, বিগত নির্বাচনে বাংলার মানুষ ৬-দফার ভিত্তিতে শতকরা ৯৫টি আসনে ভােট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করেছিল। এবং আগামী নির্বাচনে শতকরা ৯৯ টি ভােট দিয়ে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, আগামী নির্বাচন হলাে আদর্শ প্রতিষ্ঠার রায়ের নির্বাচন। তাই নির্বাচনে মুজিববাদের জয় নিশ্চিত। কারণ, তার প্রমাণ ইতােমধ্যেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বঙ্গবন্ধু দুই আসনসহ সর্বমােট ১১টি আসনে আওয়ামী লীগ মনােনীত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। জনাব রাজ্জাক বাস্তুহারাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, দুঃখের দিনে আপনাদের সাথে যে ছিল তাকে আপনারা ভােট দিবেন। তিনি বলেন, আপনাদের দুর্দিনে আব্দুল হালিম ও আলীম আল রাজী কেউই আপনাদের দেখতে যায়নি। দেখতে গিয়েছিলেন গাজী গােলাম মােস্তফা। তিনি আগামী নির্বাচনে গাজী গােলাম মােস্তফাকে ভােট দিয়ে নৌকা মার্কাকে জয়যুক্ত করার জন্য বাস্তুহারাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের পর বাংলার মাটিতে যাদের অস্তিত্ব থাকবে না সেই সিআইএর এজেন্ট মেজর জলিল এবং পাকিস্তানি দালাল দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার আউয়াল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তিনি বলেন, দালাল আর সিআইএর এজেন্টদের রাজনীতি আর নির্বাচনের উদ্দেশ্য মূলত কি তা বাংলার জনগণ জানে। জনাব রাজ্জাক বলেন, সমাজ থেকে যেদিন বাস্তুহারা নামটি মুছে যাবে এবং তারা সমাজে সুষ্ঠুভাবে পুনর্বাসিত হবে। সেই দিন বঙ্গবন্ধু তার সংগ্রাম ক্ষান্ত করবেন। তিনি মুজিববাদের ভিত্তিতে কৃষক শ্রমিক-রাজ প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে সােনার বাংলা গড়ে তােলার জন্য জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
গাজী গােলাম মােস্তফা : ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গােলাম মােস্তফা সকল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে আগামী নির্বাচনে মুজিববাদের পক্ষে রায় দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হস্তকে শক্তিশালী করে তােলার জন্য বাস্তুহারাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নৌকা তথা আওয়ামী লীগের জয় মানে বঙ্গবন্ধুর জয়। তিনি মুজিববাদের ভিত্তিতে কৃষক-শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নিয়ে বঙ্গবন্ধু মনােনীত প্রার্থী তথা নৌকা মার্কায় ভােট দেবার আহ্বান জানান। জনাব মােস্তফা বাস্তুহারাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বঙ্গবন্ধু তাদের সমস্যা সম্বন্ধে অবগত রয়েছেন। এবং তার জন্য ইতােমধ্যে মিরপুর এবং মােহাম্মদপুরে বাস্তুহারাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বস্তি এলাকায় পানির অভাব দূরীকরণের জন্য পানির কল স্থাপনের ব্যাপারে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সকল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে শােষণমুক্ত সােনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাস্তুহারাদের প্রতি আহ্বান জানান।
মােস্তফা সারােয়ার : জনাব মােস্তফা সারােয়ার বলেন, যেদিন সমাজে বাস্তুহারা নামে কোন ভিন্ন শ্রেণি থাকবে না সেদিনই সত্যিকার সােনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, বাস্তুহারারাও সাড়ে সাত কোটি মানুষের অংশ। জনাব সারােয়ার বলেন, কেবলমাত্র পতাকা বদলের স্বাধীনতা অর্জনই বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল না, বাংলার কৃষক শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি বছরের পর বছর সংগ্রাম করেছেন এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে বাংলার মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়াই বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি আরাে বলেন, বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই বিরােধী দলগুলােকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযােগ দিয়ে আগামী ৭ মার্চ নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকার মাত্র ৯ মাসের মধ্যে জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দিয়ে একটি নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি করেছেন। সরকার ইতােমধ্যে ভূমিহীনদের মধ্যে ৯ হাজার প্লট জমি বিতরণ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি মুনাফাখখার, কালােবাজারী, সমাজবিরােধী, নির্বাচন বানচালকারী ও স্বাধীনতা নস্যাকারীদের। বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কেবলমাত্র রক্ষী বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী দিয়েই দুর্নীতিবাজ ও সমাজবিরােধীদের দমন করা সম্ভব নয়। তার জন্য দরকার জনগণের ঐক্য। তিনি মুজিববাদের ভিত্তিতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
মাহফুজুল বারী : বাংলাদেশ বাস্তুহারা সমিতির সভাপতি জনাব মাহফুজুল বারী বলেন, অতীতে যেমন বাস্তুহারারা বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিল আগামী দিনেও বঙ্গবন্ধুর হস্তকে শক্তিশালী করার জন্য তারা তার পেছনে থাকবে। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য বিদেশি চরেরা দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে আঁতাত করে সুপরিকল্পিত উপায়ে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ ঘুষখাের, কালােবাজারী ও দুর্নীতিবাজদের আড্ডা জমেছে এবং তারাই বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি সকল দুর্নীতিবাজ ও সমাজবিরােধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য বাস্তুহারাসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আগামী দিনে আওয়ামী লীগের প্রতিরােধ আন্দোলন ও শুদ্ধি অভিযানের সাথে সম্পূর্ণ সহযােগিতা করার ব্যাপারে বাস্তুহারা সমিতির পক্ষ থেকে আশ্বাস প্রদান। করেন। তিনি অবিলম্বে বস্তি এলাকার মহামারী রােধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ইনজেকশন ও টীকা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। এছাড়া তিনি বস্তি এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলির বেতন ধার্য করার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানান।৪৪

রেফারেন্স: ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!