You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.02.10 | শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন চাই—বঙ্গবন্ধু | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন চাই—বঙ্গবন্ধু

ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়কণ্ঠে ঘােষণা করেন যে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে সরকার সমস্ত প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আজ গণভবনে ডেপুটি কমিশনার ও পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টদের এক সম্মেলন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী আসন্ন নির্বাচনে সরকারি ও বিরােধী দলগুলাের মধ্যে কোন রকম বৈষম্য না দেখানাের জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, মুক্তিযুদ্ধের এক বছরের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা একটি অভূতপূর্ব সাফল্যের ব্যাপার এবং বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক চেতনার জন্যই সেটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন যে, প্রাপ্তবয়স্ক ভােটাধিকারের ভিত্তিতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠান জাতির জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সাফল্যজনক নির্বাচন অনুষ্ঠান গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ ও আদর্শের প্রতি তাদের সম্মান ও আনুগত্যবােধ আরাে সুদৃঢ় করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে ভােটাদানের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও যেসব কর্মকর্তাকে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের অবশ্যই সে সম্পর্কে নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে, চারটি মৌলিক আদর্শ যেমন গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে কারাে কোন প্রশ্ন কিংবা বিনষ্ট করার অধিকার নেই। ঐ চারটি আদর্শকে নষ্ট করার যে কোন প্রচেষ্টাকে অবশ্যই কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
কিছু লােক পুনরায় সাম্প্রদায়িকতায় উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছে যা পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল। ঐসব ব্যক্তিদের অবশ্যই খুঁজে বের এবং কঠোরভাবে মােকাবিলা করতে হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, যে পর্যন্ত প্রত্যেকে সম্পূর্ণভাবে জানমালের নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, বাংলাদেশের শান্তিকামী নাগরিকদের সাহায্য ও সহযােগিতায় ততদিন অবশ্যই সে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন যে, সরকারি কর্মচারীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তারা হচ্ছেন জনগণের সেবক। তাদেরকে অবশ্যই সর্বান্তকরণে দেশের মঙ্গল ও। নাগরিকদের সেবায় আত্মনিয়ােগ করতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষেরা যদি স্বাধীনতার ফল ভােগ না করতে পারে তাহলে স্বাধীনতা হবে অর্থহীন। চোরাচালান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী খুব সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, সীমান্ত থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর তিনি কয়েকটি চোরাচালানের খবর পেয়েছেন। সীমান্ত এলাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টদের তিনি সতর্ক থাকার এবং চোরাচালানী ও সমাজ বিরােধীদের শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে প্রধানমন্ত্রী পুনরুল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, এই উদ্দেশ্যে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রয়ােজনীয় ক্ষমতা ও সম্পদ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনারের সাথে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবশ্যই পুরােপুরিভাবে সহযােগিতা করতে হবে। এ সম্পর্কে ইতােমধ্যেই সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা ও সংগঠন সম্পর্কে কর্মকর্তাদের কাছে কোন নালিশ করা হলে তাদের অবশ্যই সেগুলাের প্রতি সাথে সাথে দৃষ্টি দিতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আসন্ন নির্বাচনে দেশে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে তার জন্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ আইন রক্ষাকারী সংস্থাগুলােকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টদের সম্মেলনে ভাষণদানকালে জনাব আব্দুল মান্নান বলেন যে, যে কোন মূল্যে প্রথম সাধারণ নির্বাচন যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে সেভাবে অবশ্যই প্রতিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে সরকারি কর্মচারীদের তিনি নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশ দেন। দেশে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে তার জন্যে তিনি তাদের সব সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও পরামর্শ দেন।৩৭

রেফারেন্স: ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ