You dont have javascript enabled! Please enable it!

কর্মহীন পঙ্গু মুক্তিযােদ্ধারা মাসিক সাহায্য পাবে

কর্মহীন পঙ্গু মুক্তিযােদ্ধাদের প্রত্যেককে মাসে ৭৫ টাকা করে সাহায্য দেওয়া হবে। আগামী এক বছর পর্যন্ত এই সাহায্য অব্যাহত থাকবে। মুক্তিযােদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বেশ কয়েকটি উল্লেখযােগ্য প্রকল্পে হাত দিচ্ছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক হােটেল, ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুত কারখানা, একটি ইনডেন্টিং হাউজ, মাঝারি আকারের বস্ত্রকল প্রভৃতি থাকবে। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী জনাব এ এইচ এম কামারুজ্জামান বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান। মাস তিনেক আগে দশটি শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থা নিয়ে মুক্তিযােদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। জনাব কামারুজ্জামান তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কর্মতৎপরতা সম্পর্কে সাংবাদিক সম্মেলনে আলােচনা করছিলেন। ট্রাস্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম এ রবও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। জনাব কামারুজ্জামান বলেন, মুক্তিযােদ্ধাদের ব্যাপারে পুনর্বাসনের দায়িত্ব জাতিকে নিতে হবে। এ দায়িত্ব আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। তিনি বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টের লক্ষ্য হলাে, মুক্তিযােদ্ধা বিশেষ করে যারা পঙ্গু বা অক্ষম তাদেরকে এমনভাবে পুনর্বাসন করা যাতে তারা সমাজের বােঝা হয়ে থাকতে বাধ্য না হন। তাদের জীবন যাতে অর্থপূর্ণ হয় সেদিকেই লক্ষ্য রাখা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযােদ্ধাদের আগ্রহী এবং তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই ট্রাস্ট গঠন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযােদ্ধারা যাতে আত্মনির্ভরশীল হবার প্রকৃত পথ বেছে নিতে পারে ট্রাস্ট তারই ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেবে। ট্রাস্ট যেসব প্রকল্পে হাত দিতে যাচ্ছে সেগুলি সম্পর্কে আলােচনাকালে জনাব কামারুজ্জামান বলেন, এগুলি যথেষ্ট অর্থকরী ও লাভজনক হবে। আন্তর্জাতিক হােটেল স্থাপন সম্পর্কে তিনি জানান, বিদেশি রাষ্ট্রের সহযােগিতায় এই হােটেল স্থাপনের প্রস্তাব সম্পর্কে ট্রাস্ট এখন সরকারের সাথে আলােচনা চালাচ্ছে। ক্রীড়া সরঞ্জামাদি প্রস্তুত কারখানা সম্পর্কে তিনি জানান—এ ব্যাপারে ট্রাস্টের একজন কর্মকর্তা ইতােমধ্যেই ভারতে গিয়েছিলেন এবং ফিরে এসে তিনি এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে রিপাের্ট দিয়েছেন। ৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঢাকাতেই কোথাও এই কারখানা স্থাপন করা হবে। জনাব কামারুজ্জামান বলেন, মুক্তিযােদ্ধারা নিজেরাই এইসব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলি চালাবে। কর্মসূচিতে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে তিনি জানান। শহীদ মুক্তিযােদ্ধা এবং প্রকৃত মুক্তিযােদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। মাসখানেকের মধ্যেই এই তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধকালে যারাই নিহত হয়েছেন তারা সবাই যে মুক্তিযােদ্ধা ছিলেন তা নয়। নিহতদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা দালালির দায়ে মুক্তিযােদ্ধাদের হাতেই মারা পড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পঙ্গু মুক্তিযােদ্ধার সংখ্যা আনুমানিক ২ হাজার হবে।
মাসিক সাহায্য : কর্মহীন পঙ্গু মুক্তিযােদ্ধাদের প্রত্যেককে মাসে ৭৫ টাকা করে সাহায্য দেয়া হবে বলে জনাব কামারুজ্জামান জানান। আগামী এক বছর পর্যন্ত এই সাহায্য অব্যাহত থাকবে। তবে এই সাহায্য দিয়ে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে তােলা হবে। তারা যাতে ভবিষ্যতে কোনাে কাজে যােগ দিতে পারেন তার জন্যে তাদেরকে এই সাথে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হবে এবং তাদের কাজের সংস্থানও করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, বসে বসে কাউকে টাকা নিতে দেয়া হবে না।১

রেফারেন্স: ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!