You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী—বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবিবার ঘােষণা করেন যে, বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ কারও অধীনস্থ হয়ে থাকবে না। সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দুই লক্ষাধিক মুক্তিযােদ্ধার জাতীয় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু এই কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, কেউ বাংলাদেশের উপর প্রভাব কায়েম করতে চাইলে মুক্তিযােদ্ধাগণ তােমরা আছাে আমরা আছি— মিলিতভাবে আমরা প্রতিরােধ গড়ে তুলবাে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, বাংলাদেশ বিশ্বের যে কোন দেশের উপনিবেশবাদ ও পুঁজিবাদের বিরােধিতা করে। বিশ্বের যে কোন স্বাধীনতাকামী মানুষ এবং দেশের সংগ্রামের পথে বাংলাদেশ দাঁড়াবে। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ভারত, সােভিয়েত রাশিয়া, গ্রেট বৃটেনসহ অন্যান্য দেশের প্রতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে রাশিয়া নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন এবং সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। বাঙালি জাতি অকৃতজ্ঞ নয়। তাদের এই সাহায্যের কথা বাংলাদেশ ও জাতি কোনদিন ভুলবে না।
চীন সম্পর্কে : বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, চীন বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানি পুঁজিবাদী ও সামরিক জান্তার সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের বিরােধিতা করেছে। তিনি বলেন, চীন ঔপনিবেশিক এবং পুঁজিবাদীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা সত্ত্বেও পাকিস্তানি পুঁজিবাদী সামরিক জান্তার সাথে সহযােগিতা করছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে চীনের ভেটো প্রদানের তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকতে এসেছে এবং ইনশাল্লাহ টিকে থাকবে। চীনের জনগণের সাথে বাংলার জনগণের কোন বিরােধী নেই বলেও বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। তার স্মরণ রাখা উচিত, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ।
ভারত প্রসঙ্গে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মহাসম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিষােদগার করা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলার মাটিতে নতুন করে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানােই এদের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পারস্পরিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে। কেউ কারও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের সাহায্যের কথা বঙ্গবন্ধু সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে বলেন, বাঙালি জাতি অকৃতজ্ঞ নয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামকালে ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, মুক্তিযােদ্ধার রসদ অস্ত্রশস্ত্র প্রভৃতি সরবরাহের জন্যেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ভারতের সাহায্যের কথা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন।৭৯

রেফারেন্স: ২১ জানুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!