বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সাথে বাংলার মানুষের নাড়ীর যােগ রয়েছে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বানে সারা দেশে ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিরােধ দিবস পালনের তৃতীয় এবং শেষ দিন বুধবার স্থানীয় টাউন হল ময়দানে আয়ােজিত এক জনসভায় যশাের জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যশাের জেলা আওয়ামী যুব লীগের আহ্বায়ক খান টিপু সুলতান বক্তৃতাদানকালে বলেন, বাংলার মানুষের সাথে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাড়ীর সম্পর্ক। তাই বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলিয়ান হয়ে যেকোন ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা রক্ষা করতে এতটুকু দ্বিধাবােধ করবে না। সভায় সভাপতিত্ব করেন যশাের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এম, সি, এ জনাব রওশন আলী। বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা জনাব এস, এম, জামাল উদ্দিন তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে বেঈমানী ও বিশ্বাসঘাতকতা করে জাতীয় স্বার্থ বিরােধী কার্যকলাপ এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারা স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তােলার জন্যে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। অতঃপর সভার অন্যতম বক্তা যশাের জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব নুরুল ইসলাম এডভােকেট ও সাধারণ সম্পাদক জনাব হদিউজ্জামান স্বাধীনতা নস্যাকারীদের অশুভ চক্রান্তের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বাংলার মাটিতে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। এই সাবেক এম, সি, এ দ্বয় বলেন, কোন চক্রান্তই বাংলার মানুষের এই আশা আকাক্ষাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এছাড়া, সভায় জনাব আবু সালেহ গজনবী, জনাব জহুর আহমেদ, জনাব হেদায়েত উল্লাহ, জনাব শামসুল আলম প্রমুখ নেতা বক্তৃতা করেন। বিভিন্ন বক্তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ ও কটুক্তির তীব্র নিন্দা করে দেশ গড়ার কাজে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সহযােগিতার মনােভাব নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং দুর্নীতিবাজ ও দুবৃত্তদের সমাজ থেকে উৎখাত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবার অনুরােধ করেন। এই প্রসঙ্গে তারা বলেন, বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কর্মী বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গণজীবন বিভিন্ন বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে উদ্দেশ্যে অস্ত্র ত্যাগ করেছিলেন তা বাস্তবায়নের পথে কোন অন্তরায় সৃষ্টি হলে বাংলার মানুষ তা বরদাস্ত করবে না। বরং প্রয়ােজনে তারা পুনরায় অস্ত্র হাতে তুলে নিবে এবং শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে স্বাধীনতার সকল দায়িত্ব পালন করবে। জনসভা শেষে টাউন হল ময়দান থেকে জনাব রওশন আলীর নেতৃত্ব এক বিরাট গণমিছিল বের হয়। বিভিন্ন ফেষ্টুন প্লাকার্ড বহনকারী এই মিছিলটি বঙ্গবন্ধুর প্রতি অশােভন আচরণ ও স্বাধীনতা নস্যাকারীদের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিভিন্ন স্লোগান প্রদান করে। ট্রাক ও শােভাযাত্রার মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকেও জনসাধারণ সভায় যােগদান করে। আওয়ামী লীগ কর্তৃক আহ্বায়িত এই তিন দিনব্যাপী প্রতিরােধ দিবসের প্রথম দিন গত ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৯ জানুয়ারি এই উপলক্ষে এক বিরাট মশাল মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক অতিক্রম করে।
আওয়ামী যুব লীগের প্রতিবাদ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটুক্তি-ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে গত ৯ জানুয়ারি বেলা ১১ টায় স্থানীয় টাউন হলে যশাের জেলা আওয়ামী যুব লীগের এক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যশাের জেলার দলীয় আহ্বায়ক জনাব খান টিপু সুলতান উক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলন শেষে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
নড়াইলে প্রতিরােধ দিবস : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বানে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুব লীগ ও শ্রমিক লীগের যৌথ উদ্যোগে বুধবার প্রস্তাবিত নড়াইল জেলায়ও প্রতিরােধ দিবস পালন করা হয়। এই উপলক্ষে দুপুর সাড়ে ১২টায় এক বিরাট গণ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধুর প্রতি অশােভনীয় আচরণের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড ও ফেস্টুন সহ শহরের প্রধান সড়কটি অতিক্রম করে। অতঃপর, বেলা আড়াইটায় স্থানীয় ডাক বাংলা প্রাঙ্গণে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব বজলার রহমান। জনসভায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটুক্তি ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাধীনতার অস্তিত্ব বিপন্নকারী দেশি-বিদেশি দালাল ও দুবৃত্তদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব এখলাস উদ্দিন আহমেদ, জনাব বিএম মতিউর রহমান, জনাব আ,ক,ম, সাঈদুল রহমান সেলিম, শ্রী অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, জনাব এ, বি, এম, মাহমুদ উল আলম, জনাব আবদুল মান্নান, জনাব সাঈদুর রহমান চৌধুরী ও জনাব সিরাজুল হক।৫২
রেফারেন্স: ১১ জানুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ