নাটোরে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
আজ আমার বাংলাদেশ স্বাধীন। আজ আমার বাংলাদেশ সার্বভৌম। আজ আমার বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের মালিক। আমি রক্ত দিতে পারি নাই। যাওয়ার বেলায় আমি কিছুই দিয়ে যেতে পারি নাই। দিয়েছিলাম আদর্শ, দিয়েছিলাম নীতি, আর দিয়েছিলাম বাঙালি জাতির জাতীয়তাবােধ দিয়েছিলাম বাঙালি জাত বুঝতে পেরেছিল যে, আমি আমার দেশের মালিক হবাে। পশ্চিমাদের এদেশে থাকতে দেব না। তাই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। তখনও বাংলায় মীরজাফর ছিল, তখনও বাংলায় রাজাকার ছিল, আলবদর ছিল, বেঈমান ছিল। কিন্তু বাংলার জনগণ আমার কথায় অস্ত্র ধরেছিল। আমার জনগণকে জানাতে চাই আমার দুঃখে বুক ফেটে যায়, মানুষ ঘুমাতে পারে না। চোর, ডাকাত, গুন্ডা, বদমায়েশ অস্ত্র পেয়েছে। গ্রামে গ্রামে গরীবদের রাতের বেলায় তাদের লুট করে, তারা ডাকাতি করে। তাদের পয়সা লুট করে খায়। মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। আশ্চর্য হয়ে গেলাম যে, স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষ হাসতে হাসতে জীবন দিল, যে রক্তের দাগ আজো বাংলার গ্রামে গ্রামে দেখা যায়। আজো রক্তের দাগ বাংলার দেওয়ালে দেওয়ালে দেখা যায়। এখনও মায়ের চোখের পানি বন্ধ হয় নাই। এখনাে বিধবা বােন কাঁদে, আজো গরীব হাহাকার করে। এখনও চোর, গুন্ডা, বদমায়েশ রাত্রের বেলায় যেয়ে তারা গুন্ডামি করে। গরীবের সম্পদ লুট করে খায়। আমি চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি চাই আমার বাংলার মানুষ কাপড় পরুক। আমি চাই আমার বাংলার বেকার চাকুরি পাক। তাই গণপরিষদের সদস্যদের নিয়ে আমি আপনাদের জন্য দলিল করে দিয়েছি যাকে বলা হয় শাসনতন্ত্র। দুনিয়ায় এক বছরে কেন? বিপ্লবের পর ৫ বছর ১০ বছর আছে কেউ কোন দিন দিতে পারে নাই। আমি ১০ মাসে আপনাদের দলিল করে দিয়েছি। সে দলিলে লেখা আছে যে, বাংলার জনগণ হবে বাংলার সম্পদের মালিক। অনেক আশা আছে যে, বাংলাদেশে হবে শােষণহীন সমাজ। কোন বড়লােক কোন গরীবকে শােষণ করে খেতে পারবে না। লেখা আছে তাতে যে, সুষম বণ্টন হবে বাংলাদেশের সম্পদ। সেই জন্য আমি কি করেছি, জানেন বড় বড় চটকল, বড় বড় কাপড়ের কল, বড় বড় চিনির কল, ব্যাংক, ইলুরেন্স কোম্পানি জাতীয়করণ করেছি। এগুলাে ছিল কয়েক জন বড় বড় ভুড়িওয়ালাদের সম্পত্তি। সেই ভুড়িওয়ালাদের পেটটা কাটা হয়ে গেছে। এই সম্পত্তি এখন হয়েছে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের। মানুষই তার মালিক। সরকারি কর্মচারীদের ভাইদের বলি আপনারা মনে রাখবেন। এদেশে আপনারা শাসক নন। আপনারা সেবক। আপনাদের সেবার মনােবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। স্বাধীন দেশের মানুষ হিসাবে কাজ করতে হবে।৩৮
রেফারেন্স: দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ