নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে- বঙ্গবন্ধু
নাটোর। ৭ মার্চে ধার্য নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ পুনর্বার আশ্বাস প্রদান করেন। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ায় নির্বাচনে কোন হস্তক্ষেপ হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু আজ বিকালে এখানে এক ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, এই শহরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলাের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সদর দপ্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তিনি ৫ বছরের জন্য ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান না বলে ৭ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠান করছেন। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তিনি তাদের সতর্ক করে দেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, তারা অস্ত্র দেখিয়ে কিছু লাভ করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশের জনসাধারণ ঐসব অস্ত্র কেড়ে নিতে সক্ষম। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরােধের আহ্বান জানান। কিন্তু কিছু সংখ্যক লােভী ব্যক্তি ত্রাণ সামগ্রির ক্ষেত্রেও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি চোরাচালানের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, ক্ষেতে ও কারখানায় উৎপাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে এবং দেশকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে পণ্য মজুদ অথবা কালােবাজারে বিক্রয় করতে নিষেধ। করেন। জনসাধারণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও কর্ম সংস্থানের নিশ্চয়তা বিধানই তার লক্ষ্য। সােনার। বাংলায় তার স্বপ্ন এবং তজ্জন্য সােনার মানুষ গড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ২ কোটি মণ খাদ্যশস্য সাহায্য দিয়েছে এবং ১শত কোটি টাকা ও অধিক মূল্যের ত্রাণ সামগ্রি দিয়েছে। ১৯৭৩ সালের জন্য ১শত কোটি টাকা মূল্যের খাদ্যের অর্ডার দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশে গণতন্ত্র থাকায় কিছু সংখ্যক লােক যারা জনসাধারণের জন্য কিছুই করে নাই এবং কেবল বক্তৃতা করেছে। কিন্তু কোন দেশে বিপ্লবের পর এত বেশি গণতন্ত্র দেয়া হয়নি।
প্রশাসনিক সদর দফতর : প্রধানমন্ত্রী তাঁর “নাটোরবাসী ভাই-বােনদেরকে বলেন যে, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলাের জন্য নাটোরে তার প্রশাসনিক সদর দফতর স্থাপিত হয়েছে। তিনি কিংবা তার মন্ত্রীরা এখানে এসে উত্তরাঞ্চলের মানুষের অসুবিধা উপলব্ধি করে তা দূরীকরণের চেষ্টা করবেন। যেসব দল রাজনৈতিক কর্মীদের গুপ্ত হত্যার আশ্রয় গ্রহণ করেছে বঙ্গবন্ধু তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে নাটোরের আওয়ামী লীগ নেতা জনাব রজব আলী, খুলনা শ্রমিক লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সুফিয়ান ও মঠবাড়িয়ার প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য মরহুম সওগাতুল আলম সগীরের হত্যার বিষয় উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযােগে নাটোরে পৌছালে শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত বড় হরিশপুর ময়দানে এক বিরাট জনসভার আয়ােজন করা হয়। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলােতে অনুষ্ঠিত জনসভার মধ্যে এটি বৃহত্তম।৩৯
রেফারেন্স: ৯ জানুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ