You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.01.03 | আমার সুনাম হানির জন্য বিদেশে অপপ্রচার চালানাে হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আমার সুনাম হানির জন্য বিদেশে অপপ্রচার চালানাে হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু

বরগুনা, পটুয়াখালী। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে এক বিরাট জনসমাবেশে ভাষণদানকালে বলেন যে, বিশেষ একটি চক্র আমাকে বিশ্ব জনমতের সম্মুখে অপদস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য যে বিদেশি সাহায্য আসছে, তা যাতে বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়িত করার কাজে এই মহল সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে। তিনি বলেন যে, স্বদেশে তার জনগণের সামনে তাকে অপদস্ত করার প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর এই অশুভ চক্র বিদেশে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, এই অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার মানসে তারা দেশের যত্রতত্র গােলযােগ সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি : কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল দেশের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াবার চেষ্টা করছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে জনগণকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, এরা বাংলাদেশের দুশমন। যে কোন মূল্যে এদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। আবেগআপ্লুত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, কোন মূল্যেই আমাকে ক্রয় করা যাবে না। বিপুল জনতার হর্ষধ্বনির মধ্যে। বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন যে, তিনি বাংলাদেশের মানুষের সাথে জীবনের বিনিময়ে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না।
জনগণের ভালবাসাই আমার আশির্বাদ : বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের ভালবাসাই তার আশির্বাদ, এবং তার সংগ্রামী জীবনে দীর্ঘকাল নানাবিধ বিপদ-আপদে এই আশির্বাদই তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, একমাত্র জনগণের ভালবাসাই তাকে বার বার পাকিস্তানি কারাগার ও ফাসিকাষ্ঠ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, ইয়াহিয়া খান তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ পাকিস্তানি শােষকদের নিকট দেশের জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে তিনি পারেন না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব অপেক্ষা আমার প্রাণপ্রিয় জনগণের স্বার্থের খাতিরে নির্যাতন ভােগ ও মৃত্যুবরণ করা অধিকতর শ্রেয় বলে আমি মনে করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বক্তৃতায় এক পর্যায়ে শ্রোতামন্ডলীকে জিজ্ঞাসা করেন যে তার নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থা আছে কি না? সভায় সমবেত শ্রোতামন্ডলী স্লোগান সহকারে হস্ত উত্তোলন করে প্রাণপ্রিয় নেতার প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থনের কথা ঘােষণা করেন।
ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না : বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। আমার জনগণের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্যই আমি রাজনীতি করি। তিনি বলেন, আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, কি করে আমি আমার দরিদ্র জনগণের জন্য দুবেলা দুমুঠো অন্নের ব্যবস্থা করব, কেমন করে তাদের রােগের ঔষধ জোগাড় করব, কি করে আমার অজ্ঞ-অশিক্ষিত জনগণের মধ্যে শিক্ষার আলােকবর্তিকা পৌঁছে দেব। বহু শােষিত নিপীড়িত এই সােনার বাংলার জনগণকে যদি আমি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেখে যেতে পারি তাহলে আমি আনন্দের সাথে মরতে পারব। দেশের নতুন স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের দীর্ঘ দিনের হৃত অধিকার তিনি পুনরুদ্ধার করেছেন। আমি জনগণকে সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণ আমাকে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য ভােট দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমি আগামী মার্চ মাসে পুনরায় নির্বাচন দিয়েছি। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাকে যদি আবার ক্ষমতায় রাখতে চান, তাহলে আমার দলকে ভােট দেবেন। আর আমাকে যদি ক্ষমতায় রাখতে আপনাদের ইচ্ছা না থাকে তাহলে আমার দলের লােকদের ভােট দেবেন। না। উল্লসিত জনগণ তৎক্ষণাৎ গগনবিদারী শ্লোগানে ফেটে পড়ে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জয় বাংলা’, ‘জয়। মুজিববাদ’ বলে তাঁকে অভিনন্দিত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী আমাদের দেশে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়ে গেছে। দেশকে সম্পূর্ণ শ্মশান ভূমিতে পরিণত করেছে, তাই মরণােন্মুখ জাতিকে বাঁচার জন্য, তাদের জন্য খাদ্য ও অর্থ সংস্থানের জন্যই আমাকে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, আমাকে দেশের খাদ্য ঘাটতি মােকাবেলার জন্য চলতি মাসে সাত কোটি মণেরও অধিক খাদ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। তিনি দেশের কৃষক সমাজকে অধিক খাদ্য ফলানাের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, শুধু খাদ্যই নয় দেশের দুঃখী জনগণের মধ্যে বণ্টনের জন্যও বিদেশ থেকে আমাকে বস্ত্র, ঔষধ ও অর্থ সংগ্রহ করতে হয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, দেশের দরিদ্র জনগণের জন্য বিদেশ থেকে যা কিছু নিয়ে আসেন এক শ্রেণির সমাজ বিরােধীরা তা আত্মসাৎ করে ফেলে। তিনি এদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। যে সমস্ত সমাজ বিরােধী দেশে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নি সংযােগ করে বেড়াচ্ছে তাদের সমূলে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য তিনি জনগণের সহযােগিতা কামনা করেন।
পুলিশ-রক্ষীবাহিনীর প্রতি নির্দেশ: বঙ্গবন্ধু পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীকে দেশের প্রতিটি আনাচেকানাচে গিয়ে এসব চোর ডাকাতদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এসব দুবৃত্তদের অত্যাচারে জনগণ বিদ্রি নিশিযাপন করছে।১৩

রেফারেন্স: ৩ জানুয়ারি ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ