You dont have javascript enabled! Please enable it!

শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হবে

ঢাকা। বাংলাদেশে একটা শোষণমুক্ত সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের উদ্দেশ্যে জনগণের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি ও নেতৃবৃন্দের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করা হবে। এই উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের একটা সাংগঠনিক কমিটি গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতা দেওয়া
হয়েছে। কমিটি ৪টি আদর্শ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য কাজ করে যাবে। দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগ কার্যনির্বাহক কমিটির বৈঠকে মুক্তি অর্জনের পর থেকে দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর অনুষ্ঠিত কার্য নির্বাহী কমিটির এই বৈঠকে কমিটির মোট ৫৪ জন সদস্যের মধ্যে ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে মুজিবনগরে সর্বশেষ বৈঠক হয়। বর্বর পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের দালালরা গত ৯ মাসে লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশের যে বিপর্যয় অবস্থার সৃষ্টি করে গেছে তার পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির জন্য দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পার্টির সাংগঠনিক সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়। আওয়ামী লীগ কার্য নির্বাহক কমিটি পার্টির সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতিকে একটা শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রস্তাব গ্রহণ করে। কমিটির এক প্রস্তাবে সকল স্তরের জনগণকে জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান হয়েছে। প্রস্তাবে সারাদেশে ২৫ ফেব্রুয়ারি হতে জাতির পুনর্গঠন সপ্তাহ পালনের আহ্বান জানান হয়েছে। ইয়াহিয়ার দস্যুবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য নৃশংসতামূলক যেসব অপরাধকার্য সাধন করেছে তার প্রতি গুরুত্ব দেবার জন্য জন্য এবং এইগুলোর পরিকল্পনা প্রণেতাদের উপযুক্ত শাস্তি দানের জন্যও ওয়ার্কিং কমিটি সরকারকে আহ্বান জানান। মুক্তি সংগ্রামে যাহারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারবর্গকে বিশেষ করে বিধবা, অনাথ এবং বর্বরবাহিনী দ্বারা নির্যাতিতা মহিলাদের পুনর্বাসনের সম্ভাব্য সকল রকম ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য কমিটি সরকারকে অনুরোধ জানায়। সভায় বিশ্বের শান্তিপ্রিয় দেশগুলিকে বিশেষ করে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রিক দেশগুলি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে সমর্থন দেওয়ায় ধন্যবাদ জানানো হয়। আওয়ামী লীগ কার্য-নির্বাহ কমিটি পাকিস্তানস্থ বাঙালিদের দূরাবস্থার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সভার প্রস্তাবে তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রচেষ্টা চালানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহ কমিটির বৈঠক পাকিস্তান বাহিনীর দালালদের বিচার ও শাস্তি বিধান এবং যে সব দালাল এখনও ধরা পড়েনি তাদের অবিলম্বে আটকের সুপারিশ করে। বৈঠকে সমাজ বিরোধী ব্যাক্তিদের নির্মূলের উদ্দেশ্যে জনগণের সহযোগিতায় সরকারের সক্রিয় ব্যাবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয় যে, জাতির অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সমাজ বিরোধী ব্যাক্তিরা শান্তি প্রিয় নাগরিকদের হয়রানি ও শোষণ পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। সভায় প্রথমে মাতৃভূমির মুক্তির সংগ্রামে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়। কার্যনির্বাহক কমিটি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের উদ্দেশ্যে গভীর শোক প্রকাশ করে। কার্যনির্বাহক কমিটি জেলা ও মহকুমা আওয়ামী লীগ সদস্য ও সম্পাদকদের প্রতি তাদের স্ব স্ব এলাকার নিহত, আহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় পার্টি সেক্রেটারিয়েটে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে।৯৯

রেফারেন্স: ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!