You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.02.09 | ভুট্টোর কাছে একজন জেনারেলের স্মারকলিপি | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

ভুট্টোর কাছে একজন জেনারেলের স্মারকলিপি

পাকিস্তানে আটকে পরা বাঙালিরা মার্তৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্যে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে জানা গেছে। লে. জেনারেল ওয়াসি উদ্দিন অনুরূপ এক স্মারকলিপিতে দৃঢ়মত প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানবাহিনী যে নির্যাতন চালিয়েছে তাতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি তাঁর এবং অন্য কারো ‘অনুগত’ থাকা সম্ভব নয়। তিনি স্মারকলিপিতে বলেছেন যে, তাঁর এ অভমতকে পাকিস্তান সরকারকে যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে মনে করেন তাহলে তিনি বিচারের সম্মুখীন হতেও প্রস্তুত। বাংলাদেশ সরকার সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম, এ জি, ওসমানি জানান যে, অনুরূপ স্মারকলিপি সম্পর্কে তিনি অবহিত। লন্ডন হয়ে এ সংবাদ তাঁর কাছে পৌছেছে। বাঙালি সামরিক অফিসার ও জওয়ানদের পক্ষে লে. জেনারেল ওয়াসি উদ্দিন স্মারকলিপিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধানকে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে- তাঁদের কাছে এতদিন তা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন তাঁরা সবকিছু জানতে পেরেছে। “সুতরাং তাঁদের পক্ষে আর পাকিস্তান সরকারের প্রতি অনুগত থাকা সম্ভব নয়।” স্মারকলিপিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যেন পাকিস্তান সরকার তাঁদের এ মনোভাবকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মনে করলে তাঁরা বিচারের সম্মুখীন হতে রাজি কিন্তু তবুও পাকিস্তানের আনুগত্য প্রকাশ করতে পারবেন না। এদিকে করাচি থেকে সদ্য একজন দায়িত্বশীল বাঙালি সমাজসেবী জানিয়েছেন যে, পাকিস্তানে আটক পরা প্রতিটি বাঙালি স্বদেশে ফিরে আসতে উন্মুখ। এই সমাজসেবী সাবেক আই, জি ও সাবেক পাকিস্তান পরিবার পরিকল্পনা সমিতির সভাপতি জনাব আলমগীর কবীর। দীর্ঘদিনের তদবীরের পর গত ২৫ জানুয়ারি করাচি ত্যাগের অনুমতি পান এবং সেখান থেকে সরাসরি লন্ডন গমন করেন। লন্ডন থেকে কোলকাতা হয়ে সম্প্রতি তিনি ঢাকা পৌছেছেন। তিনি জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জে. গুল হাসান কয়েকদিন আগে এক বক্তৃতায় সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও জোয়ানদের এ মর্মে আশ্বাস দিয়েছেন যে, যারা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাইবেন তাঁদের ‘সম্মানের সাথে’ ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। প্রেসিডেন্ট ভুট্টো নাকি বলেছেন যে, বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অনুরোধ করলে’ তিনি সেনাবাহিনীর সকল বাঙালিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন এবং এজন্যে ‘কোনো শর্তও আরোপ করবেন না।‘’ জনাব আলমগীর কবির জানিয়েছেন যে, পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালিরা ‘গুরুতর’ কোনো সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার হননি। তবে সবাই দারুণ স্বতন্ত্র রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি অবশ্য ২৫ জানুয়ারির আগের খবরই বলতে পারি।” জনাব কবীর আরো প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তানের বিভিন্ন বাঙালি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীরা খুবই সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কারণ তাঁদের ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।৩৮

রেফারেন্স: ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ