জাতীয় পুনর্গঠনে ওয়াদা করুন- কৃষক ও শ্রমিক সমাজের প্রতি বঙ্গবন্ধু
ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আজ শিল্পশ্রমিকদের সর্বাধিক উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ এবং কৃষকদের জাতীয় পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে, তাঁদের কাজ হলো জনগণের সেবা করা এবং তদানুযায়ী জাতীয় লক্ষ্য হাসিলের জন্য সহায়তা করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আজ এখানে সংবাদপত্রের এক বিবৃতিতে জাতীয় পুনর্গঠন কাজে শ্রমিক শ্রেণীর পক্ষ থেকে চারটি প্রতিশ্রুতিদানের আহ্বান জানান। প্রথমত, শিল্প কারখানাকে চালু রাখার নিমিত্তে শ্রমিকদেরকে তাঁদের স্ব স্ব পদে ফিরে আসার পথে কোনো কিছুকে বাধা মনে না করার জন্যে তিনি আহ্বান জানান। দ্বিতীয়ত, উৎপাদনে তাদেরকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। তৃতীয়ত, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও এর মজুদ দ্রব্যের সম্পদকে রক্ষার জন্যে তাদেরকে অবশ্যই বিশেষ দায়িত্বভার কাঁধে নিতে হবে। চতুর্থত, তিনি শ্রমিকদেরকে বর্তমান অবস্থায় চলতি বেতন ও অন্যবিধ সুবিধা মেনে চলার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বসহকারে বলেন যে, কৃষকদেরকেও অবশ্যই জাতির পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, সমস সময় সরকারী কর্মচারীদের কাজ কর্মের মূল্যায়ন করতে হবে, জাতীয় পুনর্গঠন কাজে তাঁদের অবদান কতটুকু তা যাচাই করার জন্যে। বঙ্গবন্ধু উক্ত বিবৃতিতে বলেন, জনগণের ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে মুক্তির যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এই বিজয়, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র ও মেহনতি মানুষের বিজয়। আজকে আমাদের আরেক যুদ্ধ চালাতে হবে। এ যুদ্ধ হবে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, গৃহহীনতা, ব্যাধী ও অশিক্ষার বিরুদ্ধে। একটা নতুন সমাজ গঠন না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অবশ্যই চলতে থাকবে। এই নতুন সমাজের প্রতিটি শিশু, মহিলা ও মানুষের অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আশ্রয়ের নিশ্চয়তা থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্যে প্রথম শর্ত হলো যে, আমাদের শিল্প কারখানায় অবশ্যই পূর্ণ উৎপাদন চালু করতে হবে। আমাদের জাতীয় পুনর্গঠন কর্মসূচির নিমিত্ত অর্থনৈতিক সাহায্য লাভের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো জাতিই ঋণের সম্পদে সত্যিকারভাবে গড়ে তুলতে পারে না। ইতিহাস হতে আমাদের এই শিক্ষা নেয়া উচিত যে, বৈদেশিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা স্বাধীনতাকে অর্থহীন করে তুলতে পারে। অতএব, আমাদেরকে আমাদের জনশক্তি ও বৈষয়িক সম্পদকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি গ্রহণে অবশ্যই আত্মনিয়োগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এতে আস্থাবান যে, শ্রমিকগণ এই আহবানের কারণ হৃদয়ঙ্গম করবেন। তারা তাদের গ্রামাঞ্চলের ভাইদের অবস্থা জানেন। তারা এও জানেন যে, এক কোটি উদ্বাস্ত রয়েছে, যারা সম্পূর্ণ গৃহহারা অবস্থায় দেশে ফিরে এসেছেন। দেশের মধ্যেও দু’কোটি লোক সম্পূর্ণভাবে বাস্তুহারা, তাও তারা জানেন। দখলবাহিনীর বর্বরতার ফলে আমাদের জনগণের দুঃখ দুর্দশার কথাও তাদের অজানা নয়। তিনি প্রঃসঙ্গত বলেন যে, আমি আমাদের শ্রমিকদের এই আশ্বাস দিচ্ছি যে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মূল লক্ষ্য শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও তাদের কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধান করা হবে। শিল্প কারখানা পরিচালনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তার বিধান রেখে জাতীয়করণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বিবৃতির উপসংহারে বলেন, আমি মনে করি যে, সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়ী হবো এবং এর দ্বারা আমরা ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠা করবো, যার জন্যে লক্ষ লক্ষ আত্মহুতি দিয়েছেন। ৩২
রেফারেন্স: ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ