You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.02.06 | ন্যাপ ও আওয়ামী লীগ এক পার্টি হবে- মওলানা ভাসানী | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

ন্যাপ ও আওয়ামী লীগ এক পার্টি হবে- মওলানা ভাসানী

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অতি শীগগিরই একটি মাত্র সংগঠনে পরিণত হবে। রোববার সন্তোষে অনুষ্ঠিত তাঁর ন্যাপের কার্যনির্বাহী পরিষদের স্বাধীনতা উত্তরকালীন প্রথম বৈঠক উদ্বোধনকালে অশীতিপর মুক্তিসেনানী এ ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারত রত্ন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর বিরোধীতা করা সম্পূর্ণরূপে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। তিনি বলেন, বহু রক্তের বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে। সুতরাং এই স্বাধীনতার মূল্য আমাদের দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নীতি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র । সরকারের এ ঘোষণা বাস্তবায়নের প্রশ্নে ন্যাপের কোন সন্দেহ নেই। এই তিনটি মৌলিক নীতি বাস্তবায়নে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মওলানা সাহেব ও তাঁর দল সকল প্রকার সহযোগিতা করবেন বলেও তিনি ঘোষণা করেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিশ্চিত দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে অবিলম্বে সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ করার জন্য ন্যাপ কর্মী ও সরকারকে সচেষ্ট থাকতে উপদেশ দেন। দেশের ত্রিশ লক্ষ টন খাদ্যশস্য ঘাটতির চাহিদা পূরণ করার জন্য তা অত্যাবশ্যক বলে তিনি মন্তব্য করেন। সরকারের একার পক্ষে এ চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব নয়। জনগণের নৈতিক চরিত্র সুদৃঢ় করে সরকারের সাথে এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করতে তিনি দলীয় কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। এক পর্যায়ে মজলুম জননেতা বলেন, আমাদের জাতীয় পুনর্গঠন এবং সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে বিশ্বের দুয়ারে ধর্ণা দিলে চলবে না। দেশকে গড়ে তোলার মত যথেষ্ঠ প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তি আমাদের রয়েছে, এগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য সরকারকে জনগণের সহযোগিতায় বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিগত স্বাধীনতা আন্দোলন বৈদেশিক রাষ্ট্র সমূহের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মওলানা সাহেব বলেন, চীনের প্রতি আমি এখনও আস্থা হারাইনি। চীন যা করেছে ভুল করেছে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের ব্যাপারে চীন তার নীতি পাল্টিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করে নিবে এবং এদেশের শোষিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে। মওলানা সাহেব প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতীয় জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি চীনকে ভারতের সাথে বিরোধীতার অবসান করতে আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, চীন, ভারত আর বাংলাদেশ যদি পরস্পর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে তাহলে ‘ত্রিদেশীয় শক্তি’ শক্তি হিসেবে আমরা আত্মপ্রকাশ করবো। আফ্রো-এশিয়ায় শোষিত মানুষের মুক্তি আসবে। তিনি সভার প্রারম্ভে স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং এদেশের ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও চিকিৎসক হত্যার তীব্র নিন্দা করেন। এর পূর্বে ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চস সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল মওলানা সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং বাংলাদেশের রিলিফ দ্রব্য বিতরণ নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। ১৪

রেফারেন্স: ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ