You dont have javascript enabled! Please enable it!

কোলকাতায় বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের বৃহত্তম সম্বর্ধনা দেয়া হবে

কোলকাতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পশ্চিমবঙ্গে দুই দিন সফরের জন্য কোলকাতা পৌছলে তাঁকে এমন এক স্মরণীয় সম্বর্ধনা দেয়া হবে, যা কোনো জননেতাকে কখনো দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারত বাংলার জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছে- সেই মিত্র প্রতিবেশী ভারতের মাটিতে প্রধানমন্ত্রী পদার্পন করলে তাঁকে শীর্ষস্থানীয় সরকারি এবং বেসরকারি কর্মচারীরা এবং বিপুল ধ্বনিমুখর জনতা অভিনন্দন জানাবেন। সদলবলে বিমানমন্ত্রীর বিমানটি সাড়ে দশটার কাছাকাছি নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে পৌছবে। এর কয়েক ঘন্টা আগেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে দিল্লি থেকে কোলকাতা আসবেন। বঙ্গবন্ধুকে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর একটি দল গার্ড-অব-অনার প্রদর্শন করবেন। এর সাথে সাথে উভয় দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পরপরই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর দলবল তিনটি হেলিকপ্তারে আরোহণ করবেন এবং বাংলার শরণার্থীদের যেসব শিবিরে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল, তা’ দেখতে ‘লবন হৃদের’ দিকে যাত্রা করবেন। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম বিদেশ সফরে আসছেন। তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীর সাথে বিকেল দু’টো তিনটের মধ্যে রাজভবনে দু’দেশের সামগ্রিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আলোচনা করবেন। বঙ্গবন্ধু বিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভায় ভাষণ দেবেন। কোলকাতা মহানগরীর ইতিহাসে এটাই সম্ভবতঃ সর্বাধিক জনাকীর্ণ জনসমাবেশ হচ্ছে। শ্রীমতি গান্ধীও এ জনসভায় ভাষণ দেবেন। সন্ধায় শ্রীমতি গান্ধী রাজভবনে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে একটি ভোজসভার আয়োজন করবেন। এরপর একটা সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন বঙ্গবন্ধু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্যে শান্তি নিকেতন যাবেন। বঙ্গবন্ধু রাজভবনের কোলকাতা পৌরসভা কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সম্বর্ধনায় যোগদান করবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য বহু সংখ্যক প্রতিনিধি দল এবং গণ্যমান্য ব্যক্তি আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের জনাকীর্ণ রাজধানীতে বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্যে এসে ভিড় জমাচ্ছেন- যে নেতা তাঁর দেশের সাত কোটি মানুষকে বহু বিপদাপদ কাটিয়ে স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌছিয়ে দিয়েছেন।
মোটামুটি হিসেবে মনে হচ্ছে, কেবল কোলকাতা শহরেই এক কোটিরও অধিক সংখ্যক মানুষ বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্যে এবং তাঁর কথা শোনার জন্যে সমবেত হবে। বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে যে বিপুল আয়োজন করা হচ্ছে, তা সম্পন্ন করতে দিনরাত কাজ হচ্ছে । সমগ্র শহরে বহু তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিপুল জনতার স্থান সংকুলান হবে না বলে শহরের আরো ৭টি পার্কে তাদের আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে তাদের কাছে বক্তৃতা রিলে করে শোনানোর ব্যবস্থা করা হবে। কোলকাতায় বঙ্গবন্ধুর আগমন বার্তা এবং তাঁর ভাষণ বাংলাদেশ বেতার রিলে করে শোনাবে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন তা রেকর্ড করবে।৭

রেফারেন্স: ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!