বাংলাদেশ যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা সামলে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে – বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামকালে দখলদারবাহিনীর সংঘটিত ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা দ্রুত সামলে উঠছে। এবং নিশ্চিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করছে। তিনি গত শুক্রবার রাত্রে গণভবনে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘অক্সফাম’ এর প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ আলোচনা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু শিল্প, অর্থনীতি, যোগাযোগ, খাদ্য বিশেষভাবে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসের প্রতি আলোকপাত করেন। তিনি বলেন যে, এই নতুন জাতিকে একেবারে গোড়া হতে কাজ শুরু করতে হয়েছে এবং ধাক্কা সামলে কাজকর্ম চালু করার জন্যে বিপুল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা, লুণ্ঠন, জঘন্যতম মানবিক অপরাধের বিস্ত রিত বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, দখলদারবাহিনী ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছে এবং দুই লক্ষের বেশি নারীকে ধর্ষণ করেছে। তারা বিপুল সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকেও হত্যা করেছে। পাকিস্তানি শাসকদের প্রতি প্রত্যক্ষ কোনো মন্তব্য না করে তিনি অক্সফাম প্রতিনিধিদের বলেন, আপনারা সহজেই বাঙালিদের প্রতিক্রিয়া অনুমান করতে পারেন। তিনি অবশ্য আরো বলেন যে, জাতি হিসেবে বাঙালিরা শান্তিকামী ও ক্ষমাশীল চরিত্রের, তাই কোনোরূপ প্রতিশোধ না নিয়ে শান্তিতে বসবাস করার জন্য তার আহ্বানে তারা সাড়া দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, যারা হত্যা লুণ্ঠন, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার করা হচ্ছে এবং প্রকাশ্য আদালতেই তাদের বিচার হবে। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাদের শাস্তি দেয়া হবে। জাতীয় পুনর্গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তার সরকার কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। দেশের একটানা খাদ্য ঘাটতির উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সরকারের লক্ষ্য। এই প্রসঙ্গে তিনি ৩৫ হাজার শক্তিচালিত পাম্পের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব শক্তিচালিত পাম্প দেশে শীতকালীন শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই ব্যাপারে আরো বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। এই পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের আহ্বান জানান এবং পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন যে, দেশে পরিবার পরিকল্পনাকে জনপ্রিয় করার জন্য যথাযোগ্য শিক্ষা নারী সমাজের ট্রেনিং অপরিহার্য। তিনি উল্লেখ করেন যে, সংবিধানে নারীদের সমান অধিকারের বিধান রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে সেবার মনোভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসবেন, তাদেরকে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে স্বাগত জানানো হবে। তিনি বলেন, জাতি পুনর্গঠনে আমাদের সাহায্য করার জন্য তাদের স্বাগত জানানো হচ্ছে।১১০
রেফারেন্স: ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ