ঢাকায় আন্তর্জাতিক গ্রন্থ মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে – রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী জনগণের মধ্যে জ্ঞানার্জনের তৃষ্ণা বৃদ্ধি এবং পুস্তক পাঠের আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার ঊর্ধ্বে পুস্তুকের সর্বনিম্ন মূল্য ধার্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন যে, পুস্তকের উর্ধ্ব মূল্য সাধারণ মানুষের বই পাঠের আগ্রহের অন্যতম অন্তরায়। এই অন্তরায় দূর করতে না পারলে সাধারণ মানুষের বই পাঠের তথা জ্ঞান আহরণের আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক গ্রন্থ বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গন্থ উৎসব কমিটির উদ্যোগে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে বুধবার বিকালে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী গ্রন্থ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গ্রন্থ উৎসব কমিটির সভাপতি ড. এনামুল হক এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এই গ্রন্থ মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বুলগেরিয়া, জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, গ্রেট বৃটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি ৮টি রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করেছে। সপ্তাহব্যাপী এই গ্রন্থ মেলার সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী বাণী প্রদান করেছেন। অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা আমাদের ঐতিহ্যের জন্য গর্ববোধ করতে পারি। কিন্তু সাংস্কৃতি মনা হওয়া যথেষ্ঠ নয়-তার সাথে মননশীলতারও প্রয়োজন আছে। বুদ্ধি বৃত্তি বিকাশে জনগণের ভূমিকা অনন্য অসাধারণ। রাষ্ট্রপতি শিক্ষাকে গণমুখী করার আন্দোলনের সাথে সাথে শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ সাধনের বাস্তব কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন যে, পুস্তক প্রকাশ, বণ্টন এবং পাঠের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে বিশ্বের নতুন যোগসূত্র স্থাপিত হবে। এবং বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের যে পুরাতন নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তাকে আরো নিবিড়তর করবে। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী নিজের দেশের লেখকদের রচিত বিশেষ করে যেসব গ্রন্থ বাংলাদেশের জাতীয় আশা-আকাংখার প্রতিফলন এবং জাতীয় কৃষ্টি ও মূল্যবোধের স্বকীয়তা সোচ্চার হয়ে ওঠে সেইসব গ্রন্থের পৃষ্ঠপোষকতা করাকে পবিত্র দায়িত্ব বলে গ্রহণ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পূর্বাহ্নে অনুষ্ঠানের এ সব উৎসব কমিটির সভাপতি ড. এনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক সরদার জয়েন উদ্দিন রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভাষণদান করেন। সন্ধ্যায় এক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল, ষ্টপ জেনোসাইড প্রভাত চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখযোগ্য যে, সপ্তাহব্যাপী গ্রন্থ মেলা আগামি ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যহ মেলা দুইটা হতে সাতটা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য খোলা থাকবে।৭৭
রেফারেন্স: ২০ ডিসেম্বর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ