You dont have javascript enabled! Please enable it!

মেহনতি মানুষের জন্য ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করতে না পারলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার ঢাকায় প্রত্যয় দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “গরিব মেহনতি মানুয়ের আত্মত্যাগই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমি মেহনতি মানুষের সাথে বেইমানি করতে পারি না। যদি আমি আমার গরিব মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি দেখে যেতে পারি, যদি দেখে যেতে পারি আমার মানুষ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান পেয়েছে, তবে আমি শান্তিতে মরতে পারবো।” মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী সরকারের অধীনস্ত সরকারি কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে বিকেলে শেরে বাংলা নগরস্থ সাবেক এম, এন, এ হোস্টেলে আয়োজিত এক সম্বর্ধনা সভায় তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও তার মন্ত্রী সভার সদস্য জনাব মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, জনাব এ, এইচ, এম কামারুজ্জামান, সাবেক তথ্য ও বেতার দফতরের ভারপ্রাপ্ত এম, এন, এ জনাব আব্দুল মান্নান, মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল এম, এ, জি, ওসমানী সহ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রী সভার সদস্যবর্গ, সাবেক মুজিবনগর সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রীয় সফরে মস্কোতে গমন করায় এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন নাই। তিনি এই উপলক্ষে একটি বাণী রেখে গেছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি খন্দকার আসাদুজ্জামান। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণে বলেন, এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমার গরিব মানুষ, রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর, শ্রমিক, ছাত্র, মেহনতী মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছেন, জীবন দিয়েছেন। সাদা পোশাকের সাহেবরা দুর্দিনে দুঃসময়ে সর্বদাই দূরে সরে রয়েছেন। আমি এই গরিব মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতার কোনো অর্থ হয় না। মেহনতি মানুষের মৌলিক অভাব সমূহ পূরণ না হলে বহুত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা নিষ্ফল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, নিপিড়ীত ও বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই স্বাধীনতা সগ্রাম হয়েছিল। গরিব মানুষকে দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর নিষ্পেষণে নিঃশেষিত হতে দেয়া যেতে পারে না। ধনী দরিদ্রের ব্যবধান অবশ্যই ঘোচাতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থের প্রশ্নে আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনোদিন আপোষ করিনি। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চরম অসুবিধার মধ্য দিয়েও সরকারি দ্বায়িত্ব পালন করায় মুজিবনগরের কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীনতার পর মুজিবনগরের কর্মচারীদের প্রতি সুবিচার করতে পারিনি। তাদের কষ্ট ও ত্যাগে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এটাই তাদের বড় সাভ না। তিনি বলেন, মুজিব নগরে প্রতিষ্ঠিত সরকারের কর্মচারীগণ তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা জানিয়ে এবং স্বাধীনতা অর্জিত হবে কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে তাদের আত্মীয় প্রিয়জনকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে রেখে মুজিবনগর চলে গিয়েছিলেন এবং সেদিন তাদের ওপর সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির ভাগ্য নির্ভর করেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপর দিকে যেসব অফিসার মুজিবনগরে যায় নি তারা। দখলদারবাহিনীর আমলে ৯ মাস সংগ্রামের সময় পুরোপুরি সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন এবং বেতন পেয়েছেন। তিনি দুঃখ সহকারে আরো বলেন, আশা করা গিয়েছিল স্বাধীনতার পর তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু তাদের যা পাওয়া উচিত ছিল তার চেয়ে বেশি পাওয়া সত্ত্বেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি আরো বলেন, এ বিপ্লবী সরকারের মহানুভবতা যে, এইসব অফিসারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। প্রধানমন্ত্রী দখলদারবাহিনী আমলের এইসব পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী কর্মচারীদের প্রতি কঠোর উচ্চারণ প্রসঙ্গে তাদেরকে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানান। যদি এখনও তারা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করেন তাহলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বজ্র কঠোর কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, আমি একবার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা হতে আর পিছপা হই না। তিনি সরকারি কর্মচারীগণকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং গণবিরোধী কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার উপদেশ দিয়ে বলেন, আমি তাদেরকে জনগণের স্বার্থের বিনিময়ে টাকা বানাবার লালশা সামলাবার জন্য বারবার সতর্ক করেছি। তিনি আরো বলেন, দেশ দুর্নীতিতে ভরে উঠেছে। সমাজ হতে দুর্নীতি দমনের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
জাতীয় চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চরিত্র পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, সুস্থ জাতীয় চরিত্র ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি হতে পারে না। আমরা সোনার বাংলা গঠন করতে চাইলে আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে চরিত্রবান হতে হবে। আমি ৩০ লক্ষ শহীদ এবং স্বাধীনতার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন তাদের জাতির পিতা আমি। কিন্তু আমি দুর্নীতিবাজ ও দেশদ্রোহী ব্যক্তিদের জাতির পিতা হতে ঘৃণা করি।৭৩

রেফারেন্স: ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!