যশাের মুক্ত হওয়ার কাহিনী ক্যান্টনমেন্টের যুদ্ধ
ক্যান্টনমেন্ট বলতে বােঝায় সৈন্যদের জন্য অস্থায়ী আবাসিক এলাকা। যুদ্ধের আগে, এ ধরণের সেনা সমাবেশ করা হয়। বাঙলায় একে আমরা বলতে পারি সেনা শিবির। ভারত ও পাকিস্তানে ক্যান্টনমেন্ট শব্দটা পেয়েছে আলাদা মানে। এখানে ইংরেজি ক্যান্টনমেন্ট শব্দটা প্রয়ােগ করা হয়, বেসামরিক শহর থেকে দু-তিন মাইল দূরে আলাদাভাবে তেরী সামরিক এলাকা বা শহর। এখানে সেনাবাহিনীর লােকেরা থাকে স্থায়ীভাবে। অঞ্চলটি হয় নানাভাবে সুরক্ষিত। বাঙলাদেশে পাকিস্তান সরকারের পাঁচটি ক্যান্টনমেন্ট ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরাণ হল ঢাকা। শহরের কাছে কুরমিটেলা নামক জায়গার ক্যান্টনমেন্ট। ঢাকার পরেই আসে যশাের শহরের কাছে ও কুমিল্লা শহরের কাছে অবস্থিত ক্যান্টনমেন্ট দু’টির কথা। চট্টগ্রাম শহরের কাছেও ক্যান্টনমেন্ট আছে। সব শেষে তৈরী ক্যান্টনমেন্ট হল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট। কিন্তু এই ক্যান্টনমেন্ট পুরােপুরি তৈরী হবার আগেই আরম্ভ হয় বর্তমান যুদ্ধ। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের পরেই যশাের ক্যান্টনমেন্টের গুরুত্ব। এই ক্যান্টনমেন্টে ছিল প্রায় এক ডিভিশন পদাতিক সৈন্য, সাঁজোয়া বাহিনী, পেট্রোল ডিপাে, হাসপাতাল, অস্ত্রগার, সামরিক বিমান অবতরণের জন্য প্রায় এক মাইল লম্বা অবতরণ ক্ষেত্র। গােটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা সুরক্ষিত কংক্রিটের শক্ত বাঙ্কার দিয়ে। এখানে মাটির নীচে আছে অনেক প্রকণ্ঠ, জলাধার, রসদ রাখবার স্থান।
যশাের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সৈন্য পাঠিয়ে সমস্ত খুলনা বিভাগে ও রাজশাহী বিভাগে যুদ্ধ পরিচালনা করা যায়। যশাের ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিণে বেনাপােল-যশাের রােড । উত্তরে চৌগাছা যশাের রােড, পূর্বে ঢাকা রােড ও তার পাশ দিয়ে রেল লাইন। এই রেল লাইন দিয়ে দক্ষিণে যাওয়া যায় খুলনায়। উত্তরে যাওয়া যায়। রাজসাহী বিভাগের বিভিন্ন জায়গায়। এখানে এখন আছে পাঞ্জাবী, বালুচ ও পাঠান রেজিমেন্টের লােক। আগে বেঙ্গল রেজিমেন্টর লােকেরাও এখানে থাকত। কিন্তু এই রেজিমেন্টের অনেক বাঙালীকে মেরে ফেলা হয়েছে। বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র আর কিছু আগেই পালিয়ে এসে যােগ দিয়েছে মুক্তিবাহিনীতে। | ক্যান্টনমেন্টগুলাে তৈরী করা হয়েছিল সৈন্যদের স্থায়ী ঘাঁটি হিসাবে। এখান থেকে সৈন্য, গােলাবারুদ, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়াগাড়ি, গােলন্দাজবাহিনীকে অন্যত্র প্রয়ােজনমত পাঠাতে পারবার জন্য প্রস্তুত থাকত। যশাের ক্যান্টনমেন্ট ছিল উত্তর ও মধ্য বাঙলার মূল পাক সামরিক ঘাঁটি বর্তমানে যশাের ক্যান্টনমেন্ট তিনদিক থেকে আক্রান্ত হওয়ার পর মুক্ত।
জয়বাংলা (১) ১: ৩২
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯