সুন্দরবনের পল্লীতে বঙ্গবন্ধুর সাহায্য বিতরণ
ইনভেস্টিগেটর। সুন্দরবন অঞ্চলের একটি ছোট জেলেপাড়া। বঙ্গবন্ধু এসে নামলেন। প্রিয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে সাড়ি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে গ্রামবাসীরা। বঙ্গবন্ধু কাছে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন তাদের কুশল। প্রিয় নেতার কাছে তারা তুলে ধরল তাদের কয়েকটি জরুরি সমস্যা। খাবার পানির স্বল্পতা, ঔষধপত্রের ঘাটতির সমস্যা। সঙ্গে জেলা কর্মকর্তাকে বঙ্গবন্ধু তক্ষুনী খাবার পানি আর টিকা সরবরাহের বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিলেন। কম্বল বিতরণ করা হলো, গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ কেউ সাহায্যও পেল। দারুণ কষ্টে তাদের দিন কাটছে। সুন্দরবনের এই দূরাঞ্চলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানবাহিনী কি যে নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছিল, জেলেরা তুলে ধরলো তার বীভৎস চিত্র। শুনে বঙ্গবন্ধু বিচলিত। কারো কারো পিঠে হাত রেখে সান্তনা দিলেন। লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিল একটি ছোট ছেলে। সে বলে ফেলল, আজ আমার জীবনের স্বাদ মিটলো আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখলেম। বঙ্গবন্ধু ঘুরে ঘুরে গ্রামবাসীকে দেখলেন। দেখলেন কি করে শুটকি মাছ করা হচ্ছে। জেলেদের ছাপড়াগুলো থেকে বেড়িয়ে বালিয়ারী দিয়ে নেমে আসার সময় কেউ একজন দেখালো অদূরে চরের উপরে এক জোড়া হরিণ-হরিণী চরে বেড়াচ্ছে। চোখে পড়ামাত্রই বঙ্গবন্ধু কাছাকাছি একটি গাছের আড়ালে গিয়ে দু’চোখ ভরে দেখতে লাগলেন হরিণ-হরিণীকে। আরো ভালো করে দেখার জন্যে একটি দূরবীনে চোখ রাখলেন। ডিসেম্বরের স্বচ্ছ নীল আকাশের নিচে রৌদ্রকিরণে আনন্দে খেলা করছে হরিণ-দম্পতি। একটু পরেই বঙ্গবন্ধু আবার যাত্রা শুরু করার জন্যে জাহাজে এসে উঠলেন। স্বচক্ষ্যে উপকূলীয় বাধপ্রকল্প ও আর উপকূলীয় বনজসম্পদ ও বন্য পশু সংরক্ষণের ব্যবস্থা দেখতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূলীয় এলাকা ৩ দিনের সফরে বেড়িয়েছেন। বুধবার রাতে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। আইডব্লিউটিএ-এর, ইনভেস্টিগেটর’ জাহাজে ভ্রমণরত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ, বন ও মৎস্য মন্ত্রী জনাব সোহরাব হোসেন আর তার রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদ। পাজামা, পাঞ্জাবী আর বঙ্গবন্ধু কোর্ট পরিহিত প্রধানমন্ত্রী জাহাজ থেকে একটি স্পীড বোটে চরে দুবল’র তীরে এসে নেমেছিলেন। গ্রামবাসীরা জয় বাংলা’ আর ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। দুবলা থেকে আবার যাত্রা শুরু করার পর কিছুদূর যেয়ে বঙ্গবন্ধু ভালোভাবে সুন্দরবনের ভেতরটা দেখার জন্যে জাহাজ বদলে আর একটি ছোট জাহাজে উঠে একটি খালে প্রবেশ করেন।১
রেফারেন্স: ১ ডিসেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ