You dont have javascript enabled! Please enable it!

যশাের ক্যান্টনমেন্ট দখল  কুমিল্লা ও রংপুর অবরুদ্ধ

যশাের ক্যান্টনমেন্টের পতন হইয়াছে। বাঙলাদেশের শত্রুর এই শক্ত দুর্গ আর অন্যতম বৃহৎ সেনাছাউনি এখন মুক্তিসেনা ও ভারতীয় সৈন্যের মিলিত বাহিনীর করায়ত্ত। গত ৭ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার বৈকালে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যশাের ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করে। মিত্র বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের নিকটবর্তী হওয়ার পূর্বেই সকল পাকসেনা দুর্গ খালি করিয়া পলায়ন করে। যশাের ক্যান্টনমেন্টের পতনের সাথে সাথে পদ্মার পশ্চিমে বাঙলাদেশের প্রায় অর্ধাংশে শত্রুর রক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাঙিয়া পড়িল।  মঙ্গলবার ভােরে ভারতীয় বাহিনী যশাের বিমান বন্দরের কাছে পৌছানাের সাথে সাথেই দখলদার পাক বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট ছাড়িয়া চম্পট দেয়। অসংখ্য বিবরঘাটি, পাকা বাঙ্কার আর কংক্রিটের প্রাকারে প্রাকারে ঘেরা এই দুর্ভেদ্য দুর্গ ছাড়িয়া পাক বাহিনী পড়ি কি মরি খুলনার পথে পলায়ন করে।  মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সরাসরি পশ্চিম দিক হইতে যশাের আক্রমণ না করিয়া নিপুণ রণকৌশলের আশ্রয় লইয়া উত্তরপশ্চিমে চৌঘাছা হইতে আকরা ও চূড়ামণকাটি হইয়া উত্তর ও পূর্ব দিক হইতে ক্যান্টনমেন্ট ঘিরিয়া ফেলিলে পাক বাহিনী প্রতিরােধ না করিয়া এইভাবে দুর্গ ছাড়িয়া দেয়। পলায়নের সময় পাক বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, নিজেদের বিছানাপত্র, রেশন এমনকি কনট্রোল রুমের দেওয়ালজোড়া সামরিক মানচিত্রটিও অক্ষত অবস্থায় ফেলিয়া রাখিয়া যায়।

ক্যান্টনমেন্ট দখলের পর মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যশাের শহরে প্রবেশ করে। শহর ছিল তখন। জনমানব শূন্য, পরিত্যাক্ত। মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর আগমনের সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষ যাহারা বর্বর পাক বাহিনীর অত্যাচারে গ্রাম গ্রামান্তরে চালিয়া গিয়াছিল, তাহারা শহরে ফিরিয়া আসিতে থাকে। মুক্ত যশােরের পথে পথে জনতা আনন্দ উল্লাসে মাতিয়া মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীকে প্রাণঢালা সম্বর্ধনা জানায়। পরিত্যাক্ত বাড়ীঘরে ক্রমেই সকলে ফিরিয়া আসিতেছে ও হাট বাজার চালু হইয়াছে। দখলদার শত্রুরা পলায়নের পথে যে সব সড়ক ও রেলসেতু ধ্বংস করিয়া দিয়াছিল সেগুলি মেরামত করিয়া যােগাযােগ ব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু হইয়াছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান ও মুক্তি বাহিনীর সাথে জনগণ এইসব কাজে হাত লাগাইয়াছে। সিলেট ও কুমিল্লা দখল যশাের ক্যান্টনমেন্ট পতনের দিনেই পূর্ব রণাঙ্গনে মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী সিলেট ও কুমিল্লা শহর শত্রুমুক্ত করে। মিত্র বাহিনী হেলিকপ্টারে সিলেট অবতরণ করে এবং পাক বাহিনীকে শহর হইতে বিতাড়িত করিয়া শালুটিকর বিমানক্ষেত্র অবরােধ করিয়া রাখিয়াছে। কুমিল্লার ময়মনামতি ক্যান্টনমেন্টে কিছু সংখ্যক পাক বাহিনী অবরুদ্ধ হইয়া আছে। উহাদের পালানাের পথ নাই। এদিকে মিত্র বাহিনী দাউদকান্দি পর্যন্ত চলিয়া আসিয়াছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুমুক্ত করিয়া আশুগঞ্জ হইতে মেঘনা পার হইয়া ভৈরবে উপনীত হইয়াছে মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী। দিনাজপুর-রংপুর বাঙলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জসহ সদর শহর ছাড়া দিনাজপুর জেলার সবটাই মুক্ত হইয়াছে। সদর শহর দখলের জন্য এই রিপাের্ট লেখার সময় পর্যন্ত লড়াই চলিতেছে। রংপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্ত হওয়ার পর সৈয়দপুরের সাবক্যান্টনমেন্টে শক্ররা অবরুদ্ধ হইয়া আছে।

মুক্তিযুদ্ধ ১: ২৩]

১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!