মুজিবের আপিল
গতকাল শনিবার, ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ জনাব কায়সার আলীর কোর্টে পল্টন ময়দানে “আপত্তিকর” ভাষণদানকালে অভিযােগে ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আফসার উদ্দিন কর্তৃক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানকে ১৫ মাস কারাদন্ডদানের আদেশের বিরুদ্ধে আনীত আপীল মামলার শুনানী হয়। উভয়পক্ষের উকিলের বক্তব্য শ্রবণের পর অতিরিক্ত দায়রা জজ মামলার রায়দান স্থগিত রাখেন।
১৯৬৬ সালের ২০ শে মার্চ পল্টন ময়দানে উপরােক্ত “আপত্তিকর” বক্তৃতাদানের অভিযােগে শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে দেশরক্ষা আইনের ৪১(৬) ধারা অনুযায়ী এই দেশদ্রোহিতার মামলা আনয়ন করা হইয়াছে। আবেদনকারীর কৌসুলী এডভােকেট জহিরুদ্দিন বলেন, পল্টন ময়দানে প্রদত্ত যে ভাষণের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার যে মামলা আনয়ন করা হইয়াছে, জাতীয় পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে সরকারপক্ষের পরিষদ সদস্য, পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী ও উজিররাও দেশের উভয় অংশের মধ্যে অনুরূপ বৈষম্যের বিষয় উল্লেখ করিয়াছেন। শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দেশদ্রোহিতা মামলার অভিযােগকারী ও অন্যতম সাক্ষী সাক্ষ্যদানকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যৈর ব্যাপারে স্বীকারােক্তি করিয়াছেন।
আবেদনকারী কৌসুলী জনাব আবদুস সালাম খান মাননীয় কোর্টকে জানান, দেশের আইন যদিও প্রায় একই রকম রহিয়াছে, তথাপি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরবর্তী পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনুযায়ী সবকিছু বিচার করিতে হইবে আপত্তিকর সংবাদ ও মন্তব্য প্রকাশ সংক্রান্ত ঢাকা টাইমস-এর মামলার ব্যাপারে ঢাকা। হাইকোর্টের এক রায়ের উল্লেখ করিয়া এডভােকেট সালাম খান বলেন, অনুরূপ। কারণে শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা সামগ্রিকভাবে সহজ ও স্বাধীনভাবে গ্রহণ করিতে হইবে। রাজনৈতিক দল আইন অনুযায়ী দেশে রাজনৈতিক কার্যকলাপ আইনসম্মত। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল ও উহার ৬দফা কর্মসূচীও আইনসম্মত।
জনাব সালাম যুক্তি প্রদর্শন করিয়া বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রত্যেক দলেরই সরকারী কাৰ্য্য ও নীতির সমালােচনা করার অধিকার আছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যহই বিক্ষোভ চলিতেছে। পরিশেষে জনাব সালাম খান বলেন—পল্টনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান যে ভাষণ দেন উহা সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়, বরং পাকিস্তানের মঙ্গলের জন্যই কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করিয়াছেন।
সরকারপক্ষের উকিল জনাব আবদুল আলীম বলেন, পল্টনে প্রদত্ত শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা শ্রবণ করিয়া কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইয়াছে সাক্ষীদের সাক্ষ্য হইতে তাহা প্রকাশ পাইয়াছে।
Reference: আজাদ, ২৯ অক্টোবর, ১৯৬৭