You dont have javascript enabled! Please enable it!

রণাঙ্গনের খবর দুশমনরা পিছু হটিতেছে

সকল রণাঙ্গনে অপরাজেয় মুক্তিবাহিনীর সফল অভিযান অব্যাহত আছে। একের পর এক এলাকা শত্রু কবল মুক্ত হইতেছে। গত সাত দিনে মুক্তিবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসাবে কুষ্টিয়ার জীবন নগর, সিলেটের শমসের নগর, দিনাজপুরের পচাগড় ও ফেণী মহকুমার বিস্তৃত অঞ্চল মুক্ত হইয়াছে যশাের ক্যান্টনমেন্টের তিন দিকে মুক্ত এলাকাগুলিতে মুক্তি বাহিনী তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করিয়াছে এবং ক্যান্টনমেন্টের উপর চাপ অব্যাহত রাখিয়াছে। পাক বাহিনী বারংবার চৌগাছা পুনর্দখলের চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইয়াছে। যশাের-কুষ্টিয়া। কুষ্টিয়ার জীবন নগর শহর দখল করিয়া মুক্তিবাহিনী জীবন নগর হইতে চৌগাছা পর্যন্ত ২২ মাইল এলাকায় দৃঢ় কর্তৃত্ব স্থাপন করিয়াছে। একটি খবরে প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী জীবন নগর হইতে কুষ্টিয়ার কোর্ট চাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হইতেছে। এই সমস্ত এলাকার ছােট ছােট বিক্ষিপ্ত ঘাটিগুলি হইতে পাক বাহিনীকে সরাইয়া লওয়া হইয়াছে। ফলে পাক বাহিনী যশাের ও কুষ্টিয়ার ক্যান্টনমেন্ট ও শহরে আটকা পড়িতেছে।  মুক্তিবাহিনীর বুলেটিনে প্রকাশ, জীবন নগর ছাড়া বগাচরা, সারগা ও নাভারণ মুক্তিবাহিনীর দখলে। ঝিকরগাছার মুক্তিবাহিনী প্রবল চাপ দিয়া যাইতেছে। কুষ্টিয়ার গত মঙ্গলবার মুক্তিবাহিনী সামরিক দিক দিয়া গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম বিলকোনা দখল করিয়া মেহেরপুর ও নাতুদহের মধ্যবর্তী সড়কসেতু উড়াইয়া যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করিয়া দিয়াছে। খুলনা সাতক্ষীরা মহকুমার আরও অনেক অঞ্চল মুক্ত হইয়াছে। গত ২৯শে নভেম্বর খুলনার দক্ষিণ-পশ্চিম খণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্পঘাটি হইতে পাকসেনা বিতাড়িত হইয়াছে। সংলগ্ন কুলিয়া ও অনেকগুলি গ্রাম মুক্ত হইয়াছে। পাক বাহিনী সাতক্ষীরা বাকলা রাস্তায় বিবর ঘাটি হইতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর গােলা নিক্ষেপ করিতেছে।  খুলনা জেলার রাজাপুর, মান্দ্রা রঘুনাথপুর, গাজা, নবতকাটি ইত্যাদি এলাকা হইতে পাক বাহিনী। সম্পূর্ণ বিতাড়িত হইয়াছে। | গত ২৩শে নভেম্বর খুলনার শ্রীরামপুরে শত্রুঘাটি আক্রমণ করিয়া গেরিলা যােদ্ধারা ৬ জন পাকসেনা ও কয়েকজন রাজাকারকে খতম করে। সিলেট মুক্তিবাহিনীর বুলেটিনে জানান হইয়াছে, দীর্ঘদিন কঠিন লড়াইয়ের পর বীর মুক্তিবাহিনী ৩০শে নভেম্বর রাত্রে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ শহর শমসেরনগর দখল করিয়াছে। পাকিস্তানী বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হইয়াছে। একটি খবরে প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী সিলেট শহর হইতে মাত্র ২৫ মাইল দূরে অবস্থান করিতেছে। 

সুনামগঞ্জ এলাকায় মুক্তি বাহিনী ট্যাংরা টিল্লা ও দুয়ারা বাজার দখল করিয়াছে। হানাদার বাহিনী গারা, সেমুটানা, কার্নি, আলিরগাঁও ও গিরিজাপপুর এলাকা হইতে পিছু হটিয়া গিয়াছে। বুলেটিনে আরও প্রকাশ, গত ২৫শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সিলেটের গােয়াইনঘাট-রাধানগর এলাকা হইতে পাক বাহিনীকে হটাইয়া দিয়াছে। ফেণী অভিমুখে মুক্তিবাহিনী। ফেণী মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্ত হইয়াছে। মুক্তিবাহিনী ফেণী শহরের দিকে আগাইয়া যাইতেছে। মুক্তিযােদ্ধারা পরশুরাম ও ছাগল নাইয়া হইতে শত্রুদের হটাইয়া দেওয়ায় পাক বাহিনী এখন ফেণী শহরে অবরুদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে। মুক্তিবাহিনী ফেণী শহর হইতে মাত্র সাড়ে তিন মাইল দূরবর্তী বন্ধুয়া স্টেশনে শক্ত বাংকার করিয়া পাকাপাকিভাবে অবস্থান নিয়াছে।  আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাইয়াছেন, গত ১৮ই নভেম্বর নােয়াখালির রায়পুরায় গেরিলারা একটি শক্ত ঘাটির উপর অতর্কিতে আক্রমণ করিয়া ৪ জন পাকসেনা ও ৫ জন রাজাকারকে খতম করে ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র দখল করে। ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহের কিশােরগঞ্জ মহকুমা ও টাঙ্গাইল জেলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল মুক্ত করিয়া মুক্তিবাহিনী শহর  দুইটিকে ঘিরিয়া আছে। মুক্তিবাহিনীর বুলেটিনে প্রকাশ, মির্জাপুর-টাঙ্গাইল সড়ক মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের ৬টি সেতু গেরিলারা বিধ্বস্ত করিয়া দিয়াছে। ময়মনসিংহের কমলপুর এলাকায় মুক্তিসেনারা পাক বাহিনীর উপরে চাপ দিয়া যাইতেছে।  গত ২৯শে নভেম্বর বরখাই এলাকায় মুক্তিসেনারা ১২ জন শত্রুসেনাকে খতম করে। এখানে ২ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন।  ২২শে নভেম্বর নেত্রকোনা মহকুমা শহরে হানা দিয়া গেরিলারা ৬ জন আধা-সামরিক শত্রুসেনা খতম করে। ১৮ই নভেম্বর বক্সগঞ্জের কাছে মাঝগেদায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ১৭জন শত্রুসেনা খতম ও ৯ জন আহত হয়।

কুমিল্লা গত কয়েকদিনে বীর মুক্তি সেনারা কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, জগন্নাথ দীঘি, দত্তরসর—এই তিনটি স্থানে পাক বাহিনীর ঘাটিগুলি দখল করিয়া নিয়াছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়ার রেলপথে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন মুকুন্দপুরে দখল লইয়া উভয়পক্ষে তীব্র সংঘর্ষ চলিতেছে।  গত ২৫শে নভেম্বর এই জেলায় কাইদপুর, চৌরা ও কাশিমপুরের কয়েকটি সংঘর্ষে ৮ জন। পাকসেনা খতম হয়। এইরূপ আরও কয়েকটি সংঘর্ষে লক্ষান্ধরে ৭ জন, কাইউমপুরে ৬ জন, গত ১৭ই নভেম্বর মৈনপুরে একজন অফিসারসহ ১৩ জন পাকসেনা নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। দিনাজপুর-রংপুর গত ২৫শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পচাগড় শহর দখল করিয়াছে। শেষ সংবাদে জানা গিয়াছে, পচাগড়ের ১০ মাইল দক্ষিণে বােদা দখল করিয়া মুক্তিবাহিনী মহকুমা সদর ঠাকুরগার দিকে আগাইয়া যাইতেছে। মুক্তিবাহিনী লালমণিরহাট শহর ঘিরিয়া রাখিয়াছে এবং ধল্লা নদীর উত্তর তীরে শক্তি সমাবেশ করিয়া কুড়িগ্রাম অভিমুখে যাইবার প্রস্তুতি নিতেছে। চট্টগ্রাম স্বাধীন বাঙলা বেতারকেন্দ্রের খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রামে বীর মুক্তিবাহিনী ফটিকছড়ি, রাউজান ও আনােয়ারা থানা দখল করিয়াছে এবং সীতাকুন্ডু ও মীরেশ্বরাই থানায় লড়াই চালাইতেছে। বরিশাল আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধির খবর, গত ১৪ই নভেম্বর বানারিপাড়া থানা আক্রমণ করিয়া গেরিলারা ৪৮ জনপাক সেনা ও রাজাকারকে খতম করে। ১৮ জন আত্মসমর্পণ করে।

মুক্তিযুদ্ধ ১: ২

২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!