সংবিধানে কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের মুক্তির নিশ্চয়তা রয়েছে
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আবদুল মালেক উকিল মঙ্গলবার অধিবেশনে খসড়া সংবিধানের সমর্থনে আলোচনায় অংশগ্রহণকালে বলেন যে, এই খসড়া সংবিধানে কৃষক-শ্রমিক তথা মেহনতী মানুষের মুক্তির নিশ্চয়তা রয়েছে। এবং এজন্য জাতি গর্বিত। সংবিধানের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন যে, এ খসড়া সংবিধানে আদমজী বালিকাদের কথা না, বাংলাদেশে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের কথা রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, খসড়া সংবিধানের ওপর সাধারণ আলোচনার দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আবদুল মালেক উকিল। সকালে মাননীয় স্পীকার জনাব মুহাম্মাদুল্লাহর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হলে পরিষদের একমাত্র বিরোধী সদস্য শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত খসড়া সংবিধানের ওপর সাধারণ আলোচনার সতপাত করেন। শ্রী সেনগুপ্ত তার দীর্ঘ ভাষণে খসড়া সংবিধানের কঠোর সমালোচনা করেন। খসড়া সংবিধান সম্পর্কে জনমত যাচাইয়ের জন্য তার পূর্ব প্রস্তাবের পুনরুল্লেখ প্রসঙ্গে তিনি সংবিধানের কতিপয় অনুচ্ছেদকে সাবেক পাকিস্তানি আমলের ১৯৫৬ এবং ১৯৬২ সালের আইয়ুব শাসনতন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তৃতার ওপর পরিষদের অধিবেশন ১৫ মিনিটের জন্য মুলতবী ঘোষণা করা হয়। মুলতবী অধিবেশন পুনরায় শুরু হলে মাননীয় ডেপুটি স্পীকার জনাব মোহাম্মদ বয়তুল্লা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। খসড়া সংবিধানের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জনাব আসাদুজ্জামান খান (কিশোরগঞ্জ) ছিলেন তৃতীয় বক্তা। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আবদুল মালেক উকিল তার বক্তব্য পেশের প্রারম্ভে বলেন যে, জীবনে এই প্রথম তিনি পরিষদে সরকারের পক্ষে বক্তৃতা করছেন। তাতে তার কোনো গ্লানি নাই। কারণ, তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আজীবন যে আদর্শের জন্য সংগ্রাম করছেন, আজ সেই আদর্শের ভিত্তিতে রচিত একটি সংবিধানের সমর্থনেই ভাষণ দিচ্ছেন।
খসড়া সংবিধানের সমর্থনে ভাষণদানকালে জনাব আবদুল মালেক উকিল বাংলার মুক্তি সনদ ৬ দফার বিরুদ্ধে জঙ্গী শাহীর সাথে হাত মিলিয়ে এদেশের একশ্রেণির অতি প্রগতিবাদী রাজনৈতিক কর্মীর চক্রান্তের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগ প্রতিক্রিয়াশীলদের চেয়ে অতি প্রগতিবাদীদের নিকট হতে বেশি বাধা পেয়েছিল। এসব অতি প্রগতিবাদীরা মুখে মুখে সমাজতন্ত্র বলবে, আবার আইয়ুবের গলায়ও মালা দিবে। সেদিন আমরা এমন সমাজতন্ত্রী চাই নাই। তিনি আরও বলেন, এদের কেউ কেউ গত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে থেকে ভারতের নুন ভাত খেয়ে ইদানীং ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মাঠে নেমেছে। এদের পেটে ভারতের ডাল ভাত এখনও আছে। কি করে মানুষ এত তাড়াতাড়ি এমন নিমকহারাম ও নিলর্জ হতে পারে, তা ভেবে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।৯৯
রেফারেন্স: ২৪ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ