শেখ মুজিবের জামিন লাভ
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান গতকাল (সােমবার) অপরাহ্ন তিনটার দিকে ময়মনসিংহের দায়রা জজ কর্তৃক জামিনে মুক্তি লাভের পর সন্ধ্যা প্রায় ৭টায় মােটরগাড়িযােগে ঢাকা উপস্থিত হন। তাঁহার জামিন লাভের সংবাদ পাইয়া পূর্ব হইতেই তেজগাঁও ফার্মগেটে বিপুল জনতা তাহাকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য সমবেত হয়। শেখ মুজিবের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে তুমুল হর্ষধ্বনিতে জনতা ও কর্মীগণ তাঁহাকে অভিনন্দন জানায় এবং বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করে।
আওয়ামী লীগ নেতা সমবেত জনতাকে লক্ষ্য করিয়া ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার আহ্বান জানান। ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ কর্তৃক জামিন মঞ্জুর করার পর শেখ মুজিব গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় মােটরগাড়িযােগে ময়মনসিংহ হইতে ঢাকা রওয়ানা হন। জামিনপ্রাপ্তির খবরে ঢাকায় বিপুল সাড়া পড়িয়া যায়। জনতা, কর্মী ও নেতৃবৃন্দ বিকাল ৫টা হইতে ফার্মগেটে শেখ মুজিবের আগমন প্রতীক্ষায় রাস্তার দুইপার্শ্বে ফুটপাতে এবং রাস্তার মধ্যবর্তী আইল্যান্ডে অপেক্ষা করিতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে শেখ মুজিবকে লইয়া মােটরগাড়িটি ফার্মগেটে পৌছিলে বিরাট জনতা উল্লাসে ফাটিয়া পড়ে। তাহারা নেতাকে বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করে। কর্মী ও জনতার সম্বর্ধনার জবাবদান প্রসঙ্গে শেখ মুজিব বলেন : অত্যাচার-উৎপীড়ন দিয়া আমাদের দমাইয়া দেওয়া যাইবে না। ৬-দফা আদায়ের সংগ্রাম আমাদের চলিতেই থাকিবে। এই ৬-দফা আদায়ের জন্য তিনি জনসাধারণকে দেশব্যাপী দুর্বার গণআন্দোলন গড়িয়া তুলিতে আহ্বান জানান। শেখ সাহেব ৬-দফাকে এদেশের মানুষের মুক্তির সনদ বলিয়া অভিহিত করিয়া বলেন যে, দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি এই ৬-দফার উপর নির্ভর করিতেছে। কয়েকদিন হাজতবাসের কথা উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন যে, জনতার দাবী আদায়ের জন্য সারাজীবন তিনি জেলে থাকিতে রাজি আছেন। শেখ সাহেবের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন আহমদ, প্রচার সম্পাদক জনাব আবদুল মােমেন, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব হাতেম আলী তালুকদার প্রমুখ ঢাকা আসেন। ফার্মগেটে অন্যান্যের মধ্যে জনাব জহিরুদ্দীন, হাফেজ হাবিবুর রহমান, জনাব মােহাম্মদ উল্লাহ, জনাব আবদুল মালেক উকিল এম, পি এ, জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী, খােন্দকার মােশতাক আহমদ, জনাব ওবায়দুর রহমান, হাফেজ মূসা, গাজী গােলাম মােস্তফা প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মী শেখ মুজিবকে অভর্থনা জানান।
Reference: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ এপ্রিল ১৯৬৬