শেখ মুজিব জামিনে মুক্তিদান
গত শুক্রবার সিলেটের মহকুমা হাকিমের আদালতে জনাব শেখ মুজিবর রহমানের জামিনের আবেদন বাতিল হওয়ার পর গতকল্য (শনিবার) সেশন জজ তাঁহার জামিন মঞ্জুর করিলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত হইতে তাঁহার আর নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব হয় নাই। সিলেটের কারাগার হইতেই ময়মনসিংহের এক গ্রেফতারী পরােয়ানাবলে পুলিস শেখ সাহেবকে পুনরায় গ্রেফতার করিয়া বেলা ২টার দিকে। এক নাটকীয় পরিবেশে জেলগেটে সমবেত জনতার প্রবল বিক্ষোভধ্বনির মধ্যে তাঁহাকে সরাসরি ষ্টেশনে লইয়া যায় এবং সেশনজজের আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন। জামিনের আবেদন পেশের প্রস্তুতিপর্বেই পুলিশ তাঁহাকে লইয়া আখাউড়াগামী ট্রেনযােগে ময়মনসিংহের পথে পাড়ি দেয়। স্থানীয় মহলের মতে ট্রেনখানি নির্ধারিত সময়ের (২-৩০ মিঃ) ১৫ মিনিট আগে বেলা সােয়া দুইটায় সিলেট ত্যাগ করে। ময়মনসিংহ হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে যে, সেখানে অদ্য সকালেই মহকুমা হাকিমের আদালতে শেখ সাহেবের জামিনের আবেদন পেশ করা হইবে। প্রকাশ, সেখানে তাঁহার জামিন মিলিলেও শেষ পর্যন্ত সম্ভবতঃ তাঁহার ঢাকা আগমন ও অদ্যকার পল্টন ময়দানের জনসভায় যােগদান করা সম্ভব হইবে না, কারণ প্রদেশের অন্য কয়েকটি স্থানেও নাকি তাঁহার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করা হইয়াছে এবং তাহারই কোনও একটি পরােয়ানাবলে ময়মনসিংহে তাহাকে হয়তাে পুনরায় গ্রেফতার করিয়া সংশ্লিষ্ট স্থানে চালান দেওয়া হইবে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, ঢাকা হইতে প্রেরিত কৌসুলী এডভােকেট এম. এ. আজীজ ও সিলেটের বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব আবদুল হাই গতকল্য সিলেটের সেশন জজের আদালতে শেখ সাহেবের পক্ষে জামিনের আবেদন পেশ করিলে সেশন জজ উক্ত আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিনপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কোর্ট প্রাঙ্গনে সমাবেত বিপুল জনতা শেখ সাহেবকে সম্বর্ধনা জনাইবার জন্য সরাসরি জেলগেটে গিয়া সমবেত হয়। দেখিতে দেখিতে জেলগেটে প্রায় ৬/৭ হাজার লােকের সমাগম হয়। ফুল ও মালা হাতে জেলগেটে দাঁড়াইয়া অধীর আগ্রহে তাঁহারা জেল হইতে শেখ সাহেবের নির্গমনের প্রতীক্ষা করিতে এবং বিভিন্ন ধ্বনি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁহাদের জানানাে হয় যে, ময়মনসিংহের একটি মামলার আসামী হিসাবে শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে আর একটি গ্রেফতারী পরােয়ানা থাকায় তাঁহাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হইবে। এই খবর প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ দ্রুত পুনরায় আদালতে ফিরিয়া গিয়া মহকুমা হাকিমের নিকট শেখ সাহেবের পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুরের আবেদন জানান। সদাশয় মহকুমা হাকিম উক্ত আবেদন নামঞ্জুর করিয়া ‘পরবর্তী ট্রেনেই’ আসামীকে ময়মনসিংহ লইয়া যাবার নির্দেশ দেন। অতঃপর শেখ সাহেবের কৌসুলীবৃন্দ সেশন জজের আদালতে জামিনের আবেদন পেশের প্রস্তুতি করিবার কালে খবর পান যে, পুলিস নাটকীয়ভাবে শেখ সাহেবকে ময়মনসিংহ লইয়া যাইবার জন্য জেলখানা হইতে সরাসরি সিলেট ষ্টেশনে লইয়া গিয়াছে। এই খবর পাইয়া স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ষ্টেশনে রওয়ানা হইয়া যান এবং ২ টা ২০ মিনিটে ষ্টেশনে গিয়া শুনিতে পান যে, শেখ সাহেবকে লইয়া ট্রেনখানি ১৫ মিনিট আগে অর্থাৎ বেলা ২টা ১৫ মিনিটে (নির্ধারিত সময় ২-৩০ মিনিট) আখাউড়া রওনা হইয়া গিয়াছে।
এদিকে, সিলেটের মামলা সম্পর্কে সেশনজজের আদালতে শেখ মুজিবের গতকল্যকার জামিনের আবেদনের ফলাফল জানিবার জন্য ঢাকা শহর ছাড়াও প্রদেশের বিভন্ন অংশ হইতে অত্র অফিসে সারাদিন ধরিয়া অনবরত টেলিফোন আসিতে থাকে। কিন্তু, সিলেটের মামলায় জামিনপ্রাপ্তির পর ময়মনসিংহের অপর এক মামলায় তাঁহার গ্রেফতারের সংবাদ শুনিয়া আগ্রহ ব্যাকুল প্রতিটি কণ্ঠেই অপরিসীম বিস্ময়ের সুর ফুটিয়া উঠে। এবং বলিতে গেলে প্রায় প্রত্যেকেই শেখ সাহেবের এই হয়রানিকে‘অনন্য সাধারণ বলিয়া অভিহিত করেন।
Reference: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ এপ্রিল ১৯৬৬