You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবিধানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশের নিশ্চয়তা রয়েছে

যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মনসুর আলী বলেন যে, বাংলাদেশের সংবিধান অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতিকে সম্মান এবং গৌরবজনক আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। গণতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এ খসড়া সংবিধান প্রণীত হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রী মনসুর আলী গতকাল শুক্রবার গণপরিষদের খসড়া সংবিধানের ওপর সাধারণ আলোচনাকালে খসড়া সংবিধানের সমর্থনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, খসড়া সংবিধানটি জনমত যাচাইয়ের জন্য ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রচারের দাবিতে পরিষদে একমাত্র বিরোধী সদস্য শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গত বৃহস্পতিবার যে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন, গতকাল তা পরিষদে বাতিল হয়ে যায়। শ্রী সেনগুপ্তের এই প্রস্তাবটি বাতিল হওয়ায় যোগাযোগ মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে খসড়া সংবিধানের ওপর সাধারণ আলোচনার সূত্রপাত করেন। জনাব মনসুর আলী তার ভাষণে বলেন, যে চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে খসড়া সংবিধান রচিত হয়েছে তা শুধু আওয়ামী লীগের একার নয়। সমস্ত জাতি এই মূলনীতিকে দেশের সংবিধানে প্রতিফলিত করার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি আরো বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি এবং বিকাশের জন্য যে সংবিধান দরকার এই খসড়া সংবিধানে তার নিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের হাতে হাত রেখে পূর্ণ বিকাশের দিকে অগ্রসর হবে। তিনি বলেন, যে সমাজতন্ত্র জোর করে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা জনসাধারণের সমর্থন লাভ করতে পারে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে যদি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়, তাহলে প্রকৃত সমাজতন্ত্র হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মানসিকতা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এক নতুন ধরনের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমেই তা সম্ভব। তিনি বলেন, গণতন্ত্রই বাংলাদেশের জনগণের অন্যতম আদর্শ এবং একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার জন্যই লক্ষ লক্ষ মানুষ সুদীর্ঘ কাল ত্যাগ তিতীক্ষা করেছেন। জনাব মনসুর আলী খসড়া সংবিধানের বিভিন্ন অধ্যায় এবং অনুচ্ছেদের সাধারণ আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন যে, এ সংবিধানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুচিহ্নিত ব্যবস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে শাসন বিভাগের সম্পূর্ণ উর্ধ্বে রাখা হয়েছে। জনাব মনসুর আলী খসড়া সংবিধানে চারটি মূলনীতি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ইতিহাস বর্ণনা করেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, পরবর্তী কালে ছয় দফা, এগারো দফা আন্দোলন এবং কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ইতিহাস বর্ণনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভাষা, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক ভাবধারার ভিত্তিতে পৃথক সত্ত্বার জন্য তথা একটি পৃথক জাতীয় সত্ত্বার জন্য সগ্রাম করেছেন। এ জাতীয়তাবাদ আমাদের সংবিধানে প্রতিফলিত হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সংবিধান কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপের দলিল নয়। এটা একটি জাতির পবিত্র দলিল-যা জাতিকে যুগ যুগ ধরে শান্তি এবং স্থায়ী রাজনৈতিক পদ্ধতির পথ প্রদর্শন করবে।
এ সংবিধান বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের জনগণকে গৌরবের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে একটি খসড়া সংবিধান রচনা করার জন্য খসড়া সংবিধান রচনার কমিটির চেয়ারম্যান আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এবং কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান। বাঙালি জাতির জীবনে প্রাণ সঞ্চার এবং একটি পৃথক জাতি হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জন্য তিনি জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে শাহাদত বরণকারী শহীদানের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া অপর চারজন সদস্যও সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।৮৪

রেফারেন্স: ২০ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!