খসড়া সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের নীতিমালার এই চতুর্বিধ স্তম্ভ সংবিধানে প্রস্তাবনার বুনিয়াদরূপে গৃহীত হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শোষণমুক্ত সমাজবাদী সমাজ বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের কার্যকরী লক্ষ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আইনের শাসন, মৌলিক মানবিক অধিকার, স্বাধীনতা, সাম্য ও সুবিচার সকল নাগরিকের জন্য সুনিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এককেন্দ্রিক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে অভিহিত হবে।
জাতীয়তা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এই চতুর্বিধ নীতিমালার আলোকে দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে এবং দেশের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তা অনুসৃত হবে। তবে এই নীতিগুলি আদালতের মাধ্যমে কার্যকরী করা যাবে না। সকল প্রকার শোষণের অবসান ঘটানোর জন্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সকল নাগরিকের জন্য ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। সকল ধর্মের সাম্প্রদায়িকতা, বিশেষ কোনো ধর্মের জন্য রাজনৈতিক সুবিধা এবং ধর্মীয় কারণে বৈষম্য সৃষ্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিছুটা সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে উৎপাদন যন নিয়ন্ত্রণের মালিকানা জনগণের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা নাগরিকদের এইসব বুনিয়াদী প্রয়োজন, পরিপূরণ রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব বলে বিবেচিত হবে। অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং দেশের সকল এলাকায় একই হারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহীত হবে। শাসন বিভাগ হতে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের নিশ্চয়তা থাকবে। জনগণের সংস্কৃতি, উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হবে। সকল নাগরিকই আইনের চোখে সমান এবং সকলেই আইনের বিচারে সমান রক্ষাকবচ অধিকারী হবেন। ধর্ম, গোত্র, বর্ণ এবং জন্ম নির্বিশেষে রাষ্ট্র কারো প্রতি বৈষম্য মূলক আচরণ প্রদর্শন করবে না। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সাথে সমান অধিকার ভোগ করবে। চিন্তা গঠনের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখার অধিকার সংবিধানে স্বীকৃতি লাভ করেছে।৫০
রেফারেন্স: ১২ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ