You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.10.09 | পার্লামেন্টারী পার্টির উদ্বোধনী অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

পার্লামেন্টারী পার্টির উদ্বোধনী অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন যে, সংবিধানে বাংলাদেশের আপামর মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষাই মূর্ত হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন যে, গত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দেশবাসীর নিকট যে নির্বাচনী কর্মসূচি পেশ করেছিল দেশের সংবিধানে তার প্রতিফলন ঘটবে। দেশের খসড়া সংবিধান বিবেচনার উদ্দেশ্যে সোমবার সকালে কারিগরি মিলনায়তনে আহুত আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারী পার্টির দুইদিনব্যাপী বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। উল্লেখযোগ্য যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ ও পার্লামেন্টারী পার্টিরও নেতা। সকালে তার সভাপতিত্বে পার্লামেন্টারী পার্টির দুই দিনব্যাপী বৈঠক কারীগরি মিলনায়তনে রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুরু হয়েছে। বৈঠকে পার্লামেন্টারী মোট ৪০০ সদস্যের মধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক সদস্য যোগদান করেছিলেন বলে জানানো হয়। উল্লেখযোগ্য যে, উদ্বোধনী অধিবেশন সমাপ্তির পর পার্টির চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বাহিরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের নিকট বৈঠকে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং বৈঠকের কার্যবিবরণী ব্যাখ্যা করেন। পাকিস্তানি দাসত্বের শৃঙ্খলা মোচনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের নিগৃহীত, নিপীড়িত, বঞ্ছিত মানুষের গণতান্ত্রিক তথা মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ যে দীর্ঘ নিরবিচ্ছিন্ন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং ত্যাগ তিতীক্ষা স্বীকার করেছে তার উল্লেখ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ১০ মাসে দেশবাসীকে সংবিধান দানের বলিষ্ঠ ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে আওয়ামী লীগ এক গৌরবজ্জ্বল সাফল্যেরই সাক্ষ্য বহন করে। তিনি আরো বলেন যে, সশস্ত্র বিপ্লবের পর মাত্র ১০ মাসের মধ্যে দেশবাসীকে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান দেয়ার এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নাই। গণপরিষদের সদস্যগণ দেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি বলে উল্লেখ প্রসঙ্গে তিনি গণপরিষদের অধিবেশন মুলতবীর পর সদস্যগণকে তাদের নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সাথে মিলে তাদের সেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনারা জনগণের প্রতিনিধি ক্ষমতায় থাকতে পারেন কিন্তু জনগণের সেবা না করলে ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না। একথা মনে রেখে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অনেক দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছেন। তাদের দুঃখ দুর্দশার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কোনো কোনো মহল কর্তৃক সরকারের সমালোচনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বলেন, সরকারের সমালোচনা হয় এটা স্বাভাবিক নিয়ম এবং এটা হবেই। তবে সেই সমালোচনা মোকাবেলা করার মতো সাহস সরকারের থাকা উচিত। বঙ্গবন্ধু দীপ্ত কণ্ঠে সমালোচনা মোকাবেলা করার সততা ও ক্ষমতা আমার সরকারের আছে। তিনি আরো বলেন যে, দেশে শীঘ্রই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ লাভ করবেন।৩২

রেফারেন্স: ৯ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ