You dont have javascript enabled! Please enable it! 1981.05.01 | ‘গােলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’-প্রতিক্রিয়া | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১ মে ১৯৮১ - সংগ্রামের নোটবুক

‘গােলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’-প্রতিক্রিয়া | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১ মে ১৯৮১

জাতি বিচিত্রার কাছে ঋণী হয়ে গেলাে

‘গােলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’ প্রচ্ছদ কাহিনীর জন্য বিচিত্রাকে ধন্যবাদ। বাঙালী জাতি তথা মুসলমানের দুশমন জামাতের স্বরূপ উদ্ঘাটনে বিচিত্রা যে সময়ােপযােগী ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে তার জন্যে দুঃসাহসিক এই পত্রিকার কাছে বাঙালী জাতি চিরদিন ঋণী হয়ে থাকবে।
অত্যন্ত তীক্ষ্মদৃষ্টি নিয়ে অবলােকন করলে দেখা যাবে ইসলামের চিরশত্রু, ইহুদী জাতি এবং মওদুদীর জাতের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিশেষ করে ধনতান্ত্রিক ইহুদীদের অর্থানুকুল্যে বিকৃত চিন্তাধারার দিশারী তথাকথিত চিন্তাবিদ মওদুদীকে দিয়ে এ জঘন্য দলটির জন্ম দেয়া হয়েছে। এ দলের কাজই হচ্ছে মুসলমান ধর্মভীরুদের ধর্মান্ধ করে ইসলামের ক্ষতি সাধন করা । মূলতঃ দেশগুলােতে হচ্ছেও তাই (যেসব দেশে জামাতের সংগঠন রয়েছে)। এরা অত্যন্ত কৌশলে পাকিস্তান ভেঙেছে, পাকিস্তানের আগে তার জন্মের বিরােধীতা করেছে যেমনটি করেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধচলাকালে ইহুদীদের টাকায় পরিচালিত এ দলটির আর্থিক বুনিয়াদ এখন আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে। কারণ রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী সৌদি আরব (ইসলামে বাদশাহী সিস্টেম হারাম, যদি তা বৈধ হতে, তাহলে রসুলে খােদা (দঃ) সবচেয়ে বড় বাদশাহ হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাে চরম দারিদ্রতার মধ্যে জীবন যাপন করেছেন এবং অনুসারীদেরকে তা শিক্ষা দিয়েছেন) মুসলমানরে বােকা বানিয়ে রাখার জন্যে তাদের বাদশাহীর স্বার্থে ইহুদীদের মতাে জামাতকে অঢেল অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। বিদেশী টাকার বলিয়ান হয়ে বাঙালী জাতির চরম শত্রু জামাতীরা এখন ধর্মের নামে মুক্তিযােদ্ধাদের সম্পর্ণেরূপে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পরাজিত শত্রুরা এখন প্রতিশােধ নিতে উদ্ধত হয়েছে। কাড়ি কাড়ি বিদেশী অর্থে পুষ্ট হয়ে ওরা আবার ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করতে দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
বিচিত্রায় তাদের জন্য তৎপরতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে দেশ প্রেমিক যে কোন ব্যক্তিই শিহরিত না হয়ে পারেন না। প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, দেশে বিদেশে এসব ধুরন্ধর জামাতিরা এখন পাকাপােক্তভাবে আসন গেড়ে বসেছে। প্রেস, প্রকাশনী, সংবাদপত্র ও গুন্ডাবাহিনীর মাধ্যমে ওরা বাঙালী জাতিকে সর্বশ্রান্ত করতে চায়। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। তারা আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল—অন্য কারাে ওপর নয়। কারণ আমাদের ভাগ্য আমাদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে। কেননা দেশ স্বাধীন করেছি আমরা। আল্লাহ আমাদের দেশ দিয়েছেন, হেফাজতও করবেন তিনি। কোন দেশের প্রভাবে জামাতী দেশদ্রোহীদের নাগরিকত্ব দেয়া কোন অবস্থাতেই সমীচীন হবে না। সময় থাকতে ফ্যাসিবাদী জামাতেব অশুভ তৎপরতা বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশী অর্থে ওদের গণহত্যা করতে আর দেয়া যাবে না।
আমাদের দাবী হচ্ছে, অবিলম্বে জামাতকে বেআইনী ঘােষণা করতে হবে এবং তাদের সকল অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে অশুভ তৎপরতা চালনা বন্ধ করতে হবে। এর জন্যে কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলেও আপত্তি করার কিছু নেই। তাছাড়া অন্যের অর্থে রক্তচোষাদের পােষা যে কোন দেশের স্বার্বভৌমত্ব হানিকর।
সরকারের প্রতি আমাদের দাবী, বিচিত্রার রিপাের্টের ওপর ভিত্তি করে জামাতীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন।
মৌলানা আলী আহমদ
ছােবহানীয়া মাদ্রাসা, ঢাকা।

সাহসী প্রয়াস
বিচিত্রা ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত করলাে সে জনগণের অকৃত্রিম বন্ধু ও মুখপাত্র হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বলছিলাম ১৭ এপ্রিল, ৮১ সংখ্যার কথা’। উক্ত সংখ্যায় নানা অসুবিধা ও প্রতিকুলতা সত্তেও আপনারা গােলাম আযম এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের কীর্তিকলাপের যে বস্ত নিষ্ঠ চিত্র তুলে ধরেছেন নিঃসন্দেহে তা একটি সাহসী প্রয়াস।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও এটি একটি অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন। তার কারণ আলােচ্য প্রতিবেদনে গোলাম আযমের সহায়তাকারী স্বাধীনতা বিরােধী আর একটি চক্রের অপতৎপরতা সম্বন্ধে কিছুই উল্লেখ নেই।
সবশেষে, তবুও বলবাে নানা বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে প্রতিবেদকগণ যেটুকু সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তাই-ই যথেষ্ট এবং অবশ্যই তা প্রশংসার্হ।
প্রদীপ কুমার দাশ
আযম খান কমার্স কলেজ, খুলনা।

বিচিত্রাকে ধন্যবাদ
৯ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা বিচিত্রার প্রচ্ছদ কাহিনী পড়ে অজানা অনেক ইতিহাস জানতে পারলাম। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার চির শত্রু গোলাম আজম ও তার জামাতী দোসরদের অতীত ও বর্তমান চরিত্র সম্পর্কেও অবগত হলাম। ইসলামী শাসনের নামে জামাতের অভিসন্ধি এ দেশের ধর্মভীরু মানুষদের কে শুধু বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয় তা অত্যন্ত পরিষ্কার। পাশাপাশি এও সুস্পষ্ট যে তারা বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার না করে স্বাধীনতা বিরােধী চক্রাতে লিপ্ত।
ফরিদ আহমেদ,
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

গোলাম আজম
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্যোগপূর্ণ সময়ের গণহত্যার জনপরিচিত নায়ক কুখ্যাত গােলাম আজম বাংলাদেশে রাজনীতি করার সাহস করছেন ; একজন স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমিকের কাছে তা অবাক লাগা ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। নির্লজ্জ দেশদ্রোহী আযমকে স্বাধীন বাংলার মাটিতে আশ্রয় কি প্রশ্রয় কেনটাই দেয়া সমীচীন হবে না। রাজাকার সদরের অমানবিক অবদানের কথা বিবেকবান মানুষ কোনদিন ভুলবে না। অতএব তার বিচারসহ নির্বাসনের ব্যবস্থা করলেই দুঃখ ভারাক্রান্ত জাতির হৃদয়টা হাল্কা হবে। যথা সময়ে বিচিত্রা গােলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’ শীর্ষক প্রচ্ছদ কাহিনী ছেপে স্বদেশ প্রেমসহ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে।
স, ম, সরওয়ার হােসেন নবাব রিয়াজউদ্দিন বাজার, চাটগাঁ।

‘বাঙালীরা কাফের’
আমার মতে, ‘গেলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি প্রচ্ছদ কাহিনীটি এ পর্যন্ত বিচিত্রায় প্রকাশিত সব নৈতিক প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল, খােলাখুলি, পরিস্কার এবং তথ্য বহুল। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকদের সাহসী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যে মাওলানা মওদুদীর বিকৃত ইসলামী ব্যাখ্যা সম্বল করে বাংলাদেশে জামাতী এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সেই মওদুদী সম্পর্কে বিচিত্রার পাঠকদের একটি তথ্য জানাতে চাই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন প্রথম চার মাস আমি ইসলামাবাদে ছিলাম। ঐ সময় পাকিস্তানের প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে খুবই উদ্বিঘ্ন ছিলেন। বিশেষ করে আমরা যারা ছাত্র ছিলাম তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষে সোচ্চার এবং কাজ করার চেষ্টা করছিলাম। ‘৭১ এর সম্ভবত জুলাই মাসে মওদুদী ইসলামাবাদে তাঁর এক শিষ্যের বাড়িতে বিশ্রামের জন্য কিছু দিন ছিলেন। কুমিল্লা জেলার কসবা থানার জনৈক মজিবর রহমান ছিলেন মওদুদীর অন্যতম শিষ্য। এরই এক ছেলের সহায়তায় আমরা কয়েকজন মওদুদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানী সৈন্যরা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও নির্বিচারে বাঙালী মুসলমানদের হত্যা করছে, মহিলাদের বেইজ্জতী করছে। আপনি একজন ধর্মীয় নেতা হয়ে তা সমর্থন করছেন কেন ? মওদুদী সাহেব উত্তর দিয়েছিলেন ‘বাঙালীরা ভারতীয় কাফেরদের সাহায্য নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়ছে সুতরাং ঐ বাঙালীরাও কাফের। এদের বিরুদ্ধে পাক সৈন্যরা জেহাদ করছে এবং যা করছে ঠিকই করছে।’
কুমিল্লার উল্লেখিত জামাতী মজিবর রহমানের বড় ছেলেটি তখন পাক সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। আমাকে এবং আমার অপর এক বন্ধুকে একদিন রাস্তায় পাকড়াও করে প্রথমে গুলি করার এবং পরে পুলিশে ধরিয়ে দেবার হুমকী দিয়েছিলেন, তিনি নাকি আর্মি হেড কোয়ার্টারে বারবার অনুরোধ জানিয়েও ঐ সময় পূর্ব পাকিস্তানে পােস্টিং নিতে পারছেন না নতুবা দেখিয়ে দিতেন বাঙালী কাফেরদের। পাক সেনারা যেখানে একশ কাফের হত্যা করছে তিনি সেখানে দশ করতেন। কিন্তু বাঙালী বলে তাকে বিশ্বাস করা হচ্ছে না এই তার আপসােস। জানিনা এই জামাতী আর্মি অফিসারটি মনের সাধ পূরণ করতে পেরেছিলেন কিনা।
বাদল রেজা
ঢাকা।

আলবদর সমাচার
জামাত, শিবির নেতা রাজাকার-আলদরদের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম বিচিত্রায়। আরেকটি সংযোজন করা যায়, তা হচ্ছে শিবির কেন্দীয় কমিটির বর্তমান সধারণ সম্পাদক (ওদের ভাষায় সেক্রেটারী জেনারেল) জনাব এনামুল হক মনজুও একজন আলবদর কমান্ডার ছিলেন। চট্টগ্রাম শহরের টেলিগ্রাফ হিল রােডের হােটেল জলিম-এ (হিন্দুদের থেকে কেড়ে নিয়ে ভবনটির তারা সুন্দর একটি ইসলামী নামও দিয়েছিল) তার অফিস ছিল।
সম্রাট
চট্টগ্রাম।

একটি অনন্য বিচিত্রা
গােলাম আজম এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ; আর জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে সমালােচিত রাজনৈতিক সংগঠন। ‘৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা যারা গােলাম আযম ও তার সংগঠন জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে কম ওয়াকেবহাল ছিলাম ; স্বাধীনতার দীর্ঘ ১২ বৎসর পরে, বিচিত্রাই সে অভাব পূরণ করলাে। বিচিত্রার প্রতিবেদক যে অসীম সাহসিকতা নিয়ে প্রসঙ্গের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাতে অনেক দেশপ্রেমিক হয়তো নাখোশ হবেন। কিন্তু, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আত্মকলহই যে গােলাম আজমকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করছে, সে কথা সন্দেহাতীত। সাহায্য দাতা মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ কোন রাষ্ট্রের বিশেষ কোন কর্ণধারের চাপে ক্ষমতাসীনরা হয়তো বা বুদ্ধিজীবি হত্যার নায়ক গােলাম আজমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবেন; কিন্তু, ভুলে গেলে চলবেনা যে দেশমাতার সূর্য সন্তান মুক্তিযােদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতকারী’ও ‘জারজ সন্তান’ সম্বােধনকারী নরপিশাচদের কবর পাকিস্তানে নয়, বাংলাদেশেই রচিত হবে।
আবদুল হামিদ,
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।

জামাতের নীল নকশা
বিচিত্রার প্রচ্ছদ কাহিনী, ‘গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’ পড়তে গিয়ে ওই চেনা হায়েনাদের প্রতি বারবার ঘৃণ্য, ক্ষোভ ও ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠেছে রক্তে । তবে হঠাৎ, সবচে বেশি শিউরে উঠেছি এক জায়গায় এসে। আধুনিক প্রকাশনীর তথ্য নিতে যেয়ে বিচিত্রা রিপাের্টারের পিঠ চাপড়ে দেয়া সেই লােকটির আচরণ ও তার উদ্দেশ্যের কথা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেলাে জহির রায়হানের কথা। তাকেও এমনিভাবে ডেকে নেয়া হয়েছিল ভুল টেলিফোনে। যে টেলিফোনে ছিলো তাঁর অগ্রজ সাংবাদিক শহীদুল কায়সারের খোঁজ পাওয়ার সংবাদ। আর সেই খোঁজ নিতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিঁখোজ হলেন জহির রায়হান নিজেই। একই রকমভাবে ‘৮১তেও প্রণীত হচ্ছে ওদের হত্যাযজ্ঞের নীলনকশা। এখন থেকেই দেশপ্রেম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি এদের প্রতিরােধ না করলে, সুযোগ মতো ওরা আমাদের দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি ও স্বাধীতার ওপব মরণ কামড় দিয়ে বসবে।
কাজী ইমদাদুল হক,
শহীদুল্লাহ্ হক,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিচিত্রা’র চমক
চমকে দিয়েছে। প্রচণ্ডভাবে আবার চমকে দিয়েছে বিচিত্রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরােধী রাজাকার ও আলবদর নেতা অধ্যাপক গােলাম আযমের নৃশংসতা, পৈশাচিকতার স্বরূপ উদ্ঘাটন করে দিল বিচিত্রা। জামাতে ইসলামের এই নেতা আজ
গোলাম আজম
‘জনগণকে গণদাবী, গণজোয়ার ও তৌহিদী জনতার সঠিক চেহারা নির্ধারনের ব্যাপারে বিচিত্রার প্রশংসনীয় উদ্দ্যোগের ফলশ্রুতি স্বরূপ প্রচ্ছদ কাহিনী গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি আমাদের সীমিত ধারনার পরিধি বাড়িয়েছে। জামাত ইসলামের অতীত ও বর্তমানের ৪০ বছরের নাতিদীর্ঘ ইতিহাস ব্যাঘ্রমূর্তির লােলুপ দৃষ্টির রূপ উৎঘাটিত করেছে। জামাত কি চায় সেটা আর এখন আমাদের অজানা নয়। যারা ইসলামের নামে ক্ষমতা দখলের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগাই এখন আমাদের একান্ত উচিত। জামাতে ইসলামের পৃষ্ঠপােষকতায় চালিত অঙ্গ সংগঠন–ইসলামী ছাত্র শিবিরের আলখেললা এখন আমাদের নিকট পুরাে উন্মােচিত। যে গোলাম আজম স্বাধীনতার শত্রু মুক্তিযোদ্ধাদের দুস্কৃতকারী রূপে আখ্যা দিয়ে এখন বিরূপ আচরণ করছে, দেশে অনাসৃষ্টি কান্ড ঘটাচ্ছে সেই ব্যক্তি কি করে এখনও দিব্যি ব্যক্তিগত সহকারী খাটিয়ে রাজকার্য চালিয়ে যাচ্ছে এবং নাগরিকত্বও চাচ্ছে (?), সেটাই প্রশ্ন ? আমরা চাই উক্ত ‘জাতীয় শত্রুর বিহিত ব্যবস্থা ও শাস্তি। এ ধরনের একটি সাহসী প্রচ্ছদ কাহিনী রচনার জন্য বিচিত্রাকে ধন্যবাদ।
মােঃ কাউছার উদ্দিন
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

শতবর্ষ পরেও কি হায়েনাদের ভুলতে পারবে ?
বাসায় ফিরে বিচিত্রা পেলাম। প্রতিদিনের মত তড়িঘড়ি করে পড়তে গিয়ে বাকরুদ্ধ হলাম। বিস্ময় প্রকাশের ভাষাও যেন রুদ্ধ।
স্মৃতিতে আজ ভাসছে কিছু মুখ—কিছু ঘটনা। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ময়মনসিংহ জেলার কিশােরগঞ্জ ছিল মুজাহিদ, আলবদর, রাজাকার, আল-শামসদের আখড়া। বিশেষ করে শহরের শােলাকিয়া এবং হয়বৎনগর এলাকা দুটো। অনেকে ঠাট্টা করে হয়বৎনগরকে রাওয়ালপিন্ডি বলত। কিশােরগঞ্জে আল-বদরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অধ্যাপক মাহতাব উদ্দীন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত কিশােরগঞ্জেও আল বদরদের পৈশাচিকতা ছিল নির্মম। আল-বদরদের শারীরিক নির্যাতনের দাগগুলাে স্কুল জীবনের বন্ধু আতিকের শরীরে হয়ত এখনও বিদ্যমান। আখড়া বাজারের চিশতী ভাইকে অমানষিক নির্যাতন করে তারা হত্যা করেছিল। গুলি তারা খরচ করেনি। নাম না জানা অনেকেই তাদের হাতে জীবন দিয়েছিলেন শুধু স্বাধীনতার জন্যে। সেই নরখাদক মাহতাব উদ্দীন আজও আছে এবং আছে তার চেলা-চামুণ্ডেরা। বীর দর্পে এখন রাজনীতিও করছে।
মনে পড়ছে ’৭১ এর ৪ঠা নভেম্বরের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল বেলাটা। কোনদিন ভুলব না। শহর থেকে পশ্চিম দিকে দুই আড়াই মাইল দূরে পেড়াভাঙ্গা গ্রামে মুক্তি বাহিনী ও রাজাকারপাক মিলিত বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল। সেদিনের যুদ্ধে কিশােরগঞ্জের ছেলে খায়রুল জাহান সহ আরও দু’জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। পবিত্র তিনটি লাশকে রাজাকাররা যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে নিয়ে এসেছিল হয়বৎনগর গ্রামে। এবং পবিত্র তিনটি লাশকে নিয়ে তারা জয়ােৎসব করেছিল। একজন মুক্তিযােদ্ধার পবিত্র লাশের পায়ে বেধে প্রায় দুইশত গজ টেনে নিয়ে কবরস্থানের নিকট ফেলে রেখেছিল। এই শহীদদেব তারা সেদিন কবরও দেয়নি !
কিশােরগঞ্জ রেল স্টেশনের দক্ষিণ দিকে সিগনিরচর গ্রাম। এ গ্রামের লােকেরা কি সহজেই সে দিনটির কথা ভুলে যাবে ? তিন শতাধিক লােককে সেদিন এ গ্রামে হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা লােহার রড, রাইফেলের বাট আর বেয়নেট চার্জ করেছিল! হায়! দশ বছর যেতে না যেতেই সেই হায়েনাগুলো বীরদর্পে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ‘৭১ এর ভূমিকা সম্পর্কে জাতীয় বেঈমানরা ক্ষমা না চেয়ে বরং অনুতাপহীন কণ্ঠে সে সময়ের ভূমিকাকে সঠিক বলছে। যারা দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল তারা আজ গোলাম আজমের নাগরিকত্ব পূনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেছে। এই কুখ্যাত গােলাম আজমের নাগরিত্বকে বদলে ফাঁসীর দাবী করলে কি অযােক্তিক হবে ?
রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন চলে মুক্তিযােদ্ধাদের উপর জাতীয় বেঈমানদের হামলা নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করে। অনেক দেশের মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় বেরলে নাকি জনসাধারণ তাঁদের ফুল দিয়ে সম্মানিত করেন আর আমার দেশের মুক্তিযোদ্ধারা দশ বছর যেতে না যেতেই ফুলের বদলে স্বাধীনতা বিরােধীদের হামলা নিশ্চয়ই আশা করেন না। যে বাবা আদরের পুত্র হারিয়েছে, যে বােন ভাই হারিয়েছে, যে বধূ বর হারিয়েছে তারা কি শতবর্ষ পরেও হায়েনাদের ভুলতে পারব।
Syed Azizul Bari
Widemweg Str. 15
4235 Schermbeck
West Germany
মাটি আজো লাল কেন ?
বিচিত্রার গােলাম আজম ও জামাতে ইসলামের রাজনীতি প্রচ্ছদ কাহিনীতে ‘স্বাধীন বাংলাদেশে জামাতের অভ্যুদয়’ প্রতিবেদনটি খুব সুন্দর বিশ্লেষণ এবং বাস্তবধর্মী হয়েছে। এর পরেও বিভিন্ন দলগুলি নিজেদের দুর্বলতা দূর না করে রাজাকার আলবদরদের ক্ষমা করে দিচ্ছে। তাই দুঃখ হয়, স্বাধীন হওয়ার দশ বছর পরেও যখন মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলার মাটি রঞ্জিত হয়ে তখনও নেতাদের বােধােদয় হয় না।
বজলু
রাজবাড়ী,ফরিদপুর।

ইতিহাস, নিভৃতে কাঁদো !
ইতিহাস হয়তাে এমনি করেই রচিত হয়। নতুবা ‘৭১-এর মুক্তিযােদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনদের মনে প্রিয়জন হারাবার যে ব্যথা বা শংকা মনে জেগেছিলাে, ‘৮১-তে সে শংকা নতুন করে দেখা দেবে কেন? কেন ৮১-তে ‘৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মত বিহীন লাশ দেখতে হলে আমাদের ? ‘৭১-এর শংকা দূর হবার পর কেন স্বাধীন বাংলাদেশে কিশােরপুরের মুক্তিযােদ্ধা মোঃ আবদুল কুদ্দুস ও সহযোদ্ধা নজরুল ইসলামের অতন্মীয়-স্বজন প্রিয়জন হারানাের কান্নায় বুক ভাসাচ্ছে? জামায়াতে ইসলামের সন্ত্রাস মূলক কার্যকলাপে কেন মক্তিযােদ্ধা ও তাঁর আত্মীয় স্বজনেরা শংকায় দিন কাটাচ্ছে? স্বাধীনতা অর্জনের দশ বছর পরও কেন আমরা স্বাধীনতা হারাবার ভয়ে শংকিত ? এ ঝুকি ইতিহাস? আজ শুধু বারবার কবি শামসুর রাহমানের সেই একটি কবিতার কথাই মনে পড়ে–
হে স্বাধীনতা, তােমাকে পাবার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গায় ?
সেলিম খােন্দকার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তোয়াহা বিন হাবীরের প্রতিবাদ
১৭ এপ্রিল ১৯৮১ তারিখের (৯ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা) বিচিত্রায় গােলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’ প্রচছদ কাহিনীতে ‘লন্ডনের একটি বাড়িতে’ শীর্ষক অনুচেছদে ১৯৭৪ সনের প্রথম দিকে, পূর্ব লন্ডনের একটি বাড়িতে গােলাম আজমের বাংলাদেশ বিরােধী তৎপরতায় নীল নকশা পেশের বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই অনুচেছদে অন্য এক জায়াগায় মধ্য প্রাচ্যের একটি দেশে গােলাম আজমের প্রতিনিধি রুপে অামাকে চিত্রিত করা হয়েছে। উক্ত তথ্য মিথ্যা, কাল্পনিক এবং বানোয়াট। গােলাম আজমের উক্ত বৈঠকে আমার উপস্থিতি দূরের কথা, আমি এ যাবৎ লন্ডনেই যাই নি। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ আট বৎসর আমি শুধু, পবিত্র মক্কায়ই কাটিয়েছি। গােলাম আজমের কীর্তিকলাপের সঙ্গে আমায় জড়িত হওয়াতাে দুরের কথা আমি মক্কায় একা গােলাম আজমের কার্যকলাপের প্রকাশ্য তীব্র বিরােধিতা করেছি। যার ফলে জামাতের সঙ্গে জড়িত কোন ব্যক্তি, তাঁর ব্যক্তিগত সর্ম্পকের ভিত্তিতেও আমার সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করলে তার স্থান হতে গোলাম আজমের ‘ব্লাক লিস্টে’। অতএব গােলাম আজমের মত ব্যক্তির প্রতিনিধি হওয়ার মতো কলংক আমাকে স্পর্শ করার কাহিনী জালিয়াতি বই কিছু নয় । তাই আমি সুস্পষ্ট ও ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই, এই প্রসংগে বিচিত্রায় যা লেখা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল, ভিত্তিহীন ও বিদ্বেষ প্রসূত। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচিছ।
তােয়াহা বিন হাবীব
১১২, মনিপুরী পাড়া
ঢাকা।
মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ১৭ই এপ্রিল প্রকাশিত ৪৪তম সংখ্যা বিচিত্রার ‘গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি’ প্রচছদ কাহিনীর ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক’ উপশিরােনামার বক্তব্য পড়ে বিস্মিত ও দুঃখিত হলাম। আমি আজীবন মানবিক মূল্যবােধে বিশ্বাসী। আমার পক্ষে এহেন মানবতা বিরােধী ঘৃণ্য কাজে কোনভাবে জড়িত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আপনার পত্রিকার এই বক্তব্য ভিত্তিহীন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।
মােহাম্মদ কোরবান আ’লী
এডভােকেট, সুপ্রীম কোর্ট।
0 1105 N 23 SYLHET 25 31 D + EDITOR BICHITRA 1 DIT AVENUE DACCA 2 = = MANY THANKS BICHITRA TO PRESENT AN ISSUED ABOUT JAMAT AND ALBADAR GOLAM AZAM STOP = = NAHAS AND BELAL SYLHET
জামাতের অভিযােগ
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর জয়েন্ট সেক্রেটারী অধ্যাপক ইউসুফ আলী ১৯ এপ্রিল নিন্মােক্ত বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিটি হুবহু নীচে দেয়া হলাে— ‘একটি সরকারী সাপ্তাহিক পত্রিকায় (বিচিত্রা) ১৭/৪/ ৮১ তারিখের সংখ্যায় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির ওপর একটি প্রতিবেদনের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। আমরা মনে করি উল্লেখিত প্রতিবেদনটি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তথা ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের ছত্র ছায়ায় লালিত, সাম্রাজ্যবাদীর শক্তির মদদপুষ্ট একটি বিশেষ চক্রের ষড়যন্ত্রের ফসল।
১৯৭৯ সালে ২৫ মে একটি কনভেনশনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় এবং জামায়াত গণতান্ত্রিক মূল্যবােধের ওপর ভিত্তি করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়ােজিত। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রথম কনভেনশনে জামায়াতের নীতি নির্ধারণী এক লিখিত বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বলা হয় আমাদের জন্মভূমি হিসাবে বাংলাদেশের সাথে আমাদের গভীর ভালােবাসার সম্পর্ক অত্যন্ত সজাগ ও সতেজ থাকতে হবে। (বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী পুস্তিকায় ৪-এর পাতায় দেখুন)। এই কনভেনশনে গৃহীত জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে লক্ষ্য উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে ৩নং ধারায় ৮ম পৃষ্ঠায় বলা হয়, ইসলামী মূল্যবােধ ও ঐক্যের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা কারবার প্রচেষ্টা চালায়। সুতরাং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর দেশপ্রেম ও আন্তরিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা অবান্তর এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়নতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিচিত্রায় প্রচারিত প্রতিবেদনে জামায়াত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলছে বলে প্রপাগ্যান্ডা চালানাে হয়েছে। এ প্রসংগে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই—জামায়াত বরাবর ঘােষণা করেছে এবং জনগণ এ সম্পর্কে অবহিত যে জামায়াতে ইসলামীর অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদগুলাে যেমন মিথ্যা অভিযােগ চাপিয়ে ইসলামী আন্দোলনের ওপর দেশে দেশে নির্যাতন চালাচেছ, ঠিক একই কায়দায় জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্যাতন চালানাের পটভূমিকা সৃষ্টির হীন উদ্দেশ্যেই জামায়াতের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা এবং কল্প কাহিনী প্রচারের আশ্রয় নেয়া হচেছ। এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটিতে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে বলা হয়েছে যে, জামায়াত মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই যে, রংপুর, বরিশাল, বগুড়া, সাভার, কুমিল্লা, সিলেট, গাইবান্ধাসহ সংশ্লিষ্ট সকল এলাকার জনগণ সাক্ষী এবং তারা ভালােভাবে জানেন যে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কোথাও কোন দলের ওপর কোন প্রকার হামলা চালানাে হয়নি। বরং জামায়াতে ইসলামীর, সভা সমাবেশের ওপর হামলা চালানাে হয়েছে এবং উস্কানীমূলকভাবে জামায়াতের সভাস্থলে জনসভা আহবান করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রেও জামায়াত অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে।
আমরা বলতে চাই, মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে সাময়িকভাবে জনগণকে ফাঁকি দেয়া যায় কিন্তু বিবেককে প্রতারণা করা যায় -না, বিবেকের দংশনে তারা আক্রান্ত হতে বাধ্য। মস্কো পন্থী একটি দৈনিকে আমাদের বিগত ২৯ মার্চের সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য বিকৃত করে পরিবেশন করা হয়। যার প্রতিবাদ লিপি পাঠানাের পরেও তা ছাপার মতাে সৌজন্যতা পর্যন্ত তারা দেখায়নি।
অথচ সাপ্তাহিকটির প্রতিবেদনে সেই দৈনিকটিতে পরিবেশিত বানােয়াট রিপাের্টের ওপর ভিত্তি করেই জামায়াতকে অভিযুক্ত করা হয়। ‘৭১-এ ভুল করিনি, স্বাধীনতার কনসেপ্ট ঠিক ছিলাে না, যা করেছি ঠিকই করেছি—যে সব কথা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দ আদৌ বলেননি সে সব কথা বার বার প্রচার করে জামায়াতের বর্তমান ভূমিকা এবং ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করা হচেছ।
অন্য দলের লােকদেরকে জামায়াতে ইসলামী কাফের বলে এবং মুক্তিযােদ্ধাদেরকে জারজ সন্তান বলেছে-এমন ডাহা মিথ্যা কথাও সাপ্তাহিকটির প্রতিবেদনে প্রচার করে এই বিশেষ সাপ্তাহিক পত্রিকাটি সাংবাদিকতার সকল নীতিমালাকে পদদলিত করে সাংবাদিক জগতের মর্যাদা নষ্ট করেছে। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, উল্লেখিত মিথ্যা প্রচারণার পক্ষে জামায়াতের কোন বই কিংবা কেন নেতার বক্তৃতা থেকে কোন প্রমাণ পত্রিকাটি হাজির করতে পারবে না। আমরা আরও চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে চাই—এ ধরনের কথা তাে দূরে থাক জামায়াতের কোন নেতার মুখে কোন দল বা ব্যক্তি সম্পর্কে কোন অশালীন উক্তির প্রমাণও কেউ দিতে পারবে না। সাংবাদিকতার নামে রাজনৈতিক আবহাওয়াকে ঘােলা করার এহেন কর্মকান্ড সম্পর্কে আমাদের বিবেকবান সাংবাদিক সমাজকে রুখে দাঁড়ানো উচিত বলে আমরা মনে করি।
আমরা আরও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জমায়াতের সাথে জড়িয়ে বাংলাদেশে ইসলামী তৎপরতার বিকাশ রুদ্ধ করার জন্য ও মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আমরা পূর্বেও বলেছি জামায়াত সাধারণ অর্থে কোন রাজনৈতিক দল নয়। জামায়াত একটি সার্বিক আন্দোলন। অন্য দলের মত জামায়াতের কোন অংগ সংগঠন নেই। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী সকল দল ও ব্যক্তির প্রতিই আমাদের শুভেচছা। এবং আমরা সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জামায়াত সম্পর্কে আরাে অনেক বিভ্রান্তিকর কথা প্রতি বেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—সব কথার জবাব আমরা দেওয়ার প্রয়ােজন মনে করি না—এদেশের জনগণ, যাদের সহযোগীতা এবং সমর্থন নিয়ে জামায়াত ন্যায়ের সংগ্রামে নিয়ােজিত সেই জনগণই জামায়াত বিরােধী মিথ্যা প্রচারণার জবাব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। উল্লেখিত প্রতিবেদনের বিভিন্ন জায়গায় যে হিংসা-বিদ্বেষের বিষ বাষ্প ছড়ানাে হয়েছে তাতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে বাংলাদেশে আফগান স্টাইলের বিপ্লব করার নামে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলিখেলার জঘন্য ষড়যন্ত্রের পটভূমিকা তৈরী করা হচেছ। এই হীন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক হওয়ার জন্য আমরা, উদাত্ত আহবান জানাচিছ।
পরিশেষে “বিচিত্রার” প্রতি আমাদের আবেদন এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে তারা যে মােটেই ঠিক কাজ করেনি সেই উপলব্ধি তাদের হওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে এমন নিগেটিভ তৎপরতা যা আমাদের জাতির কোন কল্যাণে আসবে না। তা থেকে বিরত থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।
বিচিত্রার জবাব
জামাত নেতা অধ্যাপক ইউসুফ আলী বিবৃতিতে যে সব অভিযােগ করেছেন আমরা তার জবাব দিচিছঃ বিবৃতির শুরুতেই আমাদের প্রতিবেদনকে জনাব আলী জামাত তথা ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে……সাম্রাজ্যবাদীর শক্তির মদদপুষ্ট একটি বিশেষ চক্রের ষড়যন্ত্রের ফসল’ বলে অবিহিত করেছেন। জামাত তার স্বভাবানুযায়ীই তার প্রতিক্রিয় জানিয়েছে। জামাতের সদস্য না হলে জামাত নেতার মানুষকে শুধু কাফেরই মনে করেন না, জামাতের বিরুদ্ধে মত বা জামাতের বিপক্ষে কিছু বলাকেও তারা ষড়যন্ত্রই মনে করেন। এ ষড়যন্ত্র তখন ইসলামের বিরুদ্ধেই হয়ে যায় তাদের মতে। ‘৭১ সালেও জামাত ঠিক একইভাবে বক্তব্য পেশ করেছে। সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক বােধ জামাতের নেই বলেই সামান্য সুযোগ পেলে জামাত নেতারা তাদের কুৎসিত ফ্যাসিস্ট চেহারা দেখাতে সামান্য বিলম্বও করেন না।
‘৭১ সালে জামাতীদের লজ্জাজনক ও কলংকজনক ভূমিকার এবং তারই প্রেক্ষাপটে বর্তমান জামাতের রাজনীতির একটি বস্তুুনিষ্ঠ প্রতিবেদন আমরা তৈরি করতে চেষ্টা করেছি। সে সম্পর্কে তারা বিন্দুমাত্র উল্লেখও করেননি। তারা কি তাদের দুর্গন্ধময় অতীতের জন্যে লাঞ্ছিত? এ কথা সত্যি হলে তাদের – প্রতি সহানুভূতি দেখানাে যেতো। কিন্তু তারা ‘৮১ সালেও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, ‘৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরােধিতা করতে গিয়ে স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর হত্যা জুলম সন্ত্রাসের ফ্যাসীবাদী তৎপরতা ছিলাে মহৎ কাজ। জামাত ৭১ সালের মত ‘৮১ সালেও কি তাদের মহৎ কাজের নিদর্শন রাখতে চায় ? বাংলাদেশ, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব প্রসঙ্গে জামাত নেতারা তাদের একটি কনভেনশানের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু জামাত কি হঠাৎ আবিৰ্ভূত একটি দল ? তার কি কোনাে অতীত নেই ? জামাত নেতাদের কি কেননা অতীত নেই ? আর যে দেশে সংগঠনটি গড়া হলাে তা কি হাওয়া থেকে বা কারাে ‘অনুদানে পাওয়া একটি দেশ ? এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কি ইতহাস নেই? এ দেশ প্রতিষ্ঠায় জামাতীদের অবদান কি ? এসব কি অবান্তর প্রশ্ন ? সেদিনের হত্যাকারীরা যদি এসে বলে, বাংলাদেশের সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক এ কথা কি বাংলাদেশ মুখের কথাতেই বিশ্বাস করবে, না সে দেখে নিবে (অস্পষ্ট) তাকে হত্যায় সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টাকারীদের হাতে চুরি না ভালবাসার ফল ? ৭১-এর ‘রাক্ষস’ ‘৮১ সালে ‘নিরামিষভোজী কিনা জানার অধিকার ও কৌতুহল নিশ্চয়ই এদেশের জনগণের রয়েছে। জামাত নেতারা উপলব্ধি না করলেও ঘাতকের মুখে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি ও বিশৃখলা থেকে রক্ষা করবাে এ কথা হাসি ও – অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। যদি মনে করা যায় যে, জামাত ‘স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রায় চেষ্টা করবে, তাহলে সে কথা বিশ্বাস করার মত প্রমাণ কই ? শুধু, ২৯ মার্চ (৮১) নয় ৭ ডিসেম্বর (৮০) বাংলাদেশে জামাতের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে জামাত নেতারা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘৭১ সালে আমরা যা ভালো মনে করেছি, তাইই করেছি। সেদিন তারা আরাে বলেছিলেন, দেশ এ জাতির মঙ্গলের জন্যে ‘৭১ সালে যা করেছি, ঠিকই করেছি। ‘৭১ সালের ভালাে কাজ অথাৎ, হত্যা, নির্যাতন, সন্ত্রাস দেশবাস। আবার চান—এটা জামাত নেতারা কি মনে করেন । সাংবাদিক জামাত নেতাদের দুটি সম্মেলনেই স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেছি লেন—’৭১ সালে আপনার কি ঠিক করেছিলেন ভুল করেছিলেন—এখন কি মনে করছেন ? সাংবাদিকরা এ প্রশ্ন অনেক ব্যক্তি ও সংগঠনকে করেছেন, যখন তারা বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছিলেন। তাদের উত্তর সকলেরই জানা এবং তাদের সালের ভূমিকা নিয়ে এখন বড় একটা কথা উঠে না। কারণ, জনগণ তাদের ভুল কোথায় তা জানতে পেরেছেন। স্বাধীনতা বিরোধিতা আর স্বাধীনতা মেনে নেয়া দুটোর মধ্যে গােজামিল দিয়ে রাজনীতি কিভাবে করবে জমাত ? এটা করতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচেছ প্রথম অবস্থান অর্থাৎ স্বাধীনতা বিরোধিতাতেই অবিচল থাকা। মনে আর মুখে জামাত এক নয় এটা কি তারই প্রমাণ ?
জামাত নেতা তার দলের দেশপ্রেম ও আন্তরিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তােলা অবান্তর ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেন। তাদের এ মন্তব্যে আলবদর-আলশামসের হাতে শহীদের না খুজে পাওয়া লাশের হাড়ও বােধহয় দুঃখ ও বেদনায় কেদে উঠেছে। আলবদর-আলশামসের হাতে লাঞ্ছিত যে পবিত্র মা-বােনেরা তাদের চোখও নিশ্চয়ই অশ্রু, সজল হয়ে উঠেছে। আমরা প্রশ্ন করতে চাই—জামাতের এ দেশপ্রেম ও আন্তরিকতা কি পাকিস্তান না বাংলাদেশের প্রতি ? পাকিস্তানের প্রতি তাদের দেশপ্রেম ও আন্তরিকতা পাকিস্তানে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। আর বাংলাদেশের প্রতি তাদের দেশদ্রোহীতা ও বিরােধিতা শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও জামাত নেতারা দরিদ্র, বিপন্ন ও যুদ্ধবিধস্ত রাষ্ট্রের অস্তিত্বের পদে পদে আন্তজার্তিক প্রভাব বলয় থেকে যে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন তাকি দেশপ্রেমের পরিচয় ? তারা প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন স্পষ্ট করে যে, তারা ‘৭১ সালের মত জনগণের সঙ্গে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
জামাত মিথ্যা কথাকে সত্যের মতাে অনায়াসে বলতে পারে এ অভিযোগ আমরা করতে চাই না। জামাত নেতা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন-“জামাত বরাবর ঘােষণা করেছে এবং জনগণ এ সম্পর্কে অবহিত যে জামাতে ইসলামী অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। ৭১ সালে জামাত নিরীহ ও নিরস্ত্র ছিলাে কিনা জনগণই জানেন। জামাত বহু হানে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলছে এ অভিযােগ সেদিন মুক্তিযােদ্ধারাও করেছেন। জামাতের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কল্প বাহিনীরর আশ্রয় নেয়া হচেছ এ অভিযােগ তিনি করেছেন। ‘৭১ সালে গেলাম আজমদের ভূমিকা এবং জামাতীদের ভূমিকা মিথ্যা ও কল্পকাহিনী হলে আর বলার কিছু থাকে না। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে ছাত্র হত্যাকারীও বারবার একথা বলতেন, কিন্তু এ দেশের মানুষ তাকে চিরকালের জন্যে প্রত্যাখান করেছিলােএটা নিশ্চয়ই জামাতীদের জানা। ‘৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলনে জামাতের ভূমিকা স্মরণ করা হীন উদ্দেশ্যে’ হলে আমাদের লজ্জা প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনাে উপায় নেই।
জামাত মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়, বরং মুক্তিযােদ্ধারাই হামলা চালিয়েছে—এ কথা বলেছেন জামাত নেতা। এই ঘটনা দশ বছরের পুরােনাে নয়। মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর জামাতের হামলা এবং পাল্টা জবাবে মুক্তিযােদ্ধাদের ‘এ্যাক-শান’ সকলের জানা। মুক্তিযোেদ্ধারা জামাতীদের সভানুষ্ঠান ও করতে দেবে না—এটা মুক্তিযােদ্ধার গােপন রাখেনি। তারা এ কথা ঘােষণা করেই জামাতীদের সভা করতে দেয়নি বহু স্থানে।
‘৭১-এ ভুল করিনি….এসব কথা ‘বানােয়াট ‘ এবং তারা আদৌ বলেননি, এ কথা বলেছেন জামাত নেতা। কিন্তু তারা কি বলেছিলেন সে কথা জমাত নেতা বলেননি। আমাদের ত আবার প্রশ্ন : ৭১ সালে আপনারা ঠিক করেছিলেন না ভুল করেছিলেন ?” এ জবাব তারা দেবেন নিশ্চয়ই। জামাত অন্য দলের লােকদের ‘কাফের’ বলে কিনা জমি- য়তে উলামায়ে ইসলাম-এর নেতা মওলানা শামসুদ্দিন কাসেমীই বলে দিয়েছেন। জামাত মুক্তিযােদ্ধাদের কি বলে সম্বোধন করতাে তার অজস্র প্রমাণ রয়ে গেছে ’৭১ সালের তৎকালীন সংবাদপত্রে। জামাত ‘৭১ সালে নিহত জামাতী রাজাকার, আলবদর আলশামস সম্পর্কে যে গােপন সার্ভে রিপোর্ট তৈরি করেছে তাতে মুক্তিযােদ্ধাদের অশ্লীল সম্বােধন করা হয়েছে। সে সব সম্বােধন এখনও বহাল থাকে যখন তারা বলেন যে ‘৭১ সালে আমরা ভুল করিনি।
জামাতের কোনাে অঙ্গ সংগঠন নেই। ইসলামী আদশে বিশ্বাসী সকল দল ও ব্যক্তির প্রতিই’ জামাতের শুভেচছা শ্রদ্ধা রয়েছে বলে জামাত নেতা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন। ইসলামপন্থীদের প্রতি জামাতের শুভেচছার নমুনা ঃ ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শক্তির মহানগরী শাখার কাউন্সিলে ইসলামী ছাত্র শিবিরকে জামাতে ইসলামীর ফ্যাসিস্ট ছাত্র সংগঠন বলে বর্ণনা করে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র শক্তির কর্মীদের ওপর ছাত্র শিবিরের হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়। অন্যের প্রতি জামাতের শুভেচছা ও শ্রদ্ধা সম্পর্কে ইসলামপন্থী একটি সংগঠনের বক্তব্যই কি যথেষ্ট নয় ?
বিচিত্রা বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করেছে বলে তারা অভিযােগ করেছেন। জামাতের ‘৭১ সালের ভূমিকা, জামাতের অতীত-বর্তমান, বৈদেশিক সংযােগ, আবার হত্যাকান্ডের নীল নকশা, জামাতের ফ্যাসীবাদী চরিত্র, জামাতের কার্যকলাপ সম্পর্কে জামাত নেতা কিছু বলেননি। ৭১ সালের মত রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবার নীল নকশা’ জামাত করছে এটাতে ইসলামপন্থী দলগুলােই বলছে। সে কথা তারা কেনাে বলছে সে কথাও জামাত নেতা বলেননি।
আসল কথা হলাে জামাত স্বচছ ও স্পষ্ট রাজনীতি করছে না। জামাত তার সমর্থকদের প্রতারণা করছে। জামাত ত্যাগকারী একজন সমর্থক আমাদের বলেছেন যে, গোপনীয়তা ও রহস্য ময়তা জামাতের স্তরে স্তরে এক সময় এ দলের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা মনে করেন যে, দলটি জনগণ থেকে বিচিছন্ন বলে এবং তাদের কলংকও হিংস্রতার পরিণতিতে কু ক্ল্যাক্স ক্ল্যান বা মাকিয়ার মতাে একটি ঘাতক সংগঠন বা ক্ল্যানে পরিণত হবে, যদি দলটি বর্তমানের মত পরিচালিত হতে থাকে। সাম্প্রতি ককালে বিদেশের বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত অর্থের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে জামাত ভেতরে ভেতরে ভয়ংকর কোন্দল ও বিভেদে লিপ্ত। অর্থের প্রাচুর্য্যে এ দলের অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক লাইন নিয়েও দলের মধ্যে চলছে বিভেদ। গােলাম আজমের প্রত্যাবর্তনে দলের অভ্যন্তরে কোন্দলকে আরাে তীব্রতর করেছে। বিরাট একটি অংশ মওলানা রহীমের নেতৃত্বে বেরিয়ে গেছেন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে মিলতে না পেরে। জামাতের মধ্যে এ প্রশ্ন এখন সবচেয়ে তীব্র ‘জামাতের জন্যে গোলাম আজম না গােলাম আজমের জন্যে জামাত ? এ প্রশ্নে জামাত নেতারা একটা জোড়াতালি দিয়ে চলছেন। কিন্তু রাজনীতিতে জোড়াতালি চলে । এর প্রতিক্রিয়া ঘটে আর তা দলের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর ভাবেই ঘটে। স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিলে ৭১ সালের অমােচয়নীয় কলঙ্কজনক ভূমিকার ব্যাখ্যা দিতেই হবে। বর্তমান রাজনৈতিক শুন্যতার সুযােগ নিয়ে যাদেরকে এ দলে টান হবে তাদেরকে দলের মধ্যে বেশিদিন ধরে রাখা যাবে না। তাদের মধ্যে হতাশা আসবেই। ফ্যাসীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এদেশের জনগণ সঙ্গত কারণে গ্রহণ করবেন। তাই সত্যের মুখােমুখি জামাতকে দাঁড়াতে হবেই। সত্যকে এড়িয়ে চলা যায়, তাতে সংগঠনের মঙ্গল হয় না।সাহস করে সত্যের মুখােমুখি হওয়ার সাহসও বর্তমান নেতাদের নেই। জামাত নেতারা ‘৭১-এর ভূমি কাকে যত যুক্তি দিয়েই ন্যায়সঙ্গত বলে ঘােষণা করেন না কেনো গণহত্যা, গণহত্যাই। এ অপরাধ সীমাহীন। এটা শুধু বাংলাদেশ বিরােধী নয়, মানবতা বিরােধী এবং ইসলাম বিরোধী। এ অপরাধের জন্যে অপরাধীই নিজের প্রতি ক্ষমাহীন—এটা ইতিহাস বলে। তাই জামাত অপরাধ তাড়না থেকে পালিয়ে বেড়াতে একের পর এক ভুল করে চলবে এবং প্রতিটি ভুলকে সঠিক বলে ব্যাখ্যা দেবে। সময়ই ইতিহাসের এ বাস্তবতার প্রমাণ দেবে। একটি স্বাধীন জাতির সংগ্রামে যারা বিরােধিতা করতে গিয়ে স্বাধীনতা প্রেমিকের রক্ত দিয়ে নিজেদের নাম ফলক লিখেছেন, তাদের মধ্যে খুব কমই উপলব্ধি করতে পারেন যে, ঐ রক্ত অাঁখর কতখানি অমােচনীয়। গত দশ বছরে জামাতের ভুল সংশােধনের যে ক’টি সুযােগ এসেছিলাে তার সব কটিকেই জামাত প্রত্যাধ্যান করেছে। তাই জামাত আরো অসহিষ্ণ, হিংস্র ও রক্তলােলুপ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলাে, বিশেষ করে ইসলামপন্থী দলগুলাের অভিযোগই তার প্রমাণ। এ দেশের নাম যদি বাংলাদেশ হয় তাহলে ‘৭১ সালে জনগণের সিদ্ধান্ত সঠিক–এ সত্য জামাত উপলব্ধি করতে ব্যয় হবে বারবার এটাই করুণাহীন। ইতিহাসের রায় জামাত নেতারা তাদের কর্মীদের বােঝাতে চান যে, ‘৭১ সালে তারা ভারতের বিরোধিতা করেছিলেন, বাংলাদেশের নয় । কিন্তু তারা এ কথা বলছেন না যে, তারা যদি স্বাধীনতার পক্ষে থাকতেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিই বদলে যেতাে। স্বাধী নতা অর্জনের জন্যে হয়তাে বাইরের সহযােগিতা নেয়ার প্রয়ােজন হতাে না। ‘৮১ সালেও জামাত ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযােদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা প্রশ্ন তুলে সাম্রাজ্যবাদী, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী চক্রের পক্ষে কাজ করছে। জামাতের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে নেতারা ‘গৃহযুদ্ধের’ সম্ভবনা দেখতে পাচেছ বলে তাদের যাত্রা শুরু করেন। ‘জামাত অত্যন্ত সুকৌশলে গৃহযুদ্ধের আশংকা প্রচার করে জনগণের কাছে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তােলার প্রয়াসী হয়। তাদের প্রচারণা সফল হয়েছে, বলতে হবে, কেননা বায়ােবৃদ্ধ নেতারাও এখন শংকিত। জামাতের এধরনের প্রচারণার উদ্দেশ্য ছিলাে একটিই- তাহলাে ৭১ এর বিরোধিতা বিনা ব্যাখ্যায় মেনে নাও, নতুন আবার সংঘর্ষে অাসাে জামাতের এই রাজনৈতিক কৌশলে কারা বেশী লাভবান হবে ? লাভবান হবে আধিপত্যবাদী শক্তিই, জামাতের ৪০ বছরের কার্যকলাপ এদেরই অনুকূলে গেছে। জামাত যত সুখ স্বপ্নই দেখুক, তাদের অখন্ড পাকিস্তানের আশা পূরণ হবে না,আশা পূরণ হবে আধিপত্যবাদীদের। এক পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে জামাত সরে আসেনি, এলে, জামাত ৭১-এ তাদের ভূমিকা যে ভুল ছিলাে তা উপলব্ধি করতাে বহু, আগেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন থাকা ভারতের জনগণের কাঙিখত হলেও, ভারতের সম্প্রসারণবাদী ও স্বার্থবাদী মহলের কাছে কাংখিত নয়। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্ব ভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি নাগরিককে হতে হবে অতন্ত্র প্রহরীর মত সতর্ক। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চায় বলে বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ বাদী মহলের বিরােধিতা প্রবল। জামাত এ-বিরােধিতাকে সাম্প্রদায়িকতায় রুপ দিয়ে এমন দিকে চালিত করতে চাইছে যা বাংলাদেশের কল্যাণের বদলে অকল্যাণকেই ডেকে আনবে। ভারত বিরােধিতার রাজনীতি থেকে ঘৃণা বা সাম্প্রদায়িকতর জন্ম নয়জম হওয়া উচিত ইতিবাচক রাজনীতির অর্থাৎ স্বদেশ প্রেম,জাতীয়তাবােধ, জাতীয় ঐক্য, সামগ্রিক আত্নোন্নয়নে ব্যক্তি ও গোষ্ঠিগতভাবে কঠোর পরিশ্রম, সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি, জ্ঞান বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শিক্ষা ক্ষেত্রে নিজের ওপর নির্ভরতার রাজনীতির। রাজনীতিকে এ-খাতে প্রবাহিত করার মধ্যেই বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও কল্যাণ নিহিত।
৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র “চর্চার একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্র রাতারাতি কায়েম হয়না, কেউ বললেই হয়ে যায়না। গণতন্ত্র চর্চা একটি দুরূহ সাধনা। জামাত একটা পরিচছন্ন ভূমিকা নেবে সবাই আশা করেছিলো। জামাত গণতন্ত্রকে কখনাে গ্রহণ করেনি। বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ। সৃষ্টির পথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযােগ সর্বদাই নিয়েছে। ৭১ এর পর পাকিস্তানের ইতিহাস তার প্রমাণ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জামাতের লাভ হয়নি, পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরো দূরবর্তী হয়ে গেছে। জামাতের সহযােগিতায় সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে। উপমহাদেশে জামাতের রাজনীতির ইতিহাস ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত, ভ্রান্ত বিশ্লেষণ ও উগ্র-হিংস্র কার্যকলাপেরই ইতিহাস যা জামাতকে ব্যর্থতা, গণ প্রত্যাখানই উপহার দিয়েছে। জামাতের উচিত খােলামনে তা পর্যালােচনা করা। খোঁড়া লােক পা ঢেকে রেখে পঙ্গত্ব সাময়িকভাবে লুকোতে পারে, কিন্তু চলতে গেলে তা ধরা পড়ে। ৭১ এর ঘটনার দিকে জামাত নিজের চক্ষু বন্ধ করে ভাবতে পারে যে তা আর দেখা যাচেছ না, কিন্তু জাতির তাে চক্ষু বন্ধ নয় ?
জামাতের সম্পর্কে কিছু বলাই যদি ইসলামী আন্দোনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়ে যায়, তাহলে তা রাজনৈতিক সহনশীলতা ও আহার অভাবের এবং গণতন্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধার পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। তারা যে গণতান্ত্রিক মূল্যবােধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন তার প্রমাণ নিজেদের ভিতরেই রয়েছে। ১৯৭৯ সালে দলের মুখপত্র সংগ্রামের ভিতরে দলের অন্ত ছড়িয়ে পড়লে তারা কি গণতান্ত্রিক আচরণ করেছিলেন ? এমনকি আক্রোশের তুঙ্গে মওলানা অবদুর রহীম ও আই, ডি, এল এর খবর ছাপানো পর্যন্ত হারাম করে দিয়েছিলেন। আমাদের প্রতিবেদনে জামাতের অতীত ও বর্তমানকে বিশ্লেষণ করেছি। বলেছি তমসাচছন্ন অতীত তদের নিরীক্ষ করে বাস্তবতার আলােকে ভবিষ্যত নির্ণয় করতে হবে। জনগণ নিশ্চয়ই কালাে মুখােশধারী আল-বদর সদস্যদের অস্ত্র হাতে দশ বছর পরও দেখতে চান না। অতীতের ভুল স্বীকার তারা না করলে গণতান্ত্রিক আচরণ তারা করলে নিশ্চয়ই তাদের সম্পর্কে প্রশ্ন থেকে যাবে। এদেশের জনগণ ফ্যসিস্ট রাজনীতিকে কখনও গ্রহণ করেনি। আজো আওয়ামী লীগ তাদের বাকশালের ফ্যাসীবাদী দর্শন ভূল বলে স্বীকার করেনি সে কারণে জনগণ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয় তেমনি জামাতকেও জনগণ রাজনীতিতে কখনও গ্রহণ করবে না। —বিচিত্রা প্রতিবেদক