You dont have javascript enabled! Please enable it!

বঙ্গবন্ধু তুমি কঠোর হও

বঙ্গবন্ধু তোমাকে আজ কঠোর হতে হবে। তোমার নির্ভেজাল ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি দেশে ত্রাসের সঞ্চার করছে। এই বিশেষ মহলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে তোমাকে কঠোর হতে হবে। তুমি কঠোর হও! তোমার পিছনে সারাবাংলার জাগ্রত জনতা রয়েছে। রবিবার বিকালে বিডিআর ২ নং গেট সংলগ্ন চৌরাস্তায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজিমপুর পশ্চিমাঞ্চল শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে নূরে আলম সিদ্দিকী উক্ত মন্তব্য করেন। মোহাম্মদ মুস্তাফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় ভাষণ দেন ছাত্রনেতা শফিউল আলম কাজল, আবুল কাশেম, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুস শহীদ খান সেন্টু ও বাংলাদেশ। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এম এ রশিদ এবং অন্যান্য নেতারা। বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী খাদ্য পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু ইচ্ছা করলে দেশের চাউলের বন্যা বইয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের মানুষের অধিকারকে বন্ধক রাখতে রাজি নন। বঙ্গবন্ধু চক্রান্তকারী দেশের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আমার দেশের মানুষ পেটে পাথর বেঁধে থাকবে কিন্তু আদর্শ বিক্রি করবে না। তিনি ৪০ টাকা মণ দরে দেশে বিধিবদ্ধ রেশনিং চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান। জনাব নূরে আলম আগামি তিন মাসের মধ্যে সকল দুর্নীতিবাজ আমলা কর্মচারী বহিষ্কার এবং নির্বাচনের আগে সকল দালালের বিচার সম্পন্ন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি করেন। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু তার দল যে ৪৩ জন এমসিএকে বহিষ্কার করেছেন তার উদ্ধৃত্তি দিয়ে বলেন যে, প্রয়োজন হলে বঙ্গবন্ধু তার দল হতে অনেক সদস্যকে বহিষ্কার করবেন। কিন্তু দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের একজন কর্মীকেও তার দল হতে বহিষ্কার করা হয় নাই। তিনি আরো বলেন, মওলানা ভাসানীর দলের পাকিস্তান-মনোভাব সম্পন্ন ও দালাল ব্যক্তি রয়েছে কিন্তু তাদের তিনি বহিষ্কার না করে যত্নে লালন করছেন। জনাব নূরে আলম স্বাধীনতার আগে পরে দেশের সকল রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও ছাত্রনেতা ও কর্মীদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণের জন্য দাবি করেন। তিনি মাওলানা ভাসানী সম্পর্কে বলেন যে, আপনি দেশে যে আগুন জ্বালাতে চেয়েছেন সে আগুনে আপনার বিদেশি পাখি পুড়ে ছাই হবে। তাতে বাংলার মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না।
সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এম এ রশিদ তার বক্তৃতায় বলেন যে, ছাত্রলীগের কর্মীরা বিগত ২৫ বছর ধরে বাংলার মানুষের সার্বিক মুক্তিসগ্রামে রক্ত দিয়ে এসেছে। প্রয়োজন হলে বাংলার মাটিতে দেশের সার্বিক মুক্তির সনদ মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি মাওলানা ভাসানীর জিহাদের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সংগ্রাম করেছে, আপনার ডাকে অস্ত্র ধারণ করে নাই। এম এ রশিদ দেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠায় সকল কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।৩

রেফারেন্স: ১ অক্টোবর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!