You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.09.30 | জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি উপমহাদেশে শান্তি নিশ্চিত করবে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি উপমহাদেশে শান্তি নিশ্চিত করবে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ শনিবার ঢাকায় বলেন যে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এই এশীয় উপমহাদেশের ৩ টি দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়াকে সহজতর ও ত্বরান্বিত করবে। “জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ও উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উদ্বোধনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, ইতোমধ্যে বিশ্বের ৯১ টি দেশ বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েছে। এখন বিশ্বসংস্থারও বাংলাদেশকে সদস্যপদ দানের মাধ্যমে তার বাস্তবতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা উচিত। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন ও পার্লামেন্টারী বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। জনাব সামাদ তার ভাষণে বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যেমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম লাভ করেন। কিন্তু যুদ্ধের অভিশাপ এখনও বিদ্যমান রয়েছে। তিক্ত স্মৃতি ও অমীমাংসিত সমস্যাবলি উপমহাদেশে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে এখনও বাধা হয়ে রয়েছে। যার ফলে এই এলাকার জনগণের কল্যাণ বিঘ্নিত হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উপমহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার স্বার্থে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় স্থায়ী শান্তি হাসিল করা যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুনর্বার উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে তার সকল বিরাজমান সমস্যার মীমাংসাকল্পে আলাপ-আলোচনা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু তিনি এই কথা উল্লেখ করেন যে, অসমতার ভিত্তিতে কোনো আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে না। তিনি বলেন, একে অপরের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদার স্বীকৃতির ভিত্তিতে কেবল দু’টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। জনাব সামাদ বলেন, বাংলাদেশ আজ একটি বাস্তবতাকে স্বীকার করার মাধ্যমে উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
আইনমন্ত্রী : আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন যে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি বিলম্ব হলে এই উপমহাদেশের শান্তি প্রয়াস বিঘ্নিত হবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের ৪টি স্থায়ী সদস্যসহ ৯১টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তার স্থির বিশ্বাস যে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সুস্পষ্ট রায় প্রদান করবে। তিনি বিশ্বের সকল শান্তিকামী ও স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি জাতিসংঘে বাংলাদেশের ন্যায্য আসন লাভের ব্যাপারে সম্ভাব্য সব রকম প্রভাব বিস্তার করতে আহ্বান জানান। তিনি জাতিসংঘ সনদের চতুর্থ ধারার উল্লেখ করে বলেন, জাতিসংঘ সদস্য হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশের সদস্যপদ অস্বীকার করার অর্থ জাতিসংঘের সদস্যপদের সর্বজনীনতা ক্ষুন্ন করা। সভায় প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এ্যাডভোকেট জনাব কমরুদ্দীন আহমদ, ড. রওনক জাহান, এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ হোসেন ও বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহমদ হোসেন আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।১১২

রেফারেন্স: ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ