You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.09.18 | প্রশাসনকে নয়া রাষ্ট্রের চাহিদা মেটাতে হবে- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

প্রশাসনকে নয়া রাষ্ট্রের চাহিদা মেটাতে হবে- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, যেসকল সরকারি কর্মচারী এখনো পাকিস্তানি মানসিকতা পরিত্যাগ করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোমবার গণভবনে আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী কমিশনারদের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছিলেন। সম্মেলনের কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, সহকারী পুলিশ প্রধান, পুলিশ সুপারগণ যোগদান করেন। এছাড়া এতে মন্ত্রীপরিষদের সদস্যগণ সেক্রেটারিবৃন্দ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের চেয়ারম্যান অন্যান্য পদস্থ সরকারি কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, সব সরকারি কর্মচারীর কর্তৃত্বাধীন। এলাকায় সমাজবিরোধী তৎপরতা চলবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থালম্বন করা হবে। বঙ্গবন্ধু কঠোর পরিশ্রমে আত্মনিয়োগ করার জন্য কতিপয় কর্মচারীর প্রশংসা করেন। বঙ্গবন্ধু এই নতুন রাষ্ট্রের চাহিদা মোকাবেলায় প্রশাসনযন্ত্রকে আরো তৎপর করে তোলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অবশ্যই দ্রব্য মূল্যের দাম কমিয়ে আনতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন ব্যতিত এই স্বাধীনতা অর্থহীন। দখলদারবাহিনীর দ্বারা বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করা প্রত্যেক কর্মচারীর দায়িত্ব। জনগণ যাতে স্বাধীনতার ফল উপভোগ করতে পারে এজন্য তাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই আন্তরিকতা ও সততার সাথে কাজ করতে হবে। সম্মেলনে তিনি প্রায় এক ঘণ্টাকালীন বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী জনগণের সমস্যা সমাধান ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মচারীদের বিপ্লবী চেতনা নিয়ে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর অস্ত্র সমর্পণের বিষয়টি দুনিয়া জোড়া প্রশংসা কুড়িয়েছে। সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু ঐক্য প্রকাশ করে বলেন কিন্তু কতিপয় লোক এখনো অস্ত্র সমর্পণ করেনি। তারা এই অস্ত্রের সাহায্যে অপরাধমূলক ও শান্তি বিঘ্নিত করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। যথাশীঘ্র সম্ভব এদের সকলকে আটক করতে হবে। সমাজবিরোধীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। রিলিফ দ্রব্যের বিতরণের যেসব অভিযোগ রয়েছে তা দূর করার জন্য তিনি কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সাথে বলেন, রিলিফ দ্রব্য বণ্টনে দুর্নীতি ক্ষমা করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামি ১ অক্টোবর থেকে ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করা হবে। ন্যায্যমূল্যে দ্রব্য সরবরাহ স্বাভাবিককরণের উদ্দেশ্যেই এসব দোকান খোলা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, দেশ সব সময়ের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না। তিনি খাদ্যসহ জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সকল ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য কর্মচারীদের নির্দেশ দেন।
বঙ্গবন্ধু পরিত্যাক্ত সম্পত্তি সম্পর্কে প্রণীত আইনকানুন সতর্কতার সাথে মেনে চলার জন্য সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে অন্য কোনো বিবেচনা দ্বারা প্রভাবান্বিত করা চলবে না। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শীর্ষ স্থানীয় সরকারি কর্মচারীদের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তিনি অধীনস্ত কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচারণের নির্দেশ দেন। এরপর সম্মেলনের দুটি অধিবেশন বসে। প্রথম অধিবেশন প্রায় দুইঘণ্টা কাল ও দ্বিতীয় অধিবেশন ৪৫ মিনিটকাল স্থায়ী ছিল। বঙ্গবন্ধু উভয় অধিবেশনে কর্মচারীদের সাথে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুল মান্নানসহ মন্ত্রীপরিষদের কয়েকজন সদস্য এতে উপস্থিত ছিলেন।৬৮

রেফারেন্স: ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ