You dont have javascript enabled! Please enable it! 1967.08.20 | বিভেদপন্থী ১৪ নেতা | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বিভেদপন্থী ১৪ নেতা

গতকাল (শনিবার) হােটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে পি, ডি, এম-এ যােগদানের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে।
অধিবেশনে ৬-দফা কর্মসূচীর প্রতি নিষ্ঠার পুনরুক্তি ও পি, ডি, এম-এর ৮দফা কর্মসূচীকে ৬-দফার মর্ম-বিরােধী অ্যাখ্যায়িত করা হয়। পি, ডি, এম প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সংগঠনের মধ্যে… অভিযােগে কাউন্সিল সভা ১৪ জন পি, ডি, এম-পন্থী নেতাকে সাসপেন্ড করিয়াছে।
তাহাদিগকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানাের জন্য নােটিশ প্রদানের ক্ষমতা সম্পাদককে প্রদান করা হইয়াছে এবং তাহাদের সম্পর্কে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতা একটি ৩ সদস্য বিশিষ্ট সাব-কমিটির উপর ন্যস্ত করা হইয়াছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সম্পাদিকা ও চট্টগ্রামের জনাব এম. এ. আজিজ এই সাব-কমিটির সদস্য। যাহাদিগকে সাসপেন্ড করা হইয়াছে তাহাদের নাম নিম্নে প্রদত্ত হইলঃ
১। জনাব জহিরুদ্দীন ২। জনাব আবদুস সালাম ৩। জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী। ৪। জনাব মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ৫। জনাব আবদুর রহমান খান (কুমিল্লা)। ৬। জনাব মতিউর রহমান (রংপুর)। ৭। জনাব রহিমুদ্দীন(দিনাজপুর)। ৮। জনাব মুজিবর রহমান, রাজশাহী ৯। জনাব সাদ আহমেদ (কুষ্টিয়া) ১০। জনাব রওশন আলী (যশাের)। ১১। জনাব আবদুর রশীদ (যশাের) ১২। জনাব মােমেনউদ্দীন আহমদ (খুলনা) ১৩। জনাব জালালউদ্দীন(সিলেট) ১৪। জনাব লকিতুল্লাহ (বরিশাল)।
অধিবেশনে পি. ডি. এম-এর সহিত কোন প্রকার সহযােগিতা না করার জন্য এবং ‘বিভেদপন্থীদের ৩০শে সেপ্টেম্বরের তথাকথিত কাউন্সিল অধিবেশনে যােগদান না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানানাে হইয়াছে।
ইস্যুভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অধিবেশনে বিভিন্ন ইস্যুতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহিত একযােগে গণ-আন্দোলন গড়িয়া তােলার সপক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে। উক্ত প্রস্তাবে বলা হইয়াছে যে, রাজবন্দীদের মুক্তি, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, মৌলিক অধিকারের প্রতিষ্ঠান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, খাদ্য, দ্রব্যমূল্য হ্রাস, প্রাপ্তবয়স্কের প্রত্যক্ষ ভােটাধিকার, পার্লামেন্টারী শাসনব্যবস্থা, কৃষকশ্রমিকদের দাবি-দাওয়া, পাটের নায্যমূল্য প্রভৃতি প্রশ্নে সর্বদলীয় আন্দোলন গড়িয়া তােলার বাস্তব অবস্থা বিরাজ করিতেছে।
উক্ত দাবীগুলি ৬-দফা কর্মসূচীর পরিপন্থী নয় বলিয়া প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
এই বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে মােট ৮৮৬ জন কাউন্সিলার যােগদান করিয়াছেন বলিয়া আওয়ামী লীগ কর্তৃক দাবী করা হয়। প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের মােট কাউন্সিল সদস্য সংখ্যা হইতেছে ৯৫০। প্রায় প্রতিটি জেলা ও মহকুমা সভাপতি ও সম্পাদক অধিবেশনে শরীক হন। করাচী আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভােকেট আসিফ আহমেদ ও সম্পাদক জনাব কে, এ, তিরমিজী বিশেষ অতিথি হিসাবে কাউন্সিলে যােগদান করেন। পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের সম্মিলিত বিরােধীদলের নেতা জনাব আবদুল মালেক উকিল, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব আবদুল মান্নান, জনাব আবদুল হেকিম চৌধুরী, শেখ মােশাররফ হােসেন, নুরুল হক, মােশাররফ হােসেন, আজিজুর রহমান সরকার, মােসলেম উদ্দিন খান এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব কামরুজ্জামান, এ, বি, এম নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ইউসুফ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অসুস্থতাবশতঃ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব এ, করীম, ডাঃ আজহার উদ্দীন ও জাকেরুল হক চৌধুরী যােগদান করিতে পারেন নাই। কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

সম্পাদিকার রিপাের্ট
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা মিসেস আমেনা বেগম সম্পাদকের রিপাের্ট পেশ করেন। এই রিপোের্ট পি, ডি, এম-পন্থী কতিপয় সদস্যের পার্টি বিরােধী ভূমিকার কঠোর সমালােচনা করা হয়। অধিবেশনে কারারুদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবর রহমানের একটি বাণীও পাঠ করিয়া শােনান হয়। সভাপতি, সম্পাদক ছাড়াও বহুসংখ্যক কাউন্সিলার আলােচনায় অংশগ্রহণ করেন।
করাচী আওয়ামী লীগের নেতা জনাব আসিফ ও তিরমিজী নবাবজাদা নসরুল্লা খান প্রমুখের বিভেদপন্থী কার্যকলাপের তীব্র সমালােচনা করেন।
তাহারা ৬-দফা কর্মসূচীর প্রতি তাঁহাদের আস্থার পুনরুক্তি করিয়া বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানীদের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে বিপথগামী করার উদ্দেশ্যে ৮দফা কর্মসূচী প্রণয়ন করা হইয়াছে। তাহারা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবী জানান।
আলােচনায় অংশগ্রহণকারী কাউন্সিলরগণ প্রায় সকলেই পি, ডি, এমপন্থী নেতৃবৃন্দের পার্টি হইতে আশু বহিস্কারের দাবী করেন। তাঁহারা বলেন যে, দলের কর্মসূচীর প্রতি নিষ্ঠা ও কর্মসূচীর ভিত্তিতে পরিচালিত আন্দোলনে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সততাই নেতৃত্বের জন্ম দেয়। যাহাদের পার্টির কর্মসূচীর প্রতি আস্থা নাই পার্টির জন্য তাঁহারা বােঝাস্বরূপ। তাঁহারা ৬-দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে আন্দোলন চালাইয়া যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করেন।
সভাপতির ভাষণে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ৬-দফার আন্দোলনকে সফল পরিণতির দিকে আগাইয়া লওয়ার উদ্দেশ্যে কর্মীবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের কতিপয় একচেটিয়া শিল্পপতির পণ্যের বাজারে এবং উপনিবেশে পরিণত হইয়াছে।

প্রস্তাবাবলী
অধিবেশনে রাজবন্দীদের মুক্তি, সস্তায় খাদ্যসরবরাহ, ইত্তেফাকের পুনঃপ্রকাশ, সংবাদপত্রের উপর আরােপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, বিভিন্নস্থান হইতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক খাদ্য বিষক্রিয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও ইহার আশু তদন্তের ব্যবস্থা, ভােটারলিষ্টে নাম উঠাইবার নামে জনসাধারণের নিকট হইতে ৫ টাকা ফি লওয়ার নির্দেশ প্রত্যাহার প্রভৃতি দাবীতে বহুসংখ্যক প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে।

ভিয়েৎনামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের বর্বরতার অবসান ও সৈন্য অপসারণ এবং দখলীকৃত আরবভূমি হইতে ইসরাইলী সৈন্য অপসারণের দাবীতেও অধিবেশনে প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে।

রেফারেন্স: সংবাদ, ২০ আগস্ট ১৯৬৭