You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.03.20 | শােষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সভাপতি পদে নির্বাচনের পর শেখ মুজিবের নীতিনির্ধারণী বক্তৃতা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

শােষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য
সভাপতি পদে নির্বাচনের পর শেখ মুজিবের নীতিনির্ধারণী বক্তৃতা

(স্টাফ রিপাের্টার)
পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ মুজিবর রহমান এক দীর্ঘ নীতি নির্ধারণী বক্তৃতা প্রসঙ্গে গতকাল (শনিবার) বক্তৃতা করেন যে, সমগ্র পাকিস্তানের সার্বিক কল্যাণ সাধন, বিশেষ করিয়া সমগ্রদেশে একটি শােষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মুখ্য উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ৬-দফার প্রণয়ন করিয়াছে এবং সমাজতন্ত্রবাদী কর্মসূচী গ্রহণ করিয়াছে।

ইহাদের ভুল ভাঙ্গিবে
নবনির্বাচিত সভাপতি আওয়ামী লীগ কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের স্মরণ রাখিতে হইবে যে, ৬-দফার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আজ যে। সংগ্রামের পথে পা বাড়াইয়াছে, সেপথ কণ্টকাকীর্ণ এবং এইপথে সাফল্য অর্জন। সময় সাপেক্ষ। তবে, ৬-দফার বিরুদ্ধে আজ সেসব মহল দায়িত্বহীন প্রচারণার লিপ্ত আছেন, একদিন-না একদিন তারা তাদের ভুল বুঝিতে পারিবেন। পশ্চিম পাকিস্তানের যেসব নেতা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, অথচ ৬-দফার বিরুদ্ধে প্রচারণা করিতেছেন, তাঁদের পশ্চিম পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জীবনের দুঃখ-দুর্দশার আলােকে ৬-দফার বিচার করিয়া দেখা প্রয়ােজন। কারণ, আওয়ামী লীগের ৬দফায় শুধু পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনই দাবী করা হইয়াছে। তাই পশ্চিম পাকিস্ত নের জনসাধারণ একদিন না একদিন ৬-দফা দাবীকে তাদেরও নিজেদের দাবী বলিয়াই মানিয়া লইবেন।

কোন সংক্ষিপ্ত পথ নাই
শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, ৬-দফার প্রশ্নে কোনও আপােষ নাই। রাজনীতিতেও কোন সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নেতৃবৃন্দের ঐক্যের মধ্যেও আওয়ামী লীগ আর আস্থাশীল নয়। নির্দিষ্ট আদর্শ ও সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ নেতার দল নয়—এ প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রতিষ্ঠান। এপ্রতিষ্ঠান জনক মরহুম হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী কর্মীদের প্রাণাধিক প্রিয় মনে করিতেন। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মী আমার কাছে সহােদর ভাই-এর মত। শহীদ সােহরাওয়ার্দী এ প্রতিষ্ঠানের নেতা, তাঁর নীতিই আমাদের আদর্শ। আওয়ামী লীগ কর্মীদের চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য আহ্বান জানাইয়া শেখ মুজিব বলেন যে, এদেশে আওয়ামী লীগ সবসংগ্রামেরই বাণী প্রথম বহন করিয়াছে।সংগ্রামে তাহারা নির্যাতন ভােগ করিয়াছে সত্য; কিন্তু সংগ্রাম তাহাদের ব্যর্থ হয় নাই। ৬-দফার সংগ্রামও ব্যর্থ হইবে না। ত্যাগ ও তিতিক্ষার দ্বারা এ সংগ্রামকেও আমরা সার্থক করিয়া তুলিব। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদেরই।

দেশকেই হেয় করা হইতেছে
শেখ মুজিবর রহমান সরকারী কনভেনশন দলের নেতৃবৃন্দের ৬-দফা বিরােধী প্রচারণার জবাবদান প্রসঙ্গে বলেন যে, সরকারী নেতারা ৬-দফার বিরুদ্ধাচরণ করিতে গিয়া যেসব বেসামাল উক্তি করিতেছেন তাহাতে দেশ ও দেশবাসীকেই বিশ্বের দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করিতেছেন। তাহাদের মনে রাখা উচিত যে, পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। স্বার্থবাদের বিরুদ্ধে তাহারা সংগ্রাম করিতে বদ্ধপরিকর। সংগ্রামী কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযােগ না করিয়া তাহাদের দাবীদাওয়াকে যদি সরকার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে বিচার করিতে না শিখেন তবে সংগ্রাম তীব্রতর হইবে, সংগ্রামকে বানচাল করা যাইবে না। ন্যায্য দাবীর সংগ্রামের বিরুদ্ধে আজকের সরকারের মত অতীতের বহু সরকারও হীনতম প্রচারণা চালাইয়াছে; কিন্তু তাহাতে কোন ফলােদয় হয় নাই। ন্যায্য দাবী চিরকালই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এবারও আমাদের দাবী যদি ন্যায্য হয়, কুটিল প্রচারণায় এ দাবী দাবাইয়া দেওয়া যাইবে না। সংগ্রাম এবং তীব্রতর সংগ্রামের দ্বারাই আমরা দাবী আদায় করিয়া লইব।

রেফারেন্স: দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ মার্চ ১৯৬৬