বাংলাদেশকে যারা স্বীকার করে না তারা মূখের স্বর্গে আছে- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতা এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে চীনের ভেটোর তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি জানান বাংলাদেশের বাস্ত বতাকে যারা স্বীকার করে না তারা মুখের স্বর্গে বাস করছে। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা বন্ধুত্ব চাই কিন্তু অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারো হস্তক্ষেপ চাই না। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারো হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবো না তা রাশিয়া, আমেরিকা বা ভারত-যেই হোক না কেন। বিদেশি শক্তির কোনো আদিপত্য আমরা মেনে নেব না। আমরা জানি, গোলামীর চেয়ে মৃত্যু ভালো। তিনি বলেন, চীন যদি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে বন্ধুত্ব চায় তা বিবেচনা করবো। চীনা ভেটোর প্রতিবাদে গতকাল রোববার পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিরাট জনসভায় অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছিলেন। মওলানা ভাসানী তার সাথে বঙ্গবন্ধুর চীনে গমন সম্পর্কে গত ৩ সেপ্টেম্বর যে আহ্বান জানিয়েছেন সে সম্পর্কে তিনি বলেন যে, বঙ্গবন্ধু জীবনে কারো কাছে মাথা নত করেন নি এবং মাও-সেতং এর পা ধরে তিনি জাতিসংঘের সদস্য হতে যাবেন না। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী মওলানা ভাসানীর বহত্তর বাংলার দাবি প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি ভুয়া বৃহত্তর বাংলার দাবি করে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিরোধ সষ্টির চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য রয়েছে বলে আজ যে প্রচার চালানো হচ্ছে, অস্থায়ী প্রধানমনীয়ত বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ দেন। তিনি বলেন কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য রয়েছে তবে আমরা নত স্বীকার করব। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন যে বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য রয়েছে। বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়- চীনের এসব কথার প্রতিধ্বনি আজ কেন শোনা যাচ্ছে। জনগণকে তা বিচার করে দেখতে হবে। বাংলাদেশের শত্রুদের অনুচর সেজে কারা কাজ করলো, পাকিস্তানি এক শ্রেণির দালালরা আজ কি করছে এ সম্পর্কে জনগণকে হুশিয়ার থাকতে হবে। বাংলাদেশের দুর্দিনে বন্ধু হয়ে যারা পাশে দাড়িয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আজ কারা সোচ্চার ও কারা অপপ্রচার চালাচ্ছে জনগণকে তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য তিনি আহ্বান জানান। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি কিন্তু স্বাধীনতার মূলভিত্তির ওপর আঘাত হানার কারো কোনো অধিকার নেই। দেশের খাদ্য সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মোট ৩১ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। এর মধ্যে ২৭ লাখ টনের যোগার এ পর্যন্ত করা হয়েছে। তা আসছে। তিনি আরো বলেন যে ন্যায্য মূল্যে কাপড় বণ্টনের ব্যবস্থা করা হবে। আগামি ১ অক্টোবর থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রির জন্য ৪ হাজার ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু করা হবে। চোরাচালানরোধে সরকারি ব্যবস্থারও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে বঙ্গবন্ধু আসার পর চোরাচালানকারী ও কালোবাজারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই জনসভায় অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, যোগাযোগমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান, আওয়ামী লীগ পার্লমেন্টারী পার্টির চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আব্দুর রাজ্জাক ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদও বক্তৃতা দেন। সভাপতিত্ব করেন পার্টির সিনিয়র ভাইসপ্রেসিডেন্ট জনাব কোরবান আলী। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে জাতিসংঘের চীনা ভূমিকার নিন্দা, চোরাচালান বন্ধ ও চোরাচালানী, মজুতদার, মুনাফাখোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, খাদ্য সমস্যা সমাধানমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, বস্ত্রের এক যথাযথ বিতরণ ইত্যাদি দাবি জানানো হয়। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে প্রথম পর্যায়ে ৪৭ সাল পরবর্তী ইতিহাস, পাকিস্তানের কুচক্রী শোষক শাসকদের শাসন শোষণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করেন। আওয়ামী লীগের সগ্রামী ভূমিকা, লাখো লাখো শহীদের আত্মত্যাগ, সংগ্রামী বীর বাঙালির প্রত্যয় ও সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বর্বর পাকিস্তানবাহিনী কীভাবে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে তিনি তুলে ধরেন তার চিত্র। মিত্রবাহিনী ভারতীয় বাহিনীকে সাহায্য করার জন্যে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাও তিনি ব্যাখ্যা করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ভারতীয় বাহিনী বিদায় নেয়ার পর আমাদের জওয়ানেরাই স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
চীনের ভূমিকা প্রসঙ্গে : অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রসঙ্গে তার ভাষণে বলেন, জনগণ আজও ভোলেনি পাকিস্তানকে অস্ত্র যুগিয়েছিলেন। মুক্তিবাহিনীর বীর সগ্রামীদের ক্ষতে অস্ত্রপচার করলে যে বুলেট পাওয়া যায় তা চাইনিজ বুলেট। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, নিপীড়িত জনগণের বন্ধু বলে চীন দাবি করে। স্বাধীনতা সংগ্রামকালে বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার বার বার চীনের কাছে চিঠি দিয়েছে। তার কোনো জবাব মেলেনি। অথচ এর বদলে চীন পাকিস্তানকে ট্যাংক, কামান, গোলাবারুদ ইত্যাদি অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। হত্যা করা হয়েছে বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত ছাত্র জনতাকে। আমেরিকাও সেদিন পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল। দুর্দিনের এই বন্ধুদের বিরুদ্ধে যারা আজ অপপ্রচার করছে তাদের সম্পর্কে হুশিয়ার থাকার জন্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম আহ্বান জানান।
ভেবেছিলাম শুভ বুদ্ধি হবে : সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমতোকে স্বীকার করে নিয়েছে। ভেবেছিলাম চীনও স্বীকার করবে। জাতিসংঘে চীনের ভেটোর আগে আমি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর পর বলেছি- ‘ভাই চীন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। এবার বাস্তব সত্যকে স্বীকার করে নাও। অতীত ভূমিকা আমরা হয়তো ভুলে যেতে পারি; বন্ধুত্বের হাত প্রসার করতে পারি। আর আঘাত দিও না। যে আঘাত দিয়েছো তার জ্বালায় এখনো আমরা জ্বলছি। কিন্তু তারপরেও চীন ভেটো প্রয়োগ করে জাতিসংঘে আমাদের প্রবেশ বন্ধ করলো। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, ২২ বছর আমেরিকা জাতিসংঘে চীনের অন্তর্ভুক্তির বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু সেদিন আমরা চীনকে সমর্থন দিয়েছিলাম কারণ চীন ছিল বাস্তব সত্য। সেদিন চীন বলছিল, জাতিসংঘ অর্থহীন কারণ এতে চীনের প্রবেশাধিকার নেই। সেই চীন বাংলাদেশের বাস্তব সত্যকে উপেক্ষা করে কেন ভেটো দিল।
চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি : সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে,আজ এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল ও পত্রপত্রিকা বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য রয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। চীনের সুরে তারা ধুয়া তুলছে। বলছে যশোরে ২৫ হাজার, ময়মনসিংহে ২ হাজার, ঢাকায় ১০ হাজার সৈন্য রয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, বাংলাদেশ রক্ষীবাহিনীর প্রধান হলেন বাংলাদেশের কর্নেল নুরুজ্জামান। অথচ প্রচার চালানো হচ্ছে রক্ষীবাহিনীর প্রধান নাকি একজন ভারতীয়।
মওলানা ভাসানী প্রসঙ্গে : মওলানা ভাসানীর ভূমিকা এবং ৩ সেপ্টেম্বরের ভুখা মিছিল সম্পর্কে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। ভুখা মিছিলে কারা যোগ দিয়েছিল তিনি তারও বিবরণ দেন। মওলানা ভাসানীর সেদিনের বক্তৃতা সম্পর্কে তিনি বলেন, মওলানা সাহেব বলেছিলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান তাকে সাথে নিয়ে যদি চীনে যায় তবে চীন ভেটো দেবে না। নইলে ২২ বছর চলে গেলেও চীন ভেটো দেবে। গণভবনেও মওলানা সাহেব ঠিক একই কথা বলেছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, সেদিন নিরবে আমি সব কথা শুনেছি। কোনো জবাব দেইনি। মওলানা সাহেব বৃদ্ধ মানুষ তাকে আপ্যায়ন করেছি। ফলমূল মিষ্টান্ন প্রচুর খেয়েছেন। আর তখন বাইরে পার্লামেন্টারী ভুখা মিছিলের লোকজন বৃষ্টির মধ্যে ভিজেছে। আমি তা উপভোগ করেছি।
টেপ করে রেখেছি : সৈয়দ নজরুল ইসলাম সভায় জানান যে, গণভবনে সেদিন মওলানা সাহেবের প্রত্যেকটি কথা টেপ রেকর্ড করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, মওলানা সাহেব বলেছেন যে, তিনি ও বঙ্গবন্ধু চীনে গেলেই স্বীকৃতি পাওয়া যেত। তবে কি ধরে নেবো, যেহেতু এই যাওয়া হয়নি তাই তিনি চীনকে ভেটোর কথা বলেছেন।
বৃহত্তর বাংলা প্রসঙ্গে : মওলানা ভাসানীর বৃহত্তর বাংলা প্রসঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, তিনি পশ্চিম বাংলাকে নিয়ে বৃহত্তর বাংলার কথা বলেছেন। আবার বলছেন যে, লাখ লাখ লোক ভারত থেকে এসে সব খেয়ে যাচ্ছে। এসব কথার মধ্যে কি সামঞ্জস্য রয়েছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, আমার বাংলা বলতে আমরা বুঝি সেই বাংলা যেখানে পদ্মা, মেঘনা, সুরমা, তিস্তা প্রবাহিত। আর পশ্চিম বাংলা হলো ভারত। ভুয়া বৃহত্তর বাংলার দাবি তুলে মওলানা সাহেব ভারতের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, পশ্চিম বাংলার লোক সুখে থাকুক-এই আমরা চাই। আর আমার বাংলা নিয়ে সুখে থাকতে চাই। ভারতবর্ষ আক্রমণ করে পশ্চিম বাংলা জয় করার মতো কোনো বোকামী আমরা করবো না- এই সম্পর্কে বাংলার মানুষ সচেতন রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের প্রসঙ্গে মওলানা ভাসানী যে কথা বলেছেন সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, কেনো আমরা রাশিয়ার সাথে শত্রুতা করতে যাবো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ৭ম নৌবহর নিয়ে ধেয়ে আসছিল তখন ব্লাডিভস্টর থেকে বাংলাদেশের দিকে সোভিয়েত রণতরা অগ্রগামা করার হুমকি যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন না দিত তবে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের মতো শ্মশান হতো।
পদত্যাগ করবো কেন : বর্তমান সরকাকে পদত্যাগ করার জন্যে মওলানা ভাসানী যে আহ্বান জানিয়েছেন সে সম্পর্কে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পদত্যাগ করবো কেন? তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পরপরই শাসনতন্ত্র প্রণিত হবে, দেশে নির্বাচন হবে। তাতে যদি আওয়ামী লীগকে দেশের লোক না চায় তবে গণ প্রতিনিধিদের কাছে স্বেচ্ছায় শাসনভার হস্তান্তর করা হবে। কারো হুমকিতে এটা করা হবে না। তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকার স্বাধীনতা অর্জনকারী সরকার, জনগণের সরকার জনগণের প্রতি আমাদের দ্বায়িত্ব রয়েছে।
চোরাচালান প্রসঙ্গে। চোরাচালান বন্ধের জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম জনগণ ও সকল রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, শুধুমাত্র ভারতীয়দের দোষ দিলে চলবে না। চোরাচালানের জন্য দায়ী মুনাফাখোর ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশের এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী লোক। চোরাচালান নিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি ময়মনসিংহ, যশোর, রাজশাহী, রংপুর সিমান্তে কাফু জারির ব্যবস্থার উল্লেখ করেন। কয়েকদিন আগে যশোর সিমান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদল চোরাচালানীকে যে ধরেছেন তার উল্লেখও তিনি করেন। তিনি বলেন, এর সাথে দুজন বিপ্লবীও সংশ্লিষ্টও ছিল। তাদের গ্রেফতারের পর তাদের দল আবারো ধর্মঘট ডাকেন। অথচ আওয়ামী লীগের একজন এমসিএ জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেয়া হয়েছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, চোরাচালান দমন করতে হলে কোনো দলের স্বজনপ্রীতি করলে চলবে না। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পর চোরাচালান ও কালোবাজারী দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাজউদ্দীন আহমদ : অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন যে, স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ সব সময়ে একটি বাস্তব ঘটনা হয়েই থাকবে। চীন আমাদের স্বীকৃতি দিক আর না দিক বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হোক আর না হোক, স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব থাকবেই। জনাব আহমদ রোববার প্রতিবাদ দিবসে পল্টনের জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। বাসস-এর এ খবরে বলা হয় যে, তিনি বলেন, আমাদের কেউ শত্রু হবে, কেউ বন্ধু হয়ে থাকবে। নিরাপত্তা পরিষদে চীনা ভেটোর প্রসঙ্গ তুলে অর্থমন্ত্রী বলেন, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য এই যে, চীন ভেটো দিয়েছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি। এই দুই দেশই কিন্তু আমাদের দেশকে তাদের প্রভাবাধীন এলাকায় পরিণত করতে চায়। তিনি বলেন, চীনের স্বীকৃতি বা জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার ওপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমতো নির্ভর করে না। উপমহাদেশে উত্তেজনা হ্রাস করার জন্যেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের স্বীকৃতি ও জাতিসংঘের সদস্য হতে চায়। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য জাতীয় ঐক্য ও উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। জনসাধারণের দুর্দশা দূর করার জন্য কৃষি ও শিল্প উৎপাদন অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা করতে হবে। জনাব তাজউদ্দিন জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে অংশগ্রহণে এগিয়ে আসার জন্য তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।৩৫
রেফারেন্স: ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ