বন্ধুরাষ্ট্র বিরোধী প্রচার চলতে দেয়া হবে না
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের বন্ধুত্ব বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো নীতি দেশে আর প্রচার করতে দেয়া হবে না। শনিবার গণপ্রজাতন্ত্রী বুলগেরিয়ার জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে মহান ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পর বুলগেরিয়াসহ পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের ভূমিকা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশ-বুলগেরিয়া মৈত্রী সমিতি এর আয়োজন করেন। সমিতির সভাপতি ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ আলী আহসান এতে সভাপতিত্ব করেন। ঢাকায় নিযুক্ত বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত মাননীয় নিকোলায়ে বায়েজিয়েভও বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সহ-সভপতি জনাব কোরবান আলী, কমরেড মনি সিং, কমরেড আব্দুস সালাম, কমরেড খোকা রায়। কমরেড অনিল মুখার্জী ও ঢাকায় বসবাসকারী বুলগেরিয়ার নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুস সামাদ বলেন, বুলগেরিয়ার জনগণ বিশ্বের নির্যাতিত ও মুক্তিকামী মানুষের পাশে রয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনকালে প্রমাণিত হয়েছে যে বুলগেরিয়া আমাদের প্রকৃত বন্ধু। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশ গড়া ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েমের পথে সম্ভাব্য বাধাসমূহ অতিক্রমে আমরা বুলগেরিয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। বিপ্লবের পর বুলগেরিয়াও একটি কৃষি প্রধান বিধ্বস্ত দেশ ছিল।
মওলানা ভাসানীর সমালোচনা : মওলানা ভাসানীর সাম্প্রতিক ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৃদ্ধ নেতা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বন্ধু দেশসমূহ ও আমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে আমি ভারত সম্পর্কে বৃদ্ধ নেতার মিথ্যা প্রচারের তীব্র প্রতিবাদ করছি। বৃদ্ধ নেতা মহান ভারতের বিরুদ্ধে কুৎস্যা রটনা করে জাতিসংঘে চীনের ভেটো দানের সমর্থন যুগিয়েছেন। জনাব আব্দুস সামাদ বলেন, কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধকালে এই নেতাই ভারতে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিলেন-চীনে আশ্রয় নেননি। বরং এ সময় মাও-সেতুং এর কাছে প্রেরিত তারবার্তারও মিলেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ইদানিং পাকিস্তান রেডিও ‘হক কথা প্রচারের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আর এই ‘হক কথা’র মাধ্যমেই বৃদ্ধ নেতা বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের বিরুদ্ধে কুৎস্যা প্রচারে প্রয়াস পাচ্ছেন।
চীন মাইন পেতেছিল : জনাব সামাদ বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে চীনে সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতা পাকিস্তানি সেনারা বঙ্গপসাগরের উপকূলে চীনা মাইন পেতে রেখে গেছে। উদ্দেশ্য ছিলস্বাধীনতার পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য বন্ধুরাষ্ট্র থেকে খাদ্যসহ সাহায্য জাহাজ এসে না পৌছতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ খাবার ও অন্যান্য সাহায্য না পায়। অত্যন্ত দুঃখজনক যে এই নেতা এই সম্পর্কে টু-শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। বরং সোভিয়েত ইউনিয়ন এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে এই বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানেয়াট শুরু করে দেন। উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে বন্ধুহীন করে ফেলা।
বুলগেরিয় রাষ্ট্রদূত : এর আগে বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত মাননীয় নিকোলায়ে বোয়েজিয়েভ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সগ্রামে বুলগেরিয়ার জনগণ পাশে ছিল। স্বাধীনতার পর দেশ গঠনেও বুলগেরিয়া বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দেশের পুনর্গঠনে আমাদের শুভকামনা থাকবে। মাননীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। শেখ মুজিবুর রহমান বুলগেরিয়ার জনগণের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
রেফারেন্স: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ