You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুদ্রামানের উপর কৌশলে আঘাত হানার চক্রান্ত চলছে- তাজউদ্দীন আহমদ

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রামানের ওপর কৌশলে আঘাত হানার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মিনিষ্ট্রিয়েল কর্মচারী সমিতি ঢাকা জেলা শাখার নবনির্বাচিত পরিষদের সম্বর্ধনা উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। ঢাকা জেলা পরিষদ ভবনে শুক্রবার বিকেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমবায় মন্ত্রী জনাব শামসুল হকও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পূর্বাহ্নে কর্মচারী সমিতির জনৈক কর্মকর্তার মুদ্রামান গ্রাস সংক্রান্ত এক উক্তির জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রামান ভারতের মুদ্রামানের সমান করার পরও কেন টাকার দাম কমল, তা অনুধাবন করতে হবে। কারণ এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মুদ্রামান হ্রাস করা হয়েছে কি না তাও দেখতে হবে। কারণ, পাকিস্তানের মুদ্রামানের চাইতে বাংলাদেশের মুদ্রামান আন্তর্জাতিক বাজারে শতকরা ৫০ ভাগ বেশি। বাংলাদেশে মুদ্রামানে প্রতি পাউন্ডের মূল্য হলো ১৮,৯৬ পয়সা। পাকিস্তানি আমলে ১১.৪২ পয়সা বলা হলেও বোনাস ভাউচারে। প্রতি পাউন্ডের মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বেতন কমিশনের সুপারিশ সকল সরকারি কর্মচারীর অভাব-অভিযোগ। দূর করার চেষ্টা করা হবে। তবে, চাকুরি পুণর্গঠন কমিটির রিপোর্টের আগে বেতন কমিশন রিপোর্ট দিতে পারবে না। কারণ চাকুরির ক্ষেত্রে প্রায় শ’দুয়েক ক্যাডার ও গ্রেড আগে দূর করতে হবে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাই বেতনের ক্ষেত্রে কোনো আকাশ-পাতাল ব্যবধান করা হবে না বলেই তিনি আশা করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে কাজের চাইতে এখন দাবিনামা পেশের প্রতিযোগিতা চলছে। তিনি বলেন, সাড়ে সাত টা থেকে দুইটা পর্যন্ত অফিসের সময়সুচি পাকিস্তান ও সৌদি আরব সাড়া দুনিয়ার কোথাও নেই। তিনি বলেন, যে অফিসের এই সময়সূচি তিনি কোনোদিন সমর্থন করতেন না এবং এখনও করেন না। অর্থমন্ত্রী বলেন, সর্বস্তরে আজ ফাকিবাজী ও ভুল বুঝাবুঝি চলছে। কে কি করে কত পয়সা আয় করবে, সেই ফিকিরে সবাই ব্যস্ত সাধারণ মানবিক মমত্ববোধ আজ নেই।
সাপ্তাহিক পত্রিকার সমালোচনা : অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর রাতারাতি প্রকাশিত কতিপয় ভুইফোর সাপ্তাহিক পত্রিকায় বক্তব্যের সাথে গত এক মাস ধরে ঢাকায় মনিটর করা পাকিস্তান বেতারের বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে। তিনি বলেন, এসব পত্রিকা সাম্প্রদায়িক বিবেধ, জাতীয় ঐক্যে ফাটল ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উস্কানী দিচ্ছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে আঞ্চলিকতার বিবেধও এইসব উস্কানী দাতারাই সৃষ্টি করেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ বিরোধী ও অখণ্ড পাকিস্তানে সমর্থক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাও ঢাকায় বিলি করা হচ্ছে। কঠিন ভাষায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব ষড়যন্ত্রকারীদের অবশ্যই নির্মূল করা হবে।৩১

রেফারেন্স: ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!