You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাড়ে সাত কোটি মানুষের সঙ্গে চীন আরো একবার বিশ্বাসঘাতকতা করল- সৈয়দ নজরুল ইসলাম

অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম গতরাতে বলেন যে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে ভেটো প্রয়োগ করে চীন আরো একবার বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। চীনার ভেটো সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাওয়া হলে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের নিকট বলেন বাংলাদেশ প্রশ্নে চীনের এই ভূমিকা এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার জনগণের সাথে বিপ্লবী একাত্মতার চীনা দাবির ‘অসারতাকেই’ সুস্পষ্ট রূপে উম্মোচিত করেছে। তিনি বলেন, আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট ও অনুচরদের উৎসাহিত করা এবং কূটনৈতিক ভাবে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক ফাটল ধরানোই চীনা ভেটোর উদ্দেশ্যে। সৈয়দ নজরুল অভিযোগ করেন যে, এশিয়া চীন তার সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী চক্রান্তের স্বার্থে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য যাবতীয় প্রগতীশিল প্রচেষ্ঠাকে বানচাল করে উপমহাদেশে উত্তেজনা জাগিয়ে রাখতে চেয়েছেন। সৈয়দ নজরুল বলেন, চীনের ভেটো দানের খবরে বাংলাদেশ ব্যথিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে চীনের ভূমিকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গণচীনের সাথে সৌহার্দ্য মূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ইচ্ছুক ছিল। সৈয়দ নজরুল বলেন যে, সাম্রাজ্যবাদীর শক্তির কারসাজিতে চীন নিজেই ২০ বছর যাবৎ জাতিসংঘের বাহিরে ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে চীন স্বীয় ভ্রান্তি অনুধাবনে সমর্থ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য তা চীনের উপলব্ধি করা উচিত। এই পর্যন্ত ৮৯টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে চীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপন করে তা একান্তই মিথ্যা ও বিদ্বেষপ্রসূত এবং এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের শামিল। চীনার স্বীয় এজেন্টকে খুশি করার জন্যই এরূপ কাজ করছে। চীনের নীতি হলো আতঙ্ক জাগিয়ে রেখে উপমহাদেশে অগ্রগতি, শান্তি ও স্থীতিশীলতা ব্যহত করা। আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিপ্লবীদের সাথে চীন যে একাত্মতা দাবি করে তা ফাকা বুলিমাত্র। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী সদস্য হওয়ার জন্য যাবতীয় গুণের অধিকারী। চীন সরকার তার শত্রু মনোভাব অবশ্যই ত্যাগ করবে এবং বাংলাদেশের বিশ্বের দরবারে আসন লাভ করার মৌলিক দাবি ও সার্বভৌমত্মে স্বীকার করবে। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি লোক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চীন ও তার সমর্থকদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের আসন লাভ করার জন্য সকল বাধা অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর। এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপিত হবে এবং বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য করার জন্য অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র সমর্থনদান করবে বলে আমরা আশা করি। তার ফলে নিরাপত্তা পরিষদে চীনের রাজনৈতিক ও নৈতিক অধঃপতনও প্রমাণীত হবে।৯৫

রেফারেন্স: ২৭ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!