You dont have javascript enabled! Please enable it!

একটি লোকও যাতে অনাহারে না মরে সেজন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- সৈয়দ নজরুল ইসলাম

দেশের খাদ্য সমস্যা সমাধান করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’ এই উক্তি পুনরুল্লেখ করে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, একটি লোকও যাতে অনাহারে না মরে তার জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রতিশ্রুত। তিনি ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানায় পুনরুৎপাদনের উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ও আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টরী পার্টির চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার ফ্যাক্টারী সর্বোচ্চ বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ৩ লাখ ৪০ হাজার টন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার ভাষণে বলেন যে, জনসাধারণের দুঃখ দুর্দশা ও সমস্যা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর সরকার সম্পূর্ণ জ্ঞাত আছে। তিনি আরো বলেন, জনসাধারণ খাদ্য ও বস্ত্রের প্রশ্নে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, সরকার সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ জ্ঞাত। বর্তমান খাদ্য সমস্যা বিগত দখলদার সরকারেরই সৃষ্ট-একথা জনসাধারণকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ ক্ষমতায় আসার পূর্ব থেকেই দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল। খাদ্য ঘাটতির জন্য বর্তমান সরকার দায়ী নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নের জন্য কখনোই কিছু করেননি। খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু ঘাটতি আরো বেশি হতে পারে। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে খাদ্য সগ্রহের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খাদ্য আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রা কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। খাদ্য আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে চালের সরবরাহ সীমিত। সরকার বিশ্ব বাজার থেকে ৩ লাখ টনের বেশি চাল সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে খাদ্যের বাকি ঘাটতি গম আমদানি করে মেটাতে হতে পারে। সৈয়দ নজরুল বলেন, যদি সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল সরবরাহ করতে না পারে তাহলে অবশ্যই জনসাধারণকে গম অথবা আটা সরবরাহ করবে। প্রয়োজন মেটাবার মতো চাল দেশে উৎপাদিত না হওয়া পর্যন্ত গম খাবার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আবেদন জানান। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভর করা দেশের উচিত হবে না। তিনি বলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য উৎপাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, উৎপাদন যোগ্য জমির পরিমাণ সীমিত সুতরাং সমস্যা সমাধানের পথ হলো জমির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো। উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, কৃষি উন্নয়নের সাথে সাথে শ্রমিকদের কঠিন পরিশ্রম করে সার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, যদি ঘোড়াশালও ফেঞ্চুগঞ্জের সার ফ্যাক্টরির দুটিতে যথাযথ উৎপাদন হয় তাহলে দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে ৭৫ হাজার টন রপ্তানিযোগ্য সার হবে। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের এক পর্যায়ে দেশে আরো দুটি সার ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সৈয়দ নজরুল উল্লেখ করেন যে, দেশের মানুষ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্যই নয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্যও সগ্রাম করেছিল। তিনি বলেন, দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।৮৫

রেফারেন্স: ২৫ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!