শাখা বৃদ্ধি নয় জনকল্যাণই ব্যাংকের লক্ষ্য হওয়া উচিত- তাজউদ্দীন আহমদ
অর্থ ও পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, শাসনতন্ত্রের কাঠামো হবে। গণতান্ত্রিক এবং অর্থনীতির কাঠামো হবে সমাজতান্ত্রিক। গতকাল শুক্রবার বিজয় নগরস্থ সেন্ট্রাল ল’কলেজ ভবনে অগ্রণী ব্যাংকের নতুন শাখার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহদোয় প্রধান অতিথীর ভাষণ দিচ্ছিলেন। নব উদ্বোধিত শাখাটি অগ্রণী ব্যাংকের ২৪৮ তম এবং সারা বাংলাদেশে ১১৯৯ তম শাখা ব্যাংক। মন্ত্রী বলেন, আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে এ দেশ পাইনি- সগ্রামের মাধ্যমে বহু রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে পেয়েছি। এখানে রক্তের দাগ মোছেনি। কত বড় ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি এবং তার আদর্শ কি ছিল তা মনে রাখতে হবে। তিনি তার বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেন, জাতীয়করণ করার অর্থই সমাজতন্ত্র নয়- সমাজতন্ত্রের পথে এটা একটা বাস্তব পদক্ষেপ মাত্র। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির জন্য ব্যাংকের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাংকের ভূমিকার পরিবর্তন করতে হবে। ব্যাংকের গণমুখীনতার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, গণমুখী মানে গণভিত্তিক নয়। গণমুখী মানে গণ কল্যাণকর। গণমুখীর যদি গণভিত্তিক ব্যাখ্যা করা হয়। তাহলে ২০৪৮ টি শাখা খুললেও কোনো ফল হবে না। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের মানুষিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে অগ্রগতি সাধিত হবে না। সমাজতন্ত্রের বির্তকমূলক প্রশ্নের ওপর আলোকপাত করে জনাব তাজউদ্দীন বলেন, সমাজতন্ত্রের বিভিন্ন রকম ব্যাখা দেয়া হচ্ছে। এই বিতর্ক যদি মাথা ফাটাফাটি পর্যন্ত পৌছায় তাহলে তা শুধু দুঃখেরই নয়, নিন্দারও ব্যাপার হবে। এই ব্যাখ্যার পরিবর্তন করলে সমাজতন্ত্র হয় না। কেউ যদি পরিবর্তন করে তাহলে বুঝতে হবে তারা ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় তা করছে। তাদের পেছনে দেশি ও বিদেশি সহযোগীতা থাকা বিচিত্র নয়। অর্থমন্ত্রী তার ভাষণে গঠনমূলক সমালোচককে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু কেউ যদি ভিত্তিহীন খবর প্রচার করে সরকারকে সমালোচনা করে তাহলে সরকার বা জনগণ কারোই কোনো উপকার হবে না, বরং সমস্যার জটিলতাই বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি মতামত প্রকাশে স্বাধীনতার পক্ষে তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, এ ব্যাপারে একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে।৮৬
রেফারেন্স: ২৫ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ