সমাজতন্ত্রের বিঘ্ন সৃষ্টিকারী মৌলিক অধিকারের বিরোধীতা করব- তাজউদ্দিন আহমদ
রাষ্ট্রীয় ৪টি কাঠামোর ভিত্তিতেই ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র রচিত হবে এবং গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা সমভাবেই বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ উক্ত মন্তব্য করে। এ প্রসঙ্গে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ একথাও বলেন যে, গণতন্ত্রের মধ্যে বটবৃক্ষের ন্যায় অনেক জটও রয়েছে। সমাজতন্ত্রের উত্তরণের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। ভারত এবং অন্য কতিপয় দেশও এই মৌলিক অধিকার তাদের মধ্যে অন্যতম। তাই শাসনতন্ত্রে সমাজতন্ত্র অর্থাৎ দেশের চূড়ান্ত লক্ষ্যের পথে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী কোনো মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্তির তিনি নিশ্চয় বিরোধীতা করবেন। তার বিরোধীতার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এটি শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হলে আইনের সাহায্যে ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করে সুবিধাবাদীরা সমাজতন্ত্রের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। ভারত ও অন্য কতিপয় দেশেও এই মৌলিক অধিকারের জন্য তেমন কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ জনসাধারণ একটি পরিবর্তন চায়। কতিপয় মিথ্যা সংবাদবাহীর গাঁজাতুল্য সপ্তাহিকী সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, গাজার নেশা আছে তাই এটা মানুষকে একদিকে যেমন আকৃষ্ট করে অন্যদিকে তেমনি বিভ্রান্তি করে। তিনি সংবাদপত্রে সত্যকার বক্তব্য তুলে ধরতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানান। দ্রব্যমূল্যের ক্রম বৃদ্ধির সম্পর্কেও তিনি সাংবাদিকদেরকে দেশের সকল পারমিটধারীর তালিকা জনসমক্ষে তুলে ধরতে বলেন, যাতে অসাধু ব্যবসায়ী আর জনগণকে ফাকি দিতে না পারে। পরিশেষে তিনি ছাত্রসমাজের প্রতি দেশের স্বার্থসম্বলিত বিপ্লবের আহ্বান জানান ও সকল হিংসাত্মক মনোভাব পরিহার করে পরস্পরের বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাবান ও সহনশীল হওয়ার এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাধ্যক্ষ ড. আবদুল লতিফ। উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক, বিদায়ী সহ-সভাপতি, নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে একটি বিচিত্রানুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।৫৩
রেফারেন্স: ১৭ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ