খাদ্যের ব্যাপারে চাউলের উপরে চাপ কমান- অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী
ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছেন, মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে আমরা সমাজতন্ত্র চাই না। গণতন্ত্রের মাধ্যমেই আমরা সমাজতন্ত্র চাই। ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী দেশের খাদ্য পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, তার সরকার যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থার ন্যায় দেশের খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলা করার জন্য অবিরাম আপ্রাণ চেষ্টা করে চলছেন। তিনি দেশবাসীকে আগামি ২ মাস চাউলের পরিমাণ কমিয়ে আটা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান। ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের অদূরে শীতলক্ষ্যার অপর তীর সোনাকান্দার আদমজী জুট মিলের পাট গুদামের শুভ পাট ক্রয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। গণপরিষদ সদস্য জনাব এ, কে, এম, শামসুজ্জোহা এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পাটকল কর্পোরেশনের সদস্য জনাব রশিদ আহমদ আদমজী পাটকলের জেনারেল ম্যানেজার জনাব শফিকুর রহমান, আদমজী পাটকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জনাব সায়দুর রহমান সাধু প্রমুখও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার ভাষণে বলেন, আমরা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কায়েম করব। তার অর্থ একনায়কত্ব নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু জনসাধারণকে গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছেন। আমরা কেমন গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র চাই শাসনতন্ত্রে তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে। তিনি আরও বলেন, শতকরা ৮২ ভাগ পুঁজি জাতীয়করণ করা সত্ত্বেও যদি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনের ব্যাপারে সন্দেহ করা হয়, তা হলে তা ভুল করা হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনে এখনও পুরাপুরি সমাজতন্ত্র কায়েম করা সম্ভব হয় নাই। সমাজতন্ত্রের পথে তারা যতটুকু অগ্রসর হয়েছে, তার জন্য বহু বছর সময় লেগেছে এবং তা একনায়কত্ব-এর মাধ্যমে করা হয়েছে। আমরা একনায়কত্ব বিশ্বাস করি না। সৈয়দ নজরুল ইসলাম খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, জাপান ও থাইল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশেরই বিক্রি করার মতো উদ্বৃত্ত চাউল নাই। তাই, থাইল্যান্ড ও জাপান থেকে ৩ লক্ষ টন চাউল আমদানির জন্য তার সরকার বৈদেশিক মুদ্রা বরাদ্দ করছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে তার মন্ত্রীসভা প্রত্যেহ আলোচনা করছেন। তিনি জনসাধারণকে আগামি ২ মাস চাউলের পরিবর্তে বেশী আটা খাওয়ার অভ্যাস করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, বিদেশ থেকে গম আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি জানান যে, অনাবৃষ্টির জন্য যশোর, দিনাজপুর, রংপুরে আমন ফসলের বপন সম্ভব হয় নাই। সরকার এখন থেকেই শীতকালীন ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পাওয়ার পাম্প আমদানির ওপর অধিক গুরুতৃদান করছেন।
রেফারেন্স: ১৭ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ