কূটনৈতিক মহলের মতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের আসন লাভ নিশ্চিত
এ মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ মহল জানান যে, “আমরা ভুট্টোর বানচালে কোনো গুরুত্ব আরোপ করি না।” এখানকার কূটনৈতিক মহলের মতে চীনের ভেটো প্রয়োগের হুমকি পাকিস্তানকে সন্তুষ্ট করা এবং পাকিস্তানের অনুকূলে বাংলাদেশ থেকে কিছুটা সুবিধা আদায়ের চালবাজি মাত্র। এখন এটা পরিষ্কার যে, পাকিস্তান তার মিত্র গণচীনের সাথে যোগ সাজশে জাতিসংঘে বাংলাদেশের আসন গ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টির চক্রান্ত করেছে। যুদ্ধ অপরাধীরদের বিচার এবং ভারতের আটক যুদ্ধবন্দিদের প্রত্যার্পণে ব্যাপারে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই তার উদ্দেশ্য। পর্যবেক্ষণ মহল এটাও মনে করেন যে, বিভিন্ন কারণে চীন শেষ পর্যন্ত ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ নাও করতে পারে। চীনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি চীন বাংলাদেশকে উপেক্ষা করতে পারে না। কারণ সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। বাসস ও বিপি আই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন যে, নিরাপত্তা পরিষদে চীন ভেটো প্রয়োগ করলেও সাধারণ পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাভ করে বাংলাদেশ বিশ্বসংস্থায় আসন লাভ করতে সমর্থ হবে। এই প্রসঙ্গে তার উল্লেখ করেন যে, এই পর্যন্ত ৮৬টি দেশ বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করছে। তাদের সকলেই সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের পক্ষে ভোট প্রদান করবে। সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়া নাগাদ আরও কিছু সংখ্যক রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা যায়। ৫৫টি জোট নিরপেক্ষ দেশের মধ্যে ৩১টি দেশ এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও আশা করা যায় যে, জোট নিরপেক্ষ দেশরূপে তার সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশকে সমর্থন করবে।
ডঃ মল্লিকের আশা : নয়াদিল্লিতে ইউ, এন, আই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, চীন বাংলাদেশের জাতিসংঘ ভুক্তিতে বাধা প্রদান করবে না বলে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. এ, আর, মল্লিক আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে ৮৬ টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আশা করা যায় যে, সে দেশগুলো বাংলাদেশের জাতিসংঘ ভুক্তিও কামনা করে। শুধু পাকিস্তানকে খুশি করার জন্য চীনের পক্ষে এই বিশ্ব জনমতের বিপক্ষে যাওয়া সম্ভব না।৩৯
রেফারেন্স: ১৩ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ