You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.08.11 | স্বস্তি পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশের আবেদনপত্র ১১-১ ভোটে আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

স্বস্তি পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশের আবেদনপত্র ১১-১ ভোটে আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত

জাতিসংঘ চীনের ঘোর আপত্তি অগ্রাহ্য করে বৃহস্পতিবার রাত্রে স্বস্তি পরিষদ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য দাখিলকৃত বাংলাদেশের আবেদনটি এর অন্তর্ভুক্তি কমিটির নিকট প্রেরণ করে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় উক্ত কমিটিতে এই প্রশ্নে আলোচনা হওয়ার কথা।
স্বস্তি পরিষদের ১৫ জন সদস্যের সকলকে নিয়ে উক্ত কমিটি গঠিত। কমিটি এই আলোচনার জন্য গোপন বৈঠকে মিলিত হবে বাংলাদেশের আবেদনপত্রটি অনুমোদনের জন্য কমিটিতে কোনো সুপারিশ করা হলে চীন কর্তৃক এর বিরুদ্ধে ভোট দানের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবেদনপত্রটি যদি স্বস্তি পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভোটে দেওয়া হয়, সম্ভবতঃ আগামি সপ্তাহে তা দেওয়া হবে। তবে চীনের ভেটো প্রদানের সম্ভাবনা সুনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে এবং তা হলে বিশ্বসংস্থায় যোগদানের পর তা হবে পিকিং এর প্রথম ভেটো প্রয়োগ। তবে কূটনৈতিক মুখপাত্রগণ গতরাত্রে বলেন, এ ব্যাপারে কার্যক্রম গ্রহণ পিছিয়ে দিয়ে ভেটো প্রয়োগের আশঙ্কা এড়াবার মতো কোনো পদ্ধতি এখনও বের করা যেতে পারে। স্বস্তি পরিষদের বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত মি. হুয়াং হুয়া বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্রটি আলোচ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত করার বিরোধীতা করেন। কিন্তু তিনি একাই বিরোধীতা করেন। বিষয়টি ভোটে দেওয়া হলে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ১১ ভোটও বিপক্ষে ১ ভোট পড়ে। তিনটি সদস্য রাষ্ট্র-গিনি, সোমালিয়া ও সুদান এ ব্যাপারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে নাই।
স্বস্তি পরিষদ বাংলাদেশ সরকারের আবেদনপত্রটি বিবেচনার পর পরিষদের কার্যবিধি অনুযায়ী জরুরি আলোচনার জন্য প্রশ্নটি অন্তর্ভুক্তি কমিটির নিকট প্রেরণ করে। অন্তর্ভুক্তি কমিটির নিকট প্রেরণের প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটি ছাড়াই গৃহীত হয়ে যায়। প্রস্তাব করেন বেলজিয়াম রাষ্ট্রদূত এডওয়ার্ড লঙ্গারষ্টে। পূর্বাহ্নে আবেদনপত্রটি আলোচ্য সূচীর অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা তা নিয়ে একদিকে চীন এবং অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের মধ্যে প্রচণ্ড বাকযুদ্ধ হয়।
চীনের বক্তব্য : চীন রাষ্ট্রদূত মি. হুয়াং দৃঢ়তার সাথে বারংবার বলেন, বাংলাদেশ সদস্যপদ লাভের যোগ্য নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিরোধী। জাতিসংঘ বাংলাদেশ এবং ভারতকে যুদ্ধবন্দিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া সতেও পরিস্থিতি হচ্ছে যে, ভারত বাংলাদেশ হতে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ১০ সহস্রাধিক পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি এখন আটক রয়েছে। বাংলাদেশ আলোচনায় বসতে সম্মত হওয়ার পূর্বেই পাকিস্তান কর্তৃক স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে জিদ করছে। এটা হচ্ছে ভারতের সাথে যোগসাজশে পাকিস্তানকে ব্ল্যাকমেল করা এবং প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। বাস্তবিকই জাতিসংঘের নিছক তামাসা এবং একটি সাংঘাতিক কৌতুক। সোভিয়েতত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতের ভূমিকাকে সমর্থন যোগাচ্ছে।
সোভিয়েত বক্তব্য : সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ভিক্টর ইসরাইলিয়ান জনাব দেনঃ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকে সদস্যপদ লাভের পূর্বশর্ত করার কোনো সন্দেহ নেই। তাইওয়ানকে সরিয়ে আসন লাভের পূর্বে চীন নিজেও বিশ্বসংস্থার কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয় নাই।
ভারতের বক্তব্য : ভারতের শ্রী, এন, পি জৈন বিতর্কের মধ্যে নিষ্ফল তর্কাতর্কি’ ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের আবেদনের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত ৮ম দেশ এবং ইতোমধ্যেই ৮৪টি দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি চীনের অভিযোগসমূহ নাকচ করে দেন।

রেফারেন্স: ১১ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ