You dont have javascript enabled! Please enable it!

দেশ ও দেশের ভালবাসাই একমাত্র কাম্য

লন্ডন। সোনার বাংলাকে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে নিঃস্বার্থভাবে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির প্রতি আহ্বান জানান। এনা বার্তা সংস্থার প্রধান গোলাম রসুল মালিকের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ ও সুসংহত করা অধিকতর কষ্টসাধ্য।
অস্ত্রোপচারের পর বঙ্গবন্ধু এনা বার্তা সংস্থার প্রতিনিধিকেই প্রথম সাক্ষাৎকার দান করেন। আলাপের সময় বঙ্গবন্ধুকে রোগা দেখাচ্ছিল। আবেগপূর্ণ কন্ঠে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের ভালোবাসা ছাড়া তার আর কোনো আকাঙ্ক্ষা নাই। বঙ্গবন্ধু মনে করেন যে, ইয়াহিয়ার কারাগারেই তিনি এই রোগে আক্রান্ত হন।
বঙ্গবন্ধু বিছানায় বসে কথা বলছিলেন। মাঝে মাঝে বেগম মুজিব তাকে এপাশ ওপাশ হতে সাহায্য করছিলেন। প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রদের পাঠ্য বই হতে শুরু করে যুদ্ধবন্দিদের বিচার এবং দেশের বন্যা পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেন। দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যায় তিনি বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
দেশবাসীর প্রতি এক বাণীতে তিনি জনসাধারণকে কঠোর পরিশ্রম করে যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন যে, একমাত্র নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই জাতি স্বীয় লক্ষ্যে পৌঁছাতে সমর্থ হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, ‘সোনার বাংলার মানুষ যারা দেশ মাতৃকার মুক্তি ও গৌরবের জন্য আত্মদান করেছে তারা যে কোনো অলৌকিক বিষয় সংঘঠনে সমর্থ।
তিনি বলেন যে, অপেক্ষা করুন এবং দেখুন। তিন বৎসরের মধ্যেই জাতি পুনরায় নিজের পায়ে দাড়াতে সমর্থ হবে। সুখী ও সমৃদ্ধিশীল জাতিতে পরিণত হওয়াই আমাদের বিধিলিপি। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে উক্ত মন্তব্য করেন।
সুইস সরকারের আমন্ত্রণে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সুইজারল্যান্ড গমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
লন্ডন হতে পররাষ্ট্র দফতরে প্রেরিত এক বার্তায় প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে সুইজারল্যান্ড যাবার জন্য সুইস সরকারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও তাকে সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকায় প্রেরিত বার্তায় বলা হয়, লন্ডন ক্লিনিক হতে ছাড়া পাওয়ার পর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকে সুইজারল্যান্ড যাওয়ার জন্য সুইস সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধু এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। জানা গেছে যে, বঙ্গবন্ধু সুস্থ হওয়ার পর ইউরোপস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের এক বৈঠকে ডাকতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু গতকাল সর্বপ্রথম কারো সাহায্য ছাড়া কক্ষের মধ্যে পায়চারী করেন। স্যার ফ্রান্সিস অ্যাভেরী পুনরায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তিনি ঢাকার সংবাদপত্রসমূহ পাঠ করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা বার্তাও তাকে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে খুবই প্রফুল্ল দেখায় এবং তিনি বহিরাগতদেরও সাক্ষাৎ দান করেন। এক পর্যায়ে তিনি সাহায্য নিয়ে পার্শ্ববর্তীকক্ষে গমন করেন। চলতি সপ্তাহের শেষেই তিনি লন্ডন ক্লিনিক ত্যাগ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। কয়েকটি ইউরোপীয় দেশই তাকে বিশ্রাম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সুইজারল্যান্ড গমনেরই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।২২

রেফারেন্স: ৭ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!